হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এতো গুলি, কেন এতো আক্রোশ

Комментарии · 1 Просмотры

‘শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন’— ৫ আগস্ট দুপুরে এ খবর খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজপথে নামে জনতার ঢল। মুহূর্তেই রাজধানী ছ??

‘শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন’— ৫ আগস্ট দুপুরে এ খবর খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজপথে নামে জনতার ঢল। মুহূর্তেই রাজধানী ছাড়িয়ে মফস্বল শহর এমনকি গ্রাম-গঞ্জেও স্বৈরাচার পতনের বিজয়োৎসব শুরু হয়।

‘পলাইছে রে পলাইছে শেখ হাসিনা পলাইছে’—স্লোগানে স্লোগানে যখন রাজপথ মুখর হতে থাকে, মুক্তিকামী মানুষ আর ঘরে বসে থাকতে পারেনি। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই ফ্যাসিবাদের পতনের বিজয় মিছিলে শামিল হয়। কিন্তু এই বিজয় মিছিলেও গুলি চালায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যরা। ঝরে যায় অসংখ্য প্রাণ। অনেকে হন গুরুতর আহত, অনেককে বরণ করতে হয় অন্ধত্ব কিংবা পঙ্গুত্ব।

 

সেদিন হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে যখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত হয়ে যায়, যখন তাদের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগ বিদেশে পালানোর পথ ধরেন, তখন কোন স্বার্থে বা কোন আক্রোশে পুলিশ নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আজো।

রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের ধারণা, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যেসব নিয়োগ হয়েছিল, তার শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সবই ছাত্রলীগ ক্যাডার বা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। এদের অনেকে আক্রোশ থেকেও জনতার ওপর পৈশাচিক কায়দায় গুলিয়ে চালিয়ে থাকতে পারে।

আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, মাঠ পর্যায়ের পুলিশের ওপর বিক্ষোভ দমনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের যে নির্দেশ আগের রাতে বা সকালে দেওয়া ছিল, সেটা হাসিনা পালানোর পরও বদলায়নি হাইকমান্ড। ফলে তাদের অনুগত পুলিশের ইউনিটগুলো ফ্যাসিবাদের পতনের পরও ছিল বেপরোয়া।

হাসিনার অনুগত শীর্ষ কর্তারা জনরোষ থেকে বাঁচতে সুযোগ বুঝে সটকে পড়েন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে মধ্য ও নিম্নসারির কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা আগের নির্দেশনা অনুসারেই জনতার বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ করেন, এতে যেমন অনেক ছাত্র-জনতার প্রাণ ঝরে। কতিপয় পুলিশ সদস্যকেও ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়তে হয়। অনেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে সেসময় ক্ষোভের আগুন জ্বলে। হয় ভাঙচুরও।

হাসিনার পতনের খবর ছড়ানোর পরও যাত্রাবাড়ীতে ৫২ জনকে হত্যা করে পুলিশ
হাসিনার পতনের খবর ছড়ানোর পর যখন দেশজুড়ে ছাত্র-জনতা বিজয়োল্লাসে মেতে উঠছিল, তখন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। বিবিসির অনুসন্ধান অনুসারে, সেখানে সেদিন খই ফোটানোর মতো গুলি চালিয়ে ৫২ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে পুলিশ।

বিবিসির অনুসন্ধান বলেছে, সেদিন ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে দুপুর দুইটা ৪৩ মিনিটে। অথচ তার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই টেলিভিশনগুলোতে স্ক্রল যাচ্ছিল—জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান। তার আগেই ছড়ায়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে যে, ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। তখন পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনো যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেন। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয়জন সদস্য নিহত হন।

যাত্রাবাড়ীর মুরাদপুর এলাকায় সেদিন গুলিতে নিহত হন ৪৪ বছর বয়সী মো. আক্কাস আলী। আক্কাস ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যু গোটা পরিবারের ওপর ফেলেছে মারাত্মক প্রভাব।

তার ছেলে আব্দুর রব বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলে বাবা মিছিলে যোগ দিতে বের হন, কিন্তু আর ফেরেননি। গুলিতে শহীদ হন তিনি।

আক্কাসের পরিবার এখনো মানসিক ও আর্থিক সংকটে ভুগছে। সরকার ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আংশিক সহায়তা পেয়েছে পরিবারটি। কিন্তু হত্যার বিচারের অপেক্ষায় তারা।

মিরপুরের ভাসানটেকের বিজয় মিছিলে গুলি
হাসিনার পলায়নের খবরে সেদিন মিরপুরের ভাসানটেকে জনতা বিজয় মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন ৩১ বছর বয়সী মো. ফজলু। তখন তাকে ঘটনাস্থলের কাছে মার্কস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় তার পরিবার ১৬৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে, যার মধ্যে আসামি হিসেবে রয়েছেন পতিত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ তার অনুগত পুলিশ কর্মকর্তা ও নেতারা।

Комментарии