মেয়েরা জোরে বল করতে পারে না কেন

הערות · 2 צפיות

বিকেএসপিতে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে লাল ও সবুজ দলে ভাগ হয়ে তিন দলের টুর্নামেন্ট খেলছেন নারী দলের ক্রিক??

বিকেএসপিতে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে লাল ও সবুজ দলে ভাগ হয়ে তিন দলের টুর্নামেন্ট খেলছেন নারী দলের ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ এই টুর্নামেন্টে মেয়েদের লাল, সবুজ দুই দলই হেরেছে কিশোরদের দলটার কাছে। মেয়েদের এই ফলাফল কতটা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে মেয়েদের ক্রিকেটের একটা বিষয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটই ভুগছে মানসম্মত পেস বোলারের সংকটে।

সেটার প্রতিচ্ছবি পড়ছে এই টুর্নামেন্টেও। নারী দলের খেলা তিন ম্যাচের দুটিতেই একাদশে ছিলেন একজন করে পেসার। মেয়েদের জাতীয় দলেও এটা হয়ে আসছে দুই বছর ধরে। এই সময়ে বাংলাদেশ ২০টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নেমেছে, এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে ১৮টিতেই খেলেছেন শুধু মারুফা আক্তার। আরেক পেসার ফারিহা তৃষ্ণা মাঠে নেমেছেন মাত্র দুটি ম্যাচে। এর বাইরে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে একাদশে থাকলেও ১৫ ম্যাচ খেলে রিতু মণি মোট ২০.৪ ওভার বল করে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

ঘরোয়া ক্রিকেটেও একই অবস্থা। নারী ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। গত আসরে এই টুর্নামেন্টে সেরা ১০ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় রিতুর সঙ্গে পেসার ছিলেন শুধু ফারিহা, বাকি ৮ জনই স্পিনার।

দুই বছরে দুই ম্যাচ খেলেছেন ফারিহা তৃষ্ণা
দুই বছরে দুই ম্যাচ খেলেছেন ফারিহা তৃষ্ণাবিসিবি

নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি কেন্দ্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে। জাতীয় চুক্তিতে আছেন ৩০ ক্রিকেটার। কেন্দ্রীয় চুক্তিটা মূলত ১৮ ক্রিকেটারের সঙ্গে হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হওয়া একসময় নিয়মিত খেলা পেসার জাহানারা আলম নিজেকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। মারুফা ও রিতুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা আরেক পেসার দিশা বিশ্বাস প্রায় দুই বছর বিভিন্ন সময় জাতীয় দলে ডাক পেলেও এখনো তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি। জাতীয় চুক্তিতে থাকা ৩০ ক্রিকেটারের মধ্যেও পেসার মাত্র ৪ জন।

উইকেট বিবেচনায় কখনো কখনো টিম কম্বিনেশনে পেসার নাই থাকতে পারে। তবে প্রকৃত বাস্তবতা হলো একজন পেস বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে ঘরোয়া পর্যায়ে পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধাটাই পান না মেয়েরা। প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের অভাবও একটা কারণ। তা ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে দলগুলোর পেস বোলার খেলানোর অনীহাও পেসার সংকটের অন্যতম কারণ। যে কারণে মানসম্পন্ন পেসার উঠে আসছে না জাতীয় দলেও।

জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুনের কথায়ও এল বিষয়টি, ‘মেয়েরা খুব উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসে না, নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাই বেশি আসে। তাঁরা ওই পুষ্টিটা পায় না। পেসার হওয়ার মতো অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধাও নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে অনুশীলন করার সামর্থ্য অনেকের থাকে না।’

শুধু ক্লাব নয়, জাতীয় দলেও অনেক সময় স্পিনকেন্দ্রিক ভাবনা ও পেসারদের উপেক্ষা করার মানসিকতা দেখা যায়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে নারী দলের কোচ সরোয়ার ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি ওই মানের পেসার না হয়, তাহলে আমি কেন খেলাব? আন্তর্জাতিক মানে এলে আমরা অবশ্যই খেলাব।’
কোচ অবশ্য জানিয়েছেন, নারী ক্রিকেটের পেসার সংকট দূর করতে ৮–১০ জনের একটি পুল গঠন করার চেষ্টা চলছে, যাঁরা জাতীয় দল, ‘এ’ দল ও ইমার্জিং দলের হয়ে খেলবেন। নারী বিশ্বকাপের পর সরোয়ার ইমরানের তত্ত্বাবধানে পেস বোলারদের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্প করারও পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন নারী দলের নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ।

বাংলাদেশের ছেলেদের ক্রিকেটেও একসময় পেসার সংকট ছিল। হাবিবুল বাশার জাতীয় নির্বাচক থাকার সময়েই পেসারদের উত্থান শুরু হয়। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক কিছুদিন কাজ করেছেন বিসিবির নারী উইংয়েও। ওই অভিজ্ঞতা থেকে হাবিবুল বলেছেন, ‘আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন পেসার সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করেছি। এটা নিয়ে কাজও শুরু করেছিলাম। আমার মনে হয় সামগ্রিকভাবেই নারী ক্রিকেটে পেসারদের নিয়ে যে মানসিকতা, তা বদলানো প্রয়োজন।’

কোচ সরোয়ার ইমরান আশাবাদী, সেই পরিবর্তনটা আসবে, ‘মেয়েদের ক্রিকেটে আগে একটা ধারণা ছিল—এলাম, একটু অনুশীলন করলাম, চলে গেলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গেলে যে ধরনের পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রাম দরকার, সেসব আস্তে আস্তে আসবে।’

הערות