যৌনকর্মী হতে বাধ্য হয়েছিলেন এই নায়িকা, শেষ জীবনে নিঃস্ব

코멘트 · 14 견해

একসময় তাঁর জীবনে আলোর অভাব ছিল না। অভিনয়ে এসেই পেয়ে গিয়েছিলেন বি আর চোপড়ার মতো পরিচালকের ছোঁয়া, সহ-অভিনেতা ছিল

একসময় তাঁর জীবনে আলোর অভাব ছিল না। অভিনয়ে এসেই পেয়ে গিয়েছিলেন বি আর চোপড়ার মতো পরিচালকের ছোঁয়া, সহ-অভিনেতা ছিলেন রাজকুমার ও সুনীল দত্ত। ‘হামরাজ’-এর সাফল্যের পর মনে হয়েছিল, বলিউডে হয়তো নতুন এক তারকা জন্ম নিলেন—ভিমি। কিন্তু সেই উজ্জ্বল স্বপ্ন দ্রুতই রূপ নেয় এক দুর্বিষহ দুঃস্বপ্নে। ১৯৭৭ সালে, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে মারা যান ভিমি, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ চিতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঠেলাগাড়িতে করে। বলিউডে যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, তাঁদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। কেবল ছিলেন সুনীল দত্ত।

 

ভিমির জীবন যেন ছিল এক ট্র্যাজেডির চিত্রনাট্য। গানের তালিম নিয়েছিলেন ছোটবেলায়, কিন্তু সিনেমায় অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই পরিবার তাঁকে ত্যাগ করে। পলি হিলে বিলাসবহুল বাংলো, গলফ খেলার শখ, স্পোর্টস কারে চড়া—সবই ছিল তাঁর জীবনে। তবু ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েন আর ক্যারিয়ারের ছন্দপতন তাঁর গল্পকে করে তোলে করুণ।

সিনেমার দৃশ্যে ভিমি। আইএমডিবি
সিনেমার দৃশ্যে ভিমি। আইএমডিবি

‘হামরাজ’-এর সময় ভিমি ছিলেন বিবাহিত। কলকাতার ব্যবসায়ী শিব আগরওয়ালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যিনি নিজের পরিবার থেকেও ত্যাজ্য হয়েছিলেন ভিমিকে বিয়ে করার কারণে। ১৯৬৮ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিমি জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী তাঁর জন্য প্রযোজনা করতে যাচ্ছেন একটি ছবি। তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধও হন। সিনেমাগুলো ছিল ‘রঙিলা’, ‘সন্দেশ’ ও ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’। কিন্তু ভাগ্য অন্য কিছুই লিখে রেখেছিল। শিব আগরওয়াল তাঁকে ছেড়ে চলে যান—বলা হয়, তাঁর পরিবারই নাকি ছেলেকে বোঝায় ভিমিকে ত্যাগ করতে।

বি আর চোপড়া ভিমিকে প্রশংসা করেছিলেন ১৯৬৭ সালে পিকচার পোস্ট-এ  দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিমি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘শিক্ষিত, দ্রুত শিখতে পারে, দারুণ বুদ্ধিমান।’ কিন্তু চোপড়া আর কোনো ছবিতে তাঁকে নেননি। ‘হামরাজ’-এর পর তাঁর কোনো ছবি চলেনি। ম্যাগাজিনে ফটোশুট আর জনসমক্ষে উপস্থিতিই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর শেষ আশ্রয়। ১৯৭১ সালের পর থেকে কার্যত হারিয়ে যান বলিউড থেকে।

ভিমি। আইএমডিবি
ভিমি। আইএমডিবি

এরপর জীবন তাঁকে নিয়ে যায় কলকাতায়। ভরসা হয়ে ওঠে মদ, আশ্রয় নেন এক ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর কাছে। পেশাগত উন্নতির আশায় তাঁর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। শুরু করেছিলেন টেক্সটাইল ব্যবসা, কিন্তু দেনা মেটাতে সেটিও বিক্রি করে দিতে হয়।
এই সময়ের অভিনয়ে দুর্বল হওয়ার বদনাম ভিমির ছড়ায়, কেউ আর ভিমিকে কাজ দিতে চাইতেন না। সে কারণে মদে ডুবে যান। যে পরিবেশকের কাছে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই জলি তাঁকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেন। বলেন, ‘এটাই তাঁর ক্যারিয়ার পুনরুদ্ধারের একমাত্র রাস্তা।’

একসময় ভিমি হয়ে ওঠেন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া এক নারী—সস্তা মদে আসক্তি, হতাশা আর অপমান তাঁকে ঘিরে ধরে।
ভিমির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছিল নির্জনে, ঠেলাগাড়িতে করে দেহ চিতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বলিউডের কেউ আসেননি—শুধু ছিলেন সুনীল দত্ত। মৃত্যুর পরও অপমান থামেনি। ‘কৃষ্ণ’ নামের এক ব্যক্তি আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি কুরুচিকর শোকবার্তা লেখেন—তাঁর মৃত্যুকে আখ্যা দেন ‘মুক্তি’। বলেন, ‘এই মেয়েটি মনে করত, রাতের বেলায় কাউকে পটাতে পারলেই হয়তো কোনো পরিচালক বা নায়ক তাঁকে কাজ দেবে।’

মাত্র ১০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ভিমি। এর মধ্যে আছে ‘আবরু’ (অশোক কুমারের সঙ্গে), ‘নানক নাম জাহাজ হ্যায়’ (পৃথ্বীরাজ কাপুর ও আই এস জোহরের সঙ্গে)। তাঁর শেষ ছবি ছিল সুভাষ ঘাইয়ের ‘ক্রোধী’, যা মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পর।
ভিমির গল্প শুধুই একটি নায়িকার পতনের কাহিনি নয়। এটি এক নিঃসঙ্গ যুদ্ধ, অপূর্ণ স্বপ্ন আর নির্মম বাস্তবতার দলিল যেন।

코멘트