প্রোস্টেট ক্যান্সারে রেডিওথেরাপি: অগ্রগতি, বাংলাদেশের বাস্তবতা ও করণীয়

Comments · 29 Views

প্রোস্টেট ক্যান্সার হলো পুরুষদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার। বিশ্বজুড়ে এটি পুরুষদের দ্বিতীয় সর্বাধি??

প্রোস্টেট ক্যান্সার হলো পুরুষদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার। বিশ্বজুড়ে এটি পুরুষদের দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্যান্সার।

 

 উন্নত দেশগুলোতে নিয়মিত স্ক্রিনিং, উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আধুনিক চিকিৎসা থাকায় রোগীরা অনেকদিন বেঁচে থাকেন এবং তুলনামূলক ভালো জীবনযাপন করেন। আমাদের দেশে প্রোস্টেট ক্যান্সারের সঠিক পরিসংখ্যান খুব বেশি নেই, তবে প্রতিবছর হাজারো রোগী আক্রান্ত হন।

 

রেডিওথেরাপি কেন জরুরি?

 

প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ওষুধ, অপারেশন এবং রেডিওথেরাপি—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম রয়েছে। এর মধ্যে রেডিওথেরাপি একটি বহুল ব্যবহৃত ও কার্যকর পদ্ধতি। 

 

সহজ ভাষায় বললে, রেডিওথেরাপিতে বিশেষ ধরনের রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। এতে শরীরের সুস্থ কোষের ক্ষতি কম হয় এবং রোগী তুলনামূলক স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

 

আধুনিক অগ্রগতি

 

গত এক দশকে রেডিওথেরাপিতে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। এখন আর শুধু সাধারণ রশ্মি ব্যবহার নয়, বরং কম্পিউটারভিত্তিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। যেমন:

 

•IMRT ও VMAT – এর মাধ্যমে রশ্মি শুধু ক্যান্সারের অংশে সুনির্দিষ্টভাবে পড়ে, আশেপাশের সুস্থ অঙ্গগুলো বাঁচানো যায়।

 

•IGRT – প্রতিটি সেশনে ইমেজিং করে নিশ্চিত করা হয় যে রশ্মি সঠিক জায়গায় প্রদান করা হচ্ছে ।

 

•SBRT – বিশেষ নির্বাচিত রোগীর ক্ষেত্রে মাত্র ৫–৭ দিনে পুরো চিকিৎসা শেষ করা যায়।

 

উন্নত দেশগুলোতে এখন হাইপোফ্র্যাকশোনেশন বা কম দিনে বেশি ডোজ দিয়ে চিকিৎসা জনপ্রিয় হয়েছে। এতে রোগীর সময় ও খরচ দুই-ই কমে। পাশাপাশি প্রোটন থেরাপির মতো আরও উন্নত রেডিয়েশন প্রযুক্তিও সেখানে চালু হয়েছে।

 

বাংলাদেশের বাস্তবতা

 

বাংলাদেশে কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আধুনিক LINAC মেশিন বসানো হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কিছু বড় শহরে এখন IMRT ও VMAT দেওয়া যায়। তবে চাহিদার তুলনায় মেশিনের সংখ্যা অনেক কম। ফলে রোগীদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।

 

আরেকটি সমস্যা হলো প্রশিক্ষিত জনবলের ঘাটতি। যথেষ্ট সংখ্যক রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, মেডিকেল ফিজিসিস্ট ও রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট এখনো তৈরি হয়নি। তাছাড়া অনেক সরকারি কেন্দ্রে এখনও পুরনো কোবাল্ট মেশিন দিয়ে চিকিৎসা চলছে।

 

প্রধান চ্যালেঞ্জ

 

 

.যন্ত্রপাতির অভাব ও নষ্ট হয়ে যাওয়া – ফলে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় বা দেরি হয়।

 

.দেরিতে রোগ ধরা পড়া – প্রোস্টেট ক্যান্সার শুরুতে প্রায় কোনো উপসর্গ না থাকায় অনেকেই দেরি করে ডাক্তার দেখান।

 

.খরচের বোঝা – বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়বহুল, যা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না।

 

.গবেষণার অভাব – আমাদের দেশের নিজস্ব ডেটা নেই। ফলে স্থানীয় রোগীদের জন্য নীতি বা গাইডলাইন তৈরি করা কঠিন।

 

করণীয়

 

.প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আধুনিক LINAC সম্বলিত ক‍্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা দরকার।

 

.নিয়মিতভাবে ডাক্তার, ফিজিসিস্ট ও টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

 

.৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে—PSA টেস্ট ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়মিত করতে হবে।

 

.বাংলাদেশে হাইপোফ্র্যাকশোনেশন ও SBRT নিয়ে গবেষণা চালিয়ে নিজেদের ডেটা তৈরি করতে হবে।

 

.সরকারি ও বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও জনবল উন্নয়ন করতে হবে।

 

উপসংহার

 

প্রোস্টেট ক্যান্সারে রেডিওথেরাপি আজ আধুনিক চিকিৎসার মূল স্তম্ভ। সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে রোগী শুধু দীর্ঘদিন বাঁচেন না, বরং ভালো মানের জীবনযাপনও করতে পারেন। বাংলাদেশের সামনে যন্ত্রপাতির ঘাটতি ও সচেতনতার সীমাবদ্ধতা বড় বাধা হলেও পরিকল্পিত বিনিয়োগ, জনবল প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারব

Comments