সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের কোন পদ্ধতি যথাযথ

코멘트 · 15 견해

নারীসমাজ ও সচেতন নাগরিকেরা বহুদিন থেকেই নারীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন থেকে সরাসরি নির্বাচনের দাবি করে আসছেন এব?

নারীসমাজ ও সচেতন নাগরিকেরা বহুদিন থেকেই নারীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন থেকে সরাসরি নির্বাচনের দাবি করে আসছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো এর আগে এই দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছে। সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের কোন পথ যথাযথ, তা নিয়ে লিখেছেন বদিউল আলম মজুমদার

আফ্রিকার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে অধিক উন্নত হলেও পুষ্টির দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। নব্বইয়ের দশকে ইউনিসেফ পরিচালিত অনকেগুলো গবেষণা দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর অপেক্ষাকৃত অধস্তন অবস্থাকেই এর জন্য দায়ী করেছে।

এ ছাড়া যেসব ভ্রূণ মাতৃগর্ভে অপুষ্টিতে ভোগে, জন্মের পর পরিণত বয়সে তারা বেশি হারে হদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, যার কারণ ‘ফিটাল প্রোগ্রামিং’। ‘ফিটাল প্রোগ্রামিং’-এর প্রভাবে বাংলাদেশে হদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের হার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। যদিও এগুলো ‘ডিজিজেস অব দ্য অ্যাফ্লুয়েন্স’ বা প্রাচুর্যেরই ব্যাধি।

এসব কারণে নারীর অপুষ্টি, যার উৎস নারীর প্রতি বঞ্চনা, অবহেলা এবং তাঁদের অধস্তন অবস্থা আমাদের পুরো জাতিকে পিছিয়ে রাখছে। তাই এ অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বঞ্চনার অবসান ঘটানো জরুরি।

২.

আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি নারী, কিন্তু জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বসহ সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে তাঁরা অনেক পিছিয়ে আছেন। রাজনীতি ও সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর পশ্চাৎপদতা নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা’র অঙ্গীকার করা হয়েছে।

সাংবিধানিক এ অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমাদের সংবিধানে বর্তমানে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে তাদের আসনের হারের ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়।

বিদ্যমান সংরক্ষণপদ্ধতির অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার অন্যতম হলো নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো মূলত আলংকারিক। এগুলোয় কোনো নির্বাচনই হয় না, তাই এসব আসন পূরণ করতে কোনো যোগ্যতারও প্রয়োজন হয় না।

বস্তুত এসব আসন অনুগ্রহ বা ফায়দা হিসেবে দলগুলো ব্যবহার করে থাকে। তাই সংরক্ষিত আসনে নারীদের দায়বদ্ধতা মূলত দলের কর্তাব্যক্তিদের কাছে থাকে। ফলে এর মাধ্যমে নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে না। এ ছাড়া এসব আসনে ভয়াবহ মনোনয়ন–বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

৩.

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পটভূতিতে রাষ্ট্র মেরামতের যে আকাঙ্ক্ষা জনমনে জাগ্রত হয়েছে, তাতে সংসদে বিদ্যমান সংরক্ষিত আসনব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে একে নতুন করে ঢেলে সাজানোর এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এমন পটভূমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার জন্য ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো:

 

৪.

উপরিউক্ত প্রস্তাবগুলো কয়েকটি সুস্পষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্লেষণের চিত্র সংযুক্ত টেবিলে প্রদর্শন করা হয়েছে। বিশ্লেষণ থেকে এটি সুস্পষ্ট যে ঘূর্ণমানপদ্ধতিই নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সর্বাধিক কার্যকর ব্যবস্থা।

এই পদ্ধতিতে সংসদের আসনসংখ্যা ৪০০-তে উন্নীত করে লটারি বা অনুরূপ পদ্ধতিতে প্রথম মেয়াদে ১০০টি আসন, দ্বিতীয় মেয়াদে অন্য ১০০টি আসন, তৃতীয় মেয়াদে অন্য আরও ১০০টি আসন এবং চতুর্থ মেয়াদে অবশিষ্ট ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রতি মেয়াদে বাকি ৩০০ আসন নারী-পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এতে দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব থাকে না। এটি ফায়দা প্রদানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এতে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচিত প্রার্থীরা সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের মতো সমসুযোগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা উপভোগ করেন এবং দলীয় প্রধানদের পরিবর্তে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হন।

এতে যোগ্য নারীরা পাঁচ বছরের মেয়াদকালে নিজ যোগ্যতায় ‘কনস্টিটিউয়েন্সি’ গড়ে তোলেন, পরবর্তী সময় সাধারণ আসন থেকে পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে পারেন। ফলে ২০ বছরের ব্যবধানে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাই ফুরিয়ে যেতে পারে। কারণ, এই পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে সারা দেশে একঝাঁক নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

উদাহরণস্বরূপ, ঘূর্ণমানপদ্ধতি ব্যবহারের কারণে ভারতের পঞ্চায়েতে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। যেমন ভারতীয় পঞ্চায়েতের তিন স্তরে—গ্রাম, মধ্য (পঞ্চায়েত সমিতি) এবং জেলায় মোট নারী সদস্যের সংখ্যা ২০০২ সালে প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার থেকে ২০০৮ সালে প্রায় ১০ লাখ ৪০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।

একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৩০০ থেকে ২১ হাজার ৩৫১ জনে। এমনই পটভূমিতে ভারত সরকার লোকসভা ও বিধানসভায় ঘূর্ণমানপদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য ২০২৩ সালে একটি আইন পাস করেছে।

এতে যোগ্য নারীরা পাঁচ বছরের মেয়াদকালে নিজ যোগ্যতায় ‘কনস্টিটিউয়েন্সি’ গড়ে তোলেন, পরবর্তী সময় সাধারণ আসন থেকে পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে পারেন। ফলে ২০ বছরের ব্যবধানে নারীর জন্য আসন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাই ফুরিয়ে যেতে পারে। কারণ, এই পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে সারা দেশে একঝাঁক নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

উদাহরণস্বরূপ, ঘূর্ণমানপদ্ধতি ব্যবহারের কারণে ভারতের পঞ্চায়েতে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। যেমন ভারতীয় পঞ্চায়েতের তিন স্তরে—গ্রাম, মধ্য (পঞ্চায়েত সমিতি) এবং জেলায় মোট নারী সদস্যের সংখ্যা ২০০২ সালে প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার থেকে ২০০৮ সালে প্রায় ১০ লাখ ৪০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।

একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৩০০ থেকে ২১ হাজার ৩৫১ জনে। এমনই পটভূমিতে ভারত সরকার লোকসভা ও বিধানসভায় ঘূর্ণমানপদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য ২০২৩ সালে একটি আইন পাস করেছে।

৫.

নারীসমাজ ও সচেতন নাগরিকেরা বহুদিন থেকেই নারীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন থেকে সরাসরি নির্বাচনের দাবি করে আসছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোও এই দাবির প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশিত নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপি সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করে: ‘সংসদে নারীদের আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন ও ক্ষমতায়নের জন্য তাঁদের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে এবং নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

একইভাবে অন্যান্য দলও সংসদে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের অঙ্গীকার করে আসছে। সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে ব্যাপক জনমতও রয়েছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী প্রায় ৪৬ ব্যক্তির মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে ৭৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা ১০০টি করে, সেগুলো থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

  • বদিউল আলম মজুমদার সম্পাদক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

코멘트