একটি বিশ্বযুদ্ধ যে কিশোরীকে বিশ্বখ্যাতি দিয়েছিল

הערות · 46 צפיות

আনা ফ্রাংক। ১৯২৯ সালের ১২ জুন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে মেইনগাউ রেড ক্রস হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু তা

আনা ফ্রাংক।  ১৯২৯ সালের ১২ জুন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে মেইনগাউ রেড ক্রস হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। জাতীয়তায় ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন জার্মান। নাৎসি জার্মানির সেমিটিক বিদ্বেষী নীতির কারণে তিনি তার জার্মান নাগরিকত্ব হারান। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন তাঁর দিনলিপির জন্য, যেখানে তিনি নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন তার অভিজ্ঞতাগুলোকে লিখে রেখেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার তার দিনলিপি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক পঠিত বই এবং অনেক চলচ্চিত্র ও নাটকের মূল বিষয় হিসেবে গৃহীত। বইয়ের নাম দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল। বাংলায় এটি আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি নামে অনূদিত হয়। 

বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তার বাবার উদ্যোগে প্রথমে প্রকাশিত হয় ডায়েরিটি। প্রকাশের পরই সারা দুনিয়ায় এটি সাড়া ফেলে। আনা ফ্রাঙ্ক ও তার ডায়েরি নিয়ে বার্ট ভন এস 'দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকায় । আনার সহপাঠী আলবার্টের সঙ্গে কথপোকথনের সূত্রে এই লেখায় অন্তরালের আনা ফ্রাঙ্ককে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি।

সেই আলবার্টের কাছে বার্ট ভন এস জানতে চেয়েছিলেন, আনা কেমন ?
উত্তরে জানান, জীববিজ্ঞান ক্লাসে একবার তাদের শিক্ষক বললেন, গাধা ও ঘোড়ার মিলনে খচ্চর তৈরি হয়। এটা কীভাবে হয় জানতে চেয়ে আলবার্ট হাত তোলেন, পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ে। পরে অবশ্য খেলার মাঠে আনাই প্রথম তার কাছে এল ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। আলবার্ট বিচলিতভাবে এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। 

২০২০সালে  আলবার্ট তাঁর ৯০তম জন্মদিন পালন করেন। সেসময় আনা স্মরণে আবার বলেন, এই খাতাতেই ১৯৪২ সালের ১২ জুন থেকে তিনি তার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ ঘটনা, কারো সংগে কথা না বলতে পারা, নেদারল্যান্ডের জীবনযাপন, বিধিনিষেধ ও পরবর্তীকালে অ্যানা নিজের অনুভূতি, বিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে লিখেছেন। অ্যানা ডায়রিটিকে কিটি বলে সম্বোধন করতেন। অ্যানা ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত লিখেছিলেন।
তিনি জানান, আনা ফ্রাঙ্ক হিটলার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল ১৯৪৪ সালে। এরপর এক বছরের মধ্যেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। এমন দিনও পৃথিবীতে এসেছিল, খেতে না পেয়ে মরে গিয়েছিল আনা ফ্রাঙ্ক নামের এক মিষ্টি বালিকা।

আনা ফ্রাঙ্কের মৃত্যুর ছয় মাস আগে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের একটি গোপন স্থান থেকে তার পরিবারের সদস্যসহ তাকে আটক করেছিল নাৎসি বাহিনীর সদস্যরা। তবে কীভাবে তারা ধরা পড়েন, কে করেছিল বিশ্বাসঘাতকতা তা নতুন এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই তদন্তকারী দলে রয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইতিহাসবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। অত্যাধুনিক নানা কৌশল ব্যবহার করে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়টির উত্তর খুঁজতে সময় লেগেছে ছয় বছর।

তদন্ত টিম বলেছে, ভ্যান ডেন বার্গ নামে একজন নিজের পরিবারকে বাঁচাতে আনা ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবারকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সেসময়।
সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ নামে একটি অনুষ্ঠানে এফবিআই-এর সাবেক এজেন্ট ভিন্স প্যানকোক বলেন, ভ্যান ডেন বার্গ যখন সব সুরক্ষাই হারিয়ে ফেলেন, তখন তার ক্যাম্পে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। তখন তাকে নাৎসীদেরকে মূল্যবান কোনো কিছু দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। খুব সম্ভবত আনা ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবারের খোঁজ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ও তার স্ত্রী নিরাপদে থেকে যেতে পেরেছিলেন।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডি ভোকসক্রান্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, ভ্যান ডেন বার্গের মৃত্যু হয় ১৯৫০ সালে।

আনা তার ডায়েরিতে লেখেছিলেন, যুদ্ধের ভয়ের কথা। কিভাবে একস্থান থেকে আরেক স্থানে পালাতে হচ্ছিল। বিমান থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। গুপ্তগুহায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। 
আত্মগোপনে থাকায় আনার ডাইরিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভৎসতা ততটা উঠে আসে নি। কিন্তু এক নিঃশ্বাসে পড়তে পড়তে হঠাৎ যখন ডায়েরিটা শেষ হয়ে যায় তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই অসাধারণ কিশোরীকে হিটলারের নৃশংসতার বলি হয়ে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছিলো।

הערות