৬১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি

코멘트 · 13 견해

২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ৬১ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩-২৪ অর্

২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ৬১ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬ হাজার ৫১৪ কোটি ডলারের পণ্য। তবে পরিমাণের দিক থেকে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে। সব মিলিয়ে সোয়া ১৪ কোটি টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টনের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ৫০টি শুল্ক স্টেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খালাস হওয়া পণ্যের তথ্য পর্যালোচনা করে আমদানির এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এনবিআরের তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল, দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ দেশে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়, এ রকম অনেক পণ্য আমদানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য স্থানীয় আমদানি ও নমুনা আমদানি বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত আমদানির হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।

ডলার–সংকট নিয়ে গত ২০২৪–২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছিল। অর্থবছরের ৩৬ দিনের মাথায় গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তন হয়। দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দেশে ডলার নিয়ে আগে থেকে যে কড়াকড়ি ছিল, তা তখনো আমদানির ক্ষেত্রে বহাল ছিল। সে জন্য নতুন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।

ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলেন, আমদানি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এখনো অনেক পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে মার্জিন দিতে হয় বেশি। যেমন পুরোনো জাহাজ আমদানিতে গ্রাহকভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকা দামের একটি পুরোনো জাহাজ আমদানি করতে হলে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। কিন্তু এ রকম সক্ষমতা অনেক উদ্যোক্তার নেই। কয়েক বছর আগেও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মার্জিন দিয়ে ঋণপত্র খোলা যেত।

সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ, পুরোনো জাহাজ, বিভিন্ন মূলধনি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, ডিজেল, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, গম ও পণ্য পরিবহনের জাহাজ ইত্যাদি আমদানি কমেছে।

সাধারণত দেশে পণ্য আমদানি বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ে। বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া। যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ে। এমনকি বাণিজ্যিক পণ্যের আমদানি বাড়লেও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর আমদানি কমলে উৎপাদনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গত অর্থবছরে শিল্পের অনেক খাতে কাঁচামাল আমদানি কমেছে। কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও।

যা যা বেড়েছে

পরিমাণে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি কয়লা। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসায় পণ্যটির আমদানি বেড়েছে। তাতে এই পণ্য পরিমাণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এনবিআরের হিসাবে, এই পণ্যের আমদানি ৪৮ লাখ টন বেড়ে পৌনে ২ কোটি টনে উন্নীত হয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে আমদানি বেড়েছে চালের। ঘাটতির কারণে গত অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি খাতে চাল আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৮৯ হাজার টন। অথচ এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছিল এক হাজার টনের কম।

আমদানি বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। পণ্যটির আমদানি ৮ শতাংশ বেড়ে ১৭ লাখ ৫৮ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরো বা স্ক্র্যাপ, ডাল, অপরিশোধিত চিনি, এলপিজি ইত্যাদির আমদানিও বেড়েছে।

যা যা কমেছে

আমদানি কমার তালিকায় রয়েছে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্লিংকার আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ৫ লাখ টন। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তা কমে ১ কোটি ৯০ লাখ টনে নেমেছে।

সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজের আমদানিও কমেছে। এটির আমদানি ৭ শতাংশ কমেছে। আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন।

লোহার কাঁচামালের দ্বিতীয় প্রধান উৎস পুরোনো জাহাজের আমদানিও কমেছে। এটির আমদানি ১৫ শতাংশ কমেছে। আমদানি হয়েছে সাড়ে আট লাখ টন।

মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের বেশির ভাগেরই আমদানি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি কমার তালিকায় রয়েছে ডিজেল, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, গম, পণ্য পরিবহনের জাহাজ ইত্যাদি।

দুশ্চিন্তা মূলধনি যন্ত্রপাতি নিয়ে

জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট ও সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য আমদানির মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দুশ্চিন্তার। কারণ, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ, বিনিয়োগের উদ্যোগ কমে যাচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকের সুদের হার কমানোসহ উদ্যোক্তাদের নীতিসহায়তা দিতে হবে। তাহলে বিনিয়োগের যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়বে। আমদানি বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে। অর্থনীতি চাঙা হবে।

 

코멘트