ভয়ানক এক মানসিক চর্টার, আপনি এর শিকার ননতো?
গ্যাস লাইটিং শব্দটা একটা ফিল্মের নাম গ্যাস লাইট থেকে এসেছে । এই সিনেমায় একজন স্বামী কিংবা স্ত্রীর সম্পর্কের ব্যাপারে দেখানো হয়েছে । স্বামী তার নিত্য শোবার ঘরের গ্যাসের লাইট কমিয়ে বাড়িয়ে তার স্ত্রীকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করতো যে, ঘরের আলো সব ঠিক আছে । অবশেষে তার স্ত্রী বিনা অসুখে পাগলা গারদে গিয়ে ভর্তি হয় ।
যাই হোক মূল কথায় আসি , গ্যাস লাইটিং সম্পর্কে যে কোন একজন গ্যাস লাইট করে থাকে । সে তার অপর পার্টনারকে ভিকটিম বানিয়ে তাকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে সে যা চিন্তা করেছে , কিংবা বিশ্বাস করে তার চিন্তা চেতনা পুরোটাই ভুল । ভিকটিমের প্রতিটা বিহেবিয়ারের সে ভুল ধরে । পরবর্তীতে ভিকটিম ভেবেই নেয় সে ভুল । অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার নামই গ্যাস লাইটিং । আরেকজনের আত্ন বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দিয়ে তাকে তার অস্হিত্ব সম্পর্কে সন্ধিহান করে তোলে। এটা মূলত একজন পার্টনার তার অপর পার্টনারের উপর কতৃর্ত্ব করতেই এই মানসিক গেইম খেলে থাকে। যাতে করে ভিকটিম তার হাতের মুঠোয় থাকে।
গ্যাস লাইটিং এর আরেক অর্থ ভিকটিমের সবচেয়ে বড় দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার স্বার্থ হাসিলের জন্য তাকে ব্যবহার করা। ভিকটিমকে বাস্তবতা ও দূর্বলতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সে সুযোগ নিয়ে নিজের মতবাদকে সে প্রতিষ্ঠিত করে ।ভিকটিমকে অপরাধবোধ ভোগাতে এই খেলাটা শুরু করে।
গ্যাস লাইটিং সে করতে পারে যে ব্যাক্তি ভিকটিমের খুব আপন কেউ হয় । উদারহন স্বরূপ বলা যেতে পারে পার্টনার , বন্ধু , অফিসের কোন ঘনিষ্ঠ কলিগ , বস ,বাবা , মা।ভিকটিম যাকে সবচেয়ে আস্হায় জায়গায় রাখে , একমাত্র সে এটা করে থাকে।
মূলত ভিকটিমের সাথে এটা করার জন্য কখনো সে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মজা করে কথা বলে। আত্নীয় স্বজনের সামনে ছোট করে কিন্তু সরাসরি অপমান করে না। সামান্য বিষয় নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ।তাকে মানষিক যন্ত্রনা দিয়ে বিশ্বাস করায় ভিকটিম ভুল ছিলো।যারা এই গ্যাস লাইটিং এর স্বীকার হন তারা প্রথমে বুঝতে পারে না । দীর্ঘদিন নিজের আত্মবিশ্বাস খোয়াতে খোয়াতে এক সময় ভিকটিম নিজেও বিশ্বাস করা শুরু করে গ্যাস লাইটিং যে করছে সে সত্য এবং তার নিজের অনেক ভুল আছে ।
অবশেষে এই গ্যাস লাইটিং এ শিকার ব্যাক্তি কেবল মানসিক অসুস্হতাই ভোগে না , তারা নিজের প্রতি আস্হা হারায় আর নিজেকে গুটিয়ে নেয় । কোন কাজ মনযোগ দিয়ে করতে পারে না। শরীরে ও মনে অসুখ দানা বাঁধে ।
নিজেকে নিজে প্রশ্নবিদ্ধ করতে থাকে ।
সে বিশ্বাস করে নেয় সে যা করছে সবটাই ভুল । ভিকটিম এক সময় পরনির্ভরশীল হয়ে পরে। মানসিক অত্যাচারের ভয়ে ভিকটিম অনেক পারিবারিক অত্যাচার চেপে যান । সহ্য করে নেন । লোকদের কাছে সত্যটা লুকানোর চেষ্টা করেন ।
এবং নিজেদের মূল্যহীন ভাবা শুরু করেন ।
অবশেষে নিজে পুরোপুরি একা হয়ে যায় ।
প্রতিকারঃ
চাইলেই অনেক সম্পর্ক থেকে আমরা বের হতে পারিনা।আমরা যা করতে পারি -
১/ নিজেকে একা করা যাবে না।
২/ যে এই গ্যাস লাইটিং করে তাকে ইগ্নোর করা শিখতে হবে ।
৩/বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুন ।
৪/ মনের কথা কাউকে খুলে বলুন ।
৫/ ডাইরীতে ঘটনা গুলো লিখে এক্সামিন করুন ।
৬/ সন্তানদের জন্য অনেকেই সম্পর্ক ধরে রাখতে বাধ্য হন । তারা একজন মানসিক ডাক্তার এর সাহায্য নিতে পারেন ।ঘনিষ্ট কারো সাথে পরামর্শ নিয়ে চলেন ।
৭/ আপনার ভালো গুন গুলোকে বারে বারে নিজেকে মনে করিয়ে দেন । আপনি নিজেকে বলেন আপনি কখনোই ভুল না।
৮/ সুক্ষ্ম ভাবে এই গ্যাস লাইটিং করা মানুষ গুলোকে এড়িয়ে চলুন । তাদের মতবাদকে পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই ।
৯/যদি সম্পর্ক ত্যাগ করা সম্ভব না হয় , আপনার দুনিয়া ও আপনার মানসিক শান্তির জন্য যারা প্রযোজ্য তাদেরকে ধরে রাখুন ।
তবে এই গ্যাস লাইটিং যারা করে তারা এক ধরনের হীন মনের মানুষ । জোর জবরদস্তি করে নয় বরং মানসিক ভাবে আরেকজনকে কন্ট্রোল করার জন্য তারা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যায় । এদের কে আমরা ভয়ংকর ক্রিমিনাল বল্লেও ভুল হবে ।
