রাজার শাসন থেকে কীভাবে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল সিকিম

Kommentarer · 3 Visninger

নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে, একেবারে মিডটাউন ম্যানহাটনের ফিফথ অ্যাভিনিউতে একটি দারুণ অভিজাত ও লাক্সারি ডিপার

অতিথিদের সেদিন বরণ করা হয়েছিল সিকিমের সাবেকি রীতিতে পশমি স্কার্ফ দিয়ে। ভেতরে তারা সিকিমের গানবাজনা শুনতে শুনতে শ্যাম্পেনে চুমুক দিচ্ছিলেন, আর বাইরে ম্যানহাটনের রাস্তা মুড়ে দেওয়া হয়েছিল সিকিমের পতাকায়।

 

সেটাই শেষ নয়, সিকিমের রাজা (চোগিয়াল) পালডেন থোন্ডুপ নামগিয়াল আর তার মার্কিন স্ত্রী, রানি ('গিয়ালমো') হোপ কুক এর পরের দুদিনও নিউ ইয়র্কের কলোনি ক্লাব আর ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টরিয়া হোটেলে একই ধরনের বিলাসবহুল পার্টি দিয়েছিলেন।

 

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সেই সব রাজসিক পার্টির বিশদ বিবরণ দিয়ে লিখেছিল, "ফ্যাশনকে হাতিয়ার করে রানি আসলে তার দেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাইছেন!"কথাটা ভুল নয় – কারণ হিমালয়ের কোলে ছোট পার্বত্য রাজ্য সিকিমের রাজা ততদিনে আঁচ করেছিলেন দিল্লি তাদের পুরনো নীতি থেকে সরে এসে সিকিমকে হয়তো ভারতের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে চাইছে।সিকিমের আলাদা স্বাধীন সত্তা বজায় রাখার জন্যই তার আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন দরকার ছিল, আর এই কাজে তাকে পুরোদমে সাহায্য করছিলেন তার চেয়ে বয়সে আঠারো বছরের ছোট আমেরিকান স্ত্রী।বস্তুত রাজা-রানির এই মার্কিন সফরের মাসকয়েক আগেই তারা চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে সিকিমের ওপর একটি তথ্যচিত্র কমিশন করেছিলেন – যিনি ততদিনে সিনেমার দুনিয়ায় একটি জগদ্বিখ্যাত নাম।

 

সেই তথ্যচিত্র বানানোর উদ্দেশ্যও ছিল সিকিম যে হিমালয়ের কোলে একটি স্বতন্ত্র ও অনন্য ভূখণ্ড, সেটাই তুলে ধরা। সত্যজিতের নির্মিত সেই তথ্যচিত্র বহু বহু বছর সাধারণ মানুষ দেখতে পাননি, সেটা অবশ্য অন্য গল্প।

 

যাই হোক, চোগিয়াল হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি নিউ ইয়র্কে তার সেই রাজসিক সফরের মাত্র তিন-সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই তার রাজত্বের পাকাপাকি অবসান ঘটবে – এবং সিকিম ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে!

 

১৯৭৫ সালের ১৬ই মে ঠিক সেটাই ঘটেছিল – যে ঐতিহাসিক ঘটনার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল মাসতিনেক আগেই। আজকের সিকিম সেই মাইলফলক উদযাপনও করলো মহাধূমধামে।

 

সিকিমে রাজতন্ত্রের অবসান ও ভারতের সঙ্গে সংযুক্তির পেছনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দেশের গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর ভূমিকা সুবিদিত – কিন্তু সে আমলের পর্যবেক্ষকরা সবাই মানেন সিকিমের একজন জননেতা তথা রাজনীতিবিদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ কিছুতেই সহজ হতো না!

Kommentarer