ব্যাটে-বলে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে স্মরণীয় এক জয়

Комментарии · 11 Просмотры

বাংলাদেশের এই জয়ের মহিমা বোঝাতে প্রতিপক্ষের নামটা মনে রাখা জরুরি। যদিও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দাপ??

বাংলাদেশের এই জয়ের মহিমা বোঝাতে প্রতিপক্ষের নামটা মনে রাখা জরুরি। যদিও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দাপুটে জয়গুলোর একটি—এই ঘোষণা দিয়ে দিতে স্কোরকার্ডই মনে হয় যথেষ্ট।

২৭ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে জয়। টি-টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার সংজ্ঞা হিসেবে অনায়াসে এই ম্যাচটার কথা বলতে পারেন আপনি। সেই উড়িয়ে দেওয়াও কোন দলকে?

পাকিস্তান! যাদের বিপক্ষে জয়ের স্মৃতি বলতে গেলে ভুলতেই বসেছিল বাংলাদেশ। কী, হাংঝু এশিয়ান গেমসের কথা বলছেন? ৫ ওভারের ওই টি-টোয়েন্টিটার কথা ভুলে যান। যে ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ জিতেছিল, সেটিকে ভুলে যেতে বলছি কেন? বলছি ওই ম্যাচটার আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়া নিয়ে বিতর্ক আছে বলে। শুধু ওই ম্যাচটাই নয়, এশিয়ান গেমস ক্রিকেটের সব ম্যাচ নিয়েই।

তা হঠাৎ হাংঝু আসছে কেন? আসছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় স্মরণ করতে গিয়ে। ‘হাংঝু’ বাদ দিলে যে স্মৃতিতে নয় বছরের ধুলা জমেছিল। ২০১৬ এশিয়া কাপে যে ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল, সেই ম্যাচের শুধু একজনই ছিলেন মিরপুরে আজকের ম্যাচে। বাংলাদেশ দলের পেসার তাসকিন আহমেদ।

কদিন আগেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরপর দুটি টি-টোয়েন্টি জিতেছে। দ্বীপ দেশটিতে প্রথম কোনো সিরিজও। সেই ধারাবাহিকতাকে মিরপুরে টেনে আনাটাকে যদি বিস্ময়কর মনে না হয়, তাহলে বুঝতে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাস আপনার অজানা।

হাংঝু এশিয়ান গেমসের বাইরেও পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দুটি জয় আছে। সেটি মিরপুরেই টানা দুই ম্যাচে। তবে তা নয় আর দশ বছর আগের কথা এবং এর কোনোটাই আজকের মতো এমন দাপুটে জয় নয়। কোনোটাতেই পাকিস্তানকে এমন অসহায় বানিয়ে জেতেনি বাংলাদেশ। সেটিও ম্যাচে আদ্যন্ত রাজত্ব করে।

দারুণ বোলিংয়ে পাকিস্তানকে মাত্র ১১০ রানে শেষ করে দিয়ে যেটির শুরু, জাকের আলীর বাউন্ডারিতে ১৬তম ওভারে আসা জয়ে সেটির শেষ। এর আগে কখনো বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এত কম রান করেনি পাকিস্তান (আগের সর্বনিম্ন ২০১৬ সালে এই মিরপুরেই ১২৯/৭), তারপরও বিরতির সময় ‘ঘরপোড়া গরু’ বলেই দর্শক-মনে সংশয়।

পাকিস্তানের ১১০ কি শুধু বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্বে, নাকি উইকেটেরও ভূমিকা আছে এতে! ব্যাটিংয়ের সময় এই রানটাই অনেক বড় হয়ে উঠবে না তো! এই ম্যাচেই অভিষিক্ত পাকিস্তানের সালমান মির্জা ৭ রানের মধ্যে তানজিদ তামিম ও লিটন দাসকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রশ্নটাকে আরও বড় করে তুলেছিলেন। আস্তে আস্তে যা মুছে গেছে পারভেজ হোসেন ও তাওহিদ হৃদয়ের ৭৩ রানের জুটিতে।

 

৩৭ বলে ৩৬ রান করে হৃদয়ের বিদায়ও তাই কোনো শঙ্কা জাগায়নি। যেটির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব পারভেজ হোসেনের। ৩টি চার ও ৫টি ছয়ে সাজানো ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৬ সন্দেহাতীতভাবে তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলোর একটি।

মিরপুরের উইকেট নিয়ে কৌতূহল ছিল। দুই দল যেখানে ছিল প্রায় একই বিন্দুতে। বাংলাদেশও যে এই মাঠে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছে প্রায় ১৪ মাস আগে। উইকেটের চরিত্র নিয়ে সংশয় থাকলে অধিনায়কেরা নিরাপদ পথেই হাঁটেন। মানে প্রথমে ফিল্ডিং নিয়ে নেন।

লিটন দাসও তা-ই করেছেন। যদিও টসে জিতে একটু চমকে গিয়ে থাকেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সর্বশেষ কবে টসে জিতেছিলেন, তা যে ভুলতেই বসেছিলেন। টানা নয় টি-টোয়েন্টিতে টসে হারার পর ভাগ্যদেবী তাঁর দিকে চেয়ে মুচকি হেসেছেন।

 

প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার সুবিধা হলো, উইকেটের মতিগতিটা বুঝে ব্যাটিংয়ে নামা যায়। কিন্তু পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং তা বুঝতে দিলে তো! নতুন চেহারার এই পাকিস্তান দলের টি-টোয়েন্টিতে একটাই মন্ত্র—মারো নয় মরো। বলে বলে চালাও, আউট হয়ে গেলে যাবে, ড্রেসিংরুমে আরও ব্যাটসম্যান আছে। এই করতে গিয়ে অর্ধেক ওভার যাওয়ার বেশ আগেই ইনিংসের অর্ধেক শেষ। নির্দিষ্ট করে বললে ৭.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের স্কোর মাত্র ৪৬।

এর মধ্যেও আবার একাধিক ক্যাচ পড়েছে, তৈরি হয়েছে রান আউটের সুযোগ। সবচেয়ে ‘বড়’ উইকেটটি অবশ্য রান আউটেই। ওপেন করতে নেমে এক প্রান্ত ধরে রাখা ফখর জামান ক্রিজে ফিরতে গিয়ে পিছলে পড়ে যখন রান আউট হয়ে গেলেন, পাকিস্তান ৬ উইকেটে ৭০। ইনিংসের তখনো ৫১ বল বাকি। যার ৩টি খেলতেই পারেনি পাকিস্তান। ব্যাটিং অর্ডারের একেবারে শুরুতে ফখর জামান (৪৪) আর ৭ ও ৮ নম্বরে নামা আব্বাস আফ্রিদি (২২) ও খুশদিল শাহ (১৭) ছাড়া আর কারও দুই অঙ্কের সঙ্গে দেখা হয়নি।

ম্যাচের চতুর্থ বলেই তাসকিন সহজ ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় উইকেটবঞ্চিত শেখ মেহেদী শেষ পর্যন্ত উইকেট একটা পেয়েছেন বটে, কিন্তু রান দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। ইনিংসের রান রেট যেখানে ৫.৬৪, সেখানে মেহেদীর ওভারপ্রতি ৯.২৫ রান রীতিমতো দানছত্র খুলে দেওয়ার মতো ব্যাপার।

৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার তাসকিন। পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগাকে একটা ওভারে রীতিমতো নাচিয়ে বিদায় করে দেওয়া তানজিমের ৪ ওভারে এসেছে ২০ রান।

টি-টোয়েন্টির বিচারে বেশ হিসেবি বোলিং। সমস্যা একটাই, তানজিমের পর যিনি বোলিংয়ে এসেছেন, তাঁর বোলিং ফিগারের দিকে তাকালে  মনে হতেই পারে, বাকিরা বুঝি বড়লোকের বখাটে ছেলের টাকা ওড়ানোর মতো করে রান বিলিয়েছেন!

২০২১ সালে এই মিরপুরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান করে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেন্ট ভিনসেন্টে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেপালের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৭। সেসব ছাপিয়ে মোস্তাফিজ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কিপটে বোলিংয়ে পাকিস্তানকে থমকে দিলেন এ দিন। ৪ ওভারে ৬ রান টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো বোলারেরই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং, যা মিরপুরেরও রেকর্ড।

৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার তাসকিন। পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগাকে একটা ওভারে রীতিমতো নাচিয়ে বিদায় করে দেওয়া তানজিমের ৪ ওভারে এসেছে ২০ রান।

টি-টোয়েন্টির বিচারে বেশ হিসেবি বোলিং। সমস্যা একটাই, তানজিমের পর যিনি বোলিংয়ে এসেছেন, তাঁর বোলিং ফিগারের দিকে তাকালে  মনে হতেই পারে, বাকিরা বুঝি বড়লোকের বখাটে ছেলের টাকা ওড়ানোর মতো করে রান বিলিয়েছেন!

২০২১ সালে এই মিরপুরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান করে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেন্ট ভিনসেন্টে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেপালের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৭। সেসব ছাপিয়ে মোস্তাফিজ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কিপটে বোলিংয়ে পাকিস্তানকে থমকে দিলেন এ দিন। ৪ ওভারে ৬ রান টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো বোলারেরই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং, যা মিরপুরেরও রেকর্ড।

আজ মোস্তাফিজে  ভুক্তভোগী পাকিস্তানেরই আরেক বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমিরও ২০১৬ এশিয়া কাপে ৪ ওভার শেষ করেছিলেন ৬ রান দিয়ে। রেকর্ড শুধু নির্জলা সংখ্যা চেনে, নইলে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় মোস্তাফিজকে আমিরের চেয়ে এগিয়ে রাখা যেত। আমিরের ওই কিপটেমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের জয়ের মহিমা বোঝাতেও প্রতিপক্ষের নামটা মনে রাখা জরুরি। যদিও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দাপুটে জয়গুলোর একটি—এই ঘোষণা দিয়ে দিতে স্কোরকার্ডই মনে হয় যথেষ্ট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১১০ (ফখর ৪৪, আব্বাস ২২, খুশদিল ১৭; তাসকিন ৩/২২, মোস্তাফিজ ২/৬, তানজিম ১/২০, মেহেদী ১/৩৭)। 

বাংলাদেশ: ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ (পারভেজ ৫৬*, হৃদয় ৩৬, জাকের ১৫*, তানজিদ ১, লিটন ১; মির্জা ২/২৩, আব্বাস ১/১৬)। 

ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে। 

Комментарии