লঙ্কা জয়ের রেশ নিয়ে এবার মিরপুরে পাকিস্তানের সামনে বাংলাদেশ

코멘트 · 19 견해

বলুন তো, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ কয়টি টি–টোয়েন্টি জিতেছে? ২০১৫ সালের ওই জয়টার কথাই হয়তো প্রথমে মনে পড়ছে ?

বলুন তো, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ কয়টি টি–টোয়েন্টি জিতেছে? ২০১৫ সালের ওই জয়টার কথাই হয়তো প্রথমে মনে পড়ছে আপনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে প্রথম জয়—মনে তো থাকবেই। না, এটাই একমাত্র কারণ নয়। আর কী?

তা জানতে কদিন পরে চলে যেতে হবে। ওই ম্যাচের পর খুলনায় প্রথম টেস্ট। যেটির আগে পাকিস্তানের কোচ ওয়াকার ইউনিস বিস্ময়াবিষ্ট কণ্ঠে বলছেন, ‘বাংলাদেশ ৪–পাকিস্তান ০, ভাবা যায়!’

এক জয়ে কীভাবে ৪–০ হয়? হয় না। হয়েছিল, কারণ ওই টি–টোয়েন্টি ম্যাচটার আগেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে পাকিস্তান। আরেকটি কারণেও ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিলের ওই টি–টোয়েন্টি ম্যাচটাকে হয়তো মনে রেখেছেন আপনি। ওই ম্যাচেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের আবির্ভাব।

বছরখানেক পর দুই দলের পরের টি–টোয়েন্টির শেষও বাংলাদেশের জয়ে। সেটি এশিয়া কাপ, পাকিস্তানের আগেই শ্রীলঙ্কাকে হারানো বাংলাদেশ যেটির ফাইনাল খেলেছিল। এই দুটি জয়ই যে মাঠে, সেই মিরপুরেই আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ–পাকিস্তান তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ। লেখার শুরুতে করা প্রশ্নটার উত্তর দিয়ে যদি এখন বলি, টি–টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৩টি; বাংলাদেশের তৃতীয় জয়টা হয়তো আপনি মনেই করতে পারবেন না।

না পারলে স্মৃতিশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আপনার দলে আরও অনেককেই পাবেন। কারণ, বাংলাদেশের তৃতীয় জয়টি কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে নয়, এশিয়ান গেমসে। ২০২৩ হাংঝুতে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও জোড়াতালি দেওয়া একটা দল পাঠিয়েছিল। তখন যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলছে। বৃষ্টির কারণে ৫ ওভারে নেমে আসা হাংঝুর সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ। কেউ মনে না রাখলে কী হবে, সেই ম্যাচের তো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টির স্বীকৃতি আছে।

যেভাবে বাংলাদেশের জয়ের বৃত্তান্ত দেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হতেই পারে, পাকিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের রেকর্ড বোধ হয় দারুণ কিছু। আসলে যা ১৯–৩! টানা দুই জয়ের আগে টানা ৭টিতে হার, এশিয়ান গেমসে ওই জয়টার কারণে পরের ১৩ ম্যাচের ১২টিতে। গত মে–জুনে পাকিস্তানে দুই দলের সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশের ঘরে শূন্য। প্রথম দুই ম্যাচে ৩৭ ও ৫৭ রানে হারের চেয়েও শেষ ম্যাচে ৭ উইকেটে হারটা বেশি বুকে বেজেছিল। কারণ, ওই ম্যাচে বাংলাদেশ করেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৯৬ রান।

৪৬ বলে অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংস খেলে সেটিকেও ‘কোনো ব্যাপার না’ বানিয়ে দেওয়া মোহাম্মদ হারিস আছেন পাকিস্তানের এই দলেও। টি–টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সেঞ্চুরিয়ানদের মধ্যে একমাত্র নন–ওপেনার। গত বিপিএলে খেলে যাওয়া পাকিস্তানের এই দলের পাঁচজনের অন্যতমও। যে অভিজ্ঞতার কারণে মিরপুরকে ‘অজানা–অচেনা’ বলতে রাজি নন পাকিস্তানের অধিনায়ক।

তা পাকিস্তানের অধিনায়ক কে, মনে আছে তো? সম্প্রতি পাকিস্তান ক্রিকেটে এমনই ওলটপালট যে, কে কখন অধিনায়ক হয়ে যাচ্ছেন, কে কোচ, কে নির্বাচক—পাকিস্তানিদেরই তা মনে রাখতে হিমশিম দশা। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, তিন সংস্করণেই অধিনায়ক ছিলেন বাবর আজম। গত ডিসেম্বর থেকে যিনি টি–টোয়েন্টিতেই ব্রাত্য, সঙ্গে তাঁকে সরিয়ে সাদা বলের অধিনায়ক হওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ানও। আরেক তারকা শাহিন শাহ আফ্রিদিও দলে নেই। টি–টোয়েন্টির নতুন যুগে পাকিস্তানকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে সালমান আলী আগার ওপর। বলতে গেলে যাঁর পুরো টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাই অধিনায়কত্বের সঙ্গে মিলে যায়। ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৪টি, এর ১২টিতেই তিনি অধিনায়ক।

অভিজ্ঞতার বিচারে দুই দলের অধিনায়ক তাই দুই মেরুতে। লিটন দাস খেলেছেন ১০৪ ম্যাচ, অধিনায়ক হিসেবে অভিজ্ঞতা অবশ্য সালমান আগার চেয়ে মাত্র এক ম্যাচই বেশি। যদিও এর মধ্যেই গড়ে ফেলেছেন দারুণ এক কীর্তি। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩–০ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কদিন আগে সিরিজ জিতেছেন শ্রীলঙ্কাতেও। দেশের বাইরে দুটি টি–টোয়েন্টি সিরিজজয়ী বাংলাদেশের একমাত্র অধিনায়ক সর্বশেষ জয়টির রেশ নিয়েই আজ টস করতে নামবেন। ক্রিকেটে মোমেন্টাম বলে যে কথাটাকে খুব বড় করে দেখা হয়, সেটি তাই বাংলাদেশের পক্ষেই থাকবে। যদিও প্রতিপক্ষ ভিন্ন বলে সেই ‘মোমেন্টাম’ কতটা অর্থবহ, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে।

একই দল নিয়ে পরভূমে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আসতে পারলে নিজেদের চেনা মাঠে পাকিস্তানকে কেন নয়—এই প্রশ্নও কি তাহলে প্রাসঙ্গিক নয়! হয়তো, হয়তো না। এই দ্ব্যর্থক উত্তর কেন? কারণ, যতই নিজেদের মাঠ হোক, মিরপুরের সঙ্গেও বাংলাদেশের মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। মিরপুরে বাংলাদেশ সর্বশেষ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে আট মাসেরও বেশি আগে। টি–টোয়েন্টি ধরলে সময়টা প্রায় ১৪ মাস হয়ে যায়। গতকাল বিকেলে লিটন দাস যে পরীক্ষার আগে মনোযোগী ছাত্রের মতো নিবিষ্টভাবে মিরপুরের উইকেট দেখছিলেন, তা শুধু ম্যাচের আগে উইকেট নিয়ে অধিনায়কের রুটিন কৌতূহল নয়। এত দিনের বিরতিতে মিরপুরের উইকেটও তাঁর কাছে একটু অচেনা লাগতেই পারে।

খেলা শুরু হয়ে গেলে আলোচনায় হয়তো আরও অনেক কিছুই আসবে। তবে বাংলাদেশ–পাকিস্তান টি–টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে সবচেয়ে বড় কৌতূহলও হয়ে থাকছে এটাই।

মিরপুরের উইকেট!

코멘트