মন ছুঁয়ে গেল আমিরের ‘সিতারে জমিন পর’

टिप्पणियाँ · 38 विचारों

টিকিট বুকিং আগেই ছিল। দিনের শেষ শো। এডমন্ডসন পার্কের ইডি স্কয়ারের ইভেন্ট সিনেমা হলে পরিবার নিয়ে পৌঁছালাম।

টিকিট বুকিং আগেই ছিল। দিনের শেষ শো। এডমন্ডসন পার্কের ইডি স্কয়ারের ইভেন্ট সিনেমা হলে পরিবার নিয়ে পৌঁছালাম। সিনেমার নাম ‘সিতারে জমিন পর’—মন বলছিল, বিশেষ কিছু অপেক্ষা করছে। পাশে আমার মেয়ে, ছোট ভাইবোনেরা। মনে মনে ভাবছিলাম, এক হিন্দি ছবি কী-ই বা নতুন দেখাবে! কিন্তু ছবির শেষে আমরা সবাই আসনেই বসে রইলাম—নিঃশব্দ। আচ্ছন্ন আমরা সবাই। বুঝলাম ‘সিতারে জমিন পর’ কোনো সাধারণ সিনেমা নয়—এ যেন এক আত্মানুসন্ধানের গল্প। ‘তারে জমিন পর’ ছবির আবেগঘন ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো এই ছবির সিকুয়েলও ঠিক ততটাই আবেগময়, তবে ভিন্ন বাস্তবতায়। বিশেষভাবে চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে ছবির গল্প ভাবায়, কাঁদায় আর বিবেকেও প্রশ্ন তোলে—‘স্বাভাবিক’ বা ‘নরমাল’ বলতে আমরা কী বুঝি?

 
 

জীবনের গল্প
ছবির কেন্দ্রে আমির খানের চরিত্র গুলশান অরোরা। একজন বাস্কেটবল কোচ, যিনি জেদি, রাগী, কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে তাঁর গভীর মানসিক ক্ষত, অতীতের দগদগে স্মৃতি আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া ‘স্ট্রং পুরুষ’ হয়ে ওঠার অমানবিক চাপ। এই কোচ গড়ে তোলেন একদল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড় নিয়ে তৈরি দল। যেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জীবন নিজের ভেতরেই এক একটি যুদ্ধক্ষেত্র। তাঁরা শুধু খেলেন না—জীবনের ব্যাখ্যাও নতুন করে শেখান। ছবির এক অসাধারণ মুহূর্তে, একটি ছোট্ট মেয়ে কোচকে শেখায় ‘সরি’ বলা কত সহজ, তখন বুকের কোথাও কাঁপুনি অনুভব করি। মনে হয়, এ কেবল সিনেমা নয়—আমাদের মধ্যেই ঘটে যাওয়া গল্প।

‘সিতারে জমিন পর’ সিনেমার দৃশ্য। এক্স থেকে
‘সিতারে জমিন পর’ সিনেমার দৃশ্য। এক্স থেকে

অসাধারণ অভিনয়
এক বাক্যে বলতে পারি এ ছবির অন্যতম বড় শক্তি, এর বিশেষ শিল্পীরা। সিমরন মঙ্গেশকর, গোপী কৃষ্ণ ভার্মা, আয়ুষ বানসালি, আশীষ পেন্ডসে আর আরৌষ দত্ত—প্রত্যেকে আপন মাধুর্যে অভিনয় করেছেন। তাঁদের অভিনয় এতই সহজাত, এতটাই প্রাণবন্ত যে পর্দায় চোখ রাখলে ভুলে যাবেন তাঁরা অভিনেতা, মনে হবে এ তো পাশের বাড়িরই গল্প। জানালা দিয়ে দেখছি কী হচ্ছে সেখানে।

 

আমির খান বরাবরই চরিত্রে মিশে যান, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তাঁর অভিনয়ে যেমন আত্মবিশ্বাস, তেমনি রয়েছে নিজের ভেতরের দুঃখগাথা ফুটিয়ে তোলার অনবদ্যতা। বিশেষভাবে বলতেই হয় ছবির শেষ দৃশ্যের কথা—বাস্কেটবল ম্যাচের ফলাফল যা আমরা প্রত্যাশা করি, তার একেবারে উল্টো। সেই মোচড় দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকবে। পাশের আসনে বসা মেয়েটিও সেই মুহূর্তে হাততালি দিল। আমি বুঝলাম—এই গল্প তার মধ্যেও ঢুকে গেছে। হলভর্তি দর্শকের মধ্যেও একই প্রতিক্রিয়া দেখেছি

‘সিতারে জমিন পর’ সিনেমায় আমির খান। এক্স থেকে
‘সিতারে জমিন পর’ সিনেমায় আমির খান। এক্স থেকে

সামান্য দুর্বলতা
আমির খানের ছবি দেখার ব্যাপারে আমার ‘পক্ষপাতিত্ব’ আছে। আমি তাঁর বড় ভক্ত। তাঁর অভিনয়, তাঁর গল্প নির্বাচন আমাকে বরাবরই টানে। তবু ‘সিতারে জমিন পর’ দেখার পর মনে হয়েছে, ছবিটি মাঝেমধ্যে নির্দিষ্ট বার্তা দাঁড় করাতে গিয়ে বা দিতে গিয়ে একটু বেশি পরিকল্পিত হয়ে পড়েছে। গল্পের পরিণতি খানিকটা ‘প্ল্যানড’। কিছু কিছু সংলাপ আর দৃশ্য কৃত্রিম লেগেছে। মানে দর্শকদের জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করছেন নির্মাতা। কিন্তু ছবির মানবিকতা, বার্তার শক্তি আর আবেগ এতটাই প্রবল যে এই সামান্য আপত্তিগুলো গুরুত্ব পায় না। বরং ছবির শেষ অবধি দর্শক ছবির আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন।

ভারত নয়, সারা দুনিয়ার গল্প
ছবিটি দেখে আমার মাথায় বারবার প্রশ্ন আসছিল—এ কি কেবল ভারতীয় সমাজের জন্য প্রাসঙ্গিক? উত্তরটা পেয়েছি পাশের আসনে বসা আমার মেয়েকে দেখে। সে তো অস্ট্রেলিয়ায় বড় হচ্ছে, ভিন্ন সমাজ, ভিন্ন চাহিদা, ভিন্ন সংস্কৃতি। তবু ছবির সঙ্গে সে কানেক্ট করেছে, তার চোখও ভিজেছে, তার মুখেও হাসি ফুটেছে। এই ছবির গল্প কেবল এক দেশের সীমায় আটকে থাকা কোনো ‘লোকাল’ বার্তা নয়, এটি এক বৈশ্বিক গল্প। যেখানে শিশুরা বিশেষ কিছু চাহিদা নিয়ে বেড়ে ওঠে, যেখানে সমাজ প্রতিদিন তাদের মূল্যায়ন করে ভুল দৃষ্টিতে। সিতারে জমিন পর সে চোখ খুলে দিতে চায়।

‘সিতারে জমিন পর’ সিনেমায় আমির খান। এক্স থেকে
‘সিতারে জমিন পর’ সিনেমায় আমির খান। এক্স থেকে

‘জেতা’ মানেই ‘হারানো’ নয়
ছবির সবচেয়ে বড় কথা—জয় মানেই অন্যকে হারানো নয়। সমাজ আমাদের শিখিয়েছে, অন্যকে নিচে নামিয়ে নিজে ওপরে উঠতে হয়। কিন্তু এই ছবি শেখায়, জয় মানে সম্মান; জয় মানে সহানুভূতি। সিতারে জমিন পর আমাদের শেখায়—সব শিশুই গুরুত্বপূর্ণ, সব জীবনই সমান মূল্যবান। ছবির শেষে আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেছি। একজন বাবা, একজন ভাই, একজন অভিভাবক হিসেবে মনে হয়েছে, এমন আরও ছবি হোক, যা কাঁদাবে, হাসাবে, ভাবাবে আর বারবার মনে করিয়ে দেবে, মানবিকতাই শেষ কথা। এটি ঠিক তেমনই এক ছবি, যেটি পরিবার নিয়ে দেখা যায়, যেখানে দাদা, নাতি, মা-বাবা সবাই কোথাও না কোথাও নিজেদের খুঁজে পাবেন। হল থেকে বেরিয়ে মনে হচ্ছিল—আরও বেশি ছবি হোক এমন, যেগুলো শুধু বিনোদন নয়, মননেও আলোড়ন তোলে। অনেক দিন মনে থাকবে এ ছবির কথা। শেষে আরেকটি তথ্য দিয়ে যাই, অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তির পর থেকে প্রতিটি শো হাউসফুল যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

ছবির কেন্দ্রে আমির খানের চরিত্র গুলশান অরোরা। একজন বাস্কেটবল কোচ, যিনি জেদি, রাগী, কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে তাঁর গভীর মানসিক ক্ষত, অতীতের দগদগে স্মৃতি আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া ‘স্ট্রং পুরুষ’ হয়ে ওঠার অমানবিক চাপ। এই কোচ গড়ে তোলেন একদল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড় নিয়ে তৈরি দল। যেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জীবন নিজের ভেতরেই এক একটি যুদ্ধক্ষেত্র। তাঁরা শুধু খেলেন না—জীবনের ব্যাখ্যাও নতুন করে শেখান। ছবির এক অসাধারণ মুহূর্তে, একটি ছোট্ট মেয়ে কোচকে শেখায় ‘সরি’ বলা কত সহজ, তখন বুকের কোথাও কাঁপুনি অনুভব করি। মনে হয়, এ কেবল সিনেমা নয়—আমাদের মধ্যেই ঘটে যাওয়া গল্প।

टिप्पणियाँ
खोज