শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে

Yorumlar · 15 Görüntüler

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে যে সহিংসতা ঘটেছে এবং তারপর সরকারের তর??

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে যে সহিংসতা ঘটেছে এবং তারপর সরকারের তরফ থেকে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জায়গা থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এবং উদ্বেগের নিরসন হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে গোপালগঞ্জে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং সেখানকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রা ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হামলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ এবং গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ রকম সহিংস পরিস্থিতিতে সেখানে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করা হয়। গোপালগঞ্জে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে মোট চারটি মামলা করা হয়েছে। এই চার মামলায় আসামি ৩ হাজার ৮ জন এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রোববার পুলিশ বাদী হয়ে চারটি হত্যা মামলা করেছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা মোট ৫ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও গণগ্রেপ্তারের একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি ও পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী, অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার কোনো ব্যক্তির লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্য চারজনেরই ময়নাতদন্ত হয়নি। পুলিশ লাশের সুরতহালও করেনি। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে গেছেন। কিন্তু স্বজনেরা ভিন্ন কথা বলেছেন। ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল না হওয়ায় এসব হত্যার তদন্ত ও বিচার যথাযথভাবে হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

ঘটনার পর থেকেই গোপালগঞ্জে বিভিন্ন বাহিনীর টহল, তল্লাশি ও আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে নিরপরাধ কেউ নেই, এটা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। সঠিক তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়া ঢালাও অভিযোগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের চেষ্টা করলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব কেবল অপরা

ধীদের বিচারের আওতায় আনা নয়, বরং এটাও নিশ্চিত করা যে নিরপরাধ নাগরিকেরা যেন হয়রানির শিকার না হন।

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সামলাতে হলে সরকারকে প্রথম স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা আইনের আওতায় আসেন এবং নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার না হন। ১৪৪ ধারা ও কারফিউয়ের মতো কঠোর ব্যবস্থা সাময়িকভাবে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা যেন হয় সীমিত সময়ের জন্য এবং তাতে নাগরিকদের চলাফেরা, কাজকর্ম ও নিরাপত্তার অধিকার যেন অযথা ব্যাহত না হয়।

রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবিলার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব অভিযান ও তল্লাশি চলছে, সেগুলো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় নির্বিচার গ্রেপ্তার, বাসাবাড়িতে অভিযান ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনায় এই পুরোনো প্রবণতা আবারও মাথাচাড়া দিলে তা দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।

গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সেখানকার মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা—দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাসীদের যেমন ছাড় দেওয়া চলবে না, তেমনি নির্দিষ্ট কোনো এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারণে কাউকে অযথা ভোগান্তিতে ফেলা যাবে না। গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে এবং মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Yorumlar