মানুষ কেন গসিপ বা পরচর্চা করে?

Комментарии · 7 Просмотры

আমরা এমন একটা বিষয়ের কথা বলছি যেটা আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। অথবা আপনার আচরণকে সমর্থন করতে বা ন্যায??

বলছি "গসিপ বা পরচর্চার" কথা।

 

সাধারণত কয়েকজন মানুষ একসাথে হলেই কোনো ব্যক্তি বা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করি। এটাই গসিপ।

 

পরচর্চার ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুই বিষয়ই এই গল্পের আলোচ্য বিষয়।

 

নৃবিজ্ঞানীদের মতে, 'গসিপ বা পরচর্চা' এমন একটি ঘটনা যা বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিতেই দেখা যায়। হোক সেটা শহর অথবা গ্রামীণ এলাকা।ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. নিকোল হাইজন হেস বলেন, "প্রতিটি সংস্কৃতির প্রত্যেকেই তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরচর্চা করে।"

 

পরচর্চা বলতে সাধারণত আমরা এমন একটা বিষয় ধরে নেই যখন একজনের পেছনে বা আড়ালে তাকে নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা বলা হয়। কিন্তু ড. হেস এটিকে এর চেয়েও বেশি কিছু হিসেবে দেখেন।

 

তার মতে, গসিপ বলতে কারও ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত তথ্য বিনিময়কেও বোঝায়।

 

তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার, সহকর্মী বা প্রতিদ্বন্দ্বীরা আমাদের সম্পর্কে যা বলে তার সব কিছুই যে কেবল গসিপের আওতাভুক্ত তা নয়, বরং সংবাদ প্রতিবেদন বা কোনো খেলার ইভেন্টের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনাও এর অন্তর্ভুক্ত।

 

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, গসিপ বা পরচর্চা তৃতীয় পক্ষের সামনেও ঘটতে পারে, তাদের অনুপস্থিতিতেই এটা ঘটবে এমনটা জরুরি না।

 

তিনি বলেন, "তুমি কারো সম্পর্কে কথা বলছো বা তাদের পোশাক সম্পর্কে তোমার কী ধারণা অথবা তারা কী করেছে ইত্যাদি, এগুলোকে আমি গসিপ মনে করি।"

 

মানুষ কেন পরচর্চা করে বা এর প্রতি আকৃষ্ট হয় এ প্রশ্নটি এখনো গবেষকদের কাছে আলোচ্য বিষয়।

 

এ বিষয়ে কিছু মূল ধারণা এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।অধ্যাপক রবিন ডানবার বলেছেন, গসিপ বা পরচর্চা সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক।

 

তার এই থিওরি অনুযায়ী এটা নানাভাবে কাজে লাগে। যেমন সম্পর্ক তৈরি এবং জোট স্থাপনের ক্ষেত্রে এটা কাজে লাগে।

 

তার তত্ত্ব মতে, আদীম প্রাণীদের মধ্যে সামাজিকীকিরণ বা সামাজিক আচরণে অভ্যস্থ করে তোলার জন্য অন্যের যত্ন নেওয়ার বা তাকে শেখানোর বিষয়টি ছিল, যাকে বলা হচ্ছে 'গ্রুমিং'।

 

এর মধ্য দিয়ে ঘনিষ্টতা বাড়তো, আবার ঝগড়া বা মান-অভিমানের পর সম্পর্ক জোড়া লাগানোর বিষয়টিও ছিল। উদ্বেগ কমানো এবং সমাজে প্রাণীদের যার যার জায়গা করে দেওয়ার বা শ্রেণি বিন্যাস প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও ছিল এই গ্রুমিংয়ের মধ্যে।

 

এই প্রক্রিয়াটা 'অ্যালুগ্রুমিং' নামেও পরিচিত।

 

কিন্তু মানুষ যেহেতু আরেকটু উন্নত প্রাণী, তাদের মধ্যে গসিপ বা খোশগল্পকে অ্যালুগ্রুমিং এর সমতুল্য বিষয় বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে গসিপও সম্পর্ক তৈরি, ঘনিষ্টতা বাড়াতে এবং কাকে বিশ্বাস করা যাবে ও কাকে যাবে এরকম সামাজিক তথ্য বিনিময়ের উপায় হিসেবে কাজ করে।

 

ডানবারের মতে, ভাষার উদ্ভবই হয়েছে গসিপ করার জন্য।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালে এক গবেষণা পরিচালনা করে।

 

এতে দেখা গেছে, যারা একসাথে খোশগল্প বা আলাপচারিতা করেন তারা কেবল একে অপরের চিন্তা-ভাবনাকেই প্রভাবিত করেন না, বরং একে অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হন।

 

গবেষকরা লিখেছেন, "আমাদের মনে হয়েছে অংশগ্রহণকারীরা তাদের নিজেদের মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন। একে অন্যের আচরণ বা দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রভাবিত করা এবং সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে সবার মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা কাজ করে সেটা পূরণেও তারা সফল হয়েছেন।"

 

গসিপ বা পরচর্চা গ্রুপ কো - অপারেশন বা দলীয় সহযোগিতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে বলে এই গবেষণায় জানা যায়।

 

দেখা গেছে, যখন কোনো ব্যক্তি একে অপরের সাথে পরচর্চা করার সুযোগ পেতো তখন তারা গ্রুপ গেম বা দলীয় খেলায় আরও বেশি টাকা খরচ করতে ইচ্ছুক ছিল।

 

গবেষকরা লিখেছেন, "গসিপ বা পরচর্চা কেবল আমাদের আশপাশের মানুষদের মনগড়া বর্ণনা বা অলস কথাবার্তা নয়, বরং এটি তার চেয়েও অনেক বেশি জটিল।"

 

'নরমাল গসিপ' শীর্ষক পডকাস্টে সাধারণ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

 

এই পডকাস্টের হোস্ট বা উপস্থাপক কেলসি ম্যাককিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে একটি মজার গল্প অপরিচিত ব্যক্তিদেরও কাছাকাছি আনতে পারে।

 

কোভিডের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ যখন বাধ্য হয়ে কোয়ারেন্টাইনে ছিল তখন এ ধরনের গল্পের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছিল।

 

কেলসি বলেছেন, "আমরা সবাই গসিপ কত মিস করেছি এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।"

 

"আমাদের জীবনের অনেক কিছ এবং পৃথিবীকে আমরা যেভাবে দেখি এর অনেককিছুই নির্ভর করে বিষয়গুলো আমরা কীভাবে বর্ণনা করি তার ওপর। গসিপও এরকমই একটি বর্ণনা। আমরা একে অপরকে নিজেদের কথা বলি। এটা করার যেমন বিপদজ্জনক দিক আছে, আবার অনেক ভালো দিকও আছে।"

Комментарии