ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ালো ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানি

Mga komento · 17 Mga view

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ব্রিট??

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা গাজায় মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। তারা একে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন।

ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্জের মধ্যে একটি ফোনালাপের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয় এবং বলা হয়, ‘নাগরিক জনগণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় মানবিক সহায়তা আটকে রাখা গ্রহণযোগ্য নয়।’

তবে বিবৃতিতে উল্লেখযোগ্য নতুন কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগের ঘোষণা আসেনি।

তিন নেতা জানান, তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রস্তুত, যা ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি ও গোটা অঞ্চলের জন্য টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’ যদিও তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন, তা স্পষ্ট করেননি।

ইউরোপীয় বিভাজন উন্মোচিত করলো ফ্রান্সের স্বীকৃতি

ম্যাক্রোঁর আকস্মিক ঘোষণাটি ইউরোপীয় তিন শক্তির মধ্যে মতভেদের ইঙ্গিত দেয়, বিশেষত গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলা ও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ইতি টানার উপায় নিয়ে।

তিনটি দেশই নীতিগতভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে থাকলেও, জার্মানি জানিয়েছে, তারা এখনই ফ্রান্সের মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফ্রান্স সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই স্বীকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে।

ব্রিটেন এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি, তবে স্টারমারের ওপর চাপ বাড়ছে—বিরোধীদলীয় এমপি এবং নিজ দল লেবার পার্টির সদস্যদের কাছ থেকেও। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং বলেন, ‘যতক্ষণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে কিছু আছে, ততক্ষণই স্বীকৃতি দিতে হবে।’

শুক্রবার ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সের ৬৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২২১ জন একটি চিঠিতে স্টারমারকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির আহ্বান জানান। চিঠিতে বলা হয়, ‘১৯৮০ সাল থেকে আমরা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে। এই স্বীকৃতি সেই অবস্থানের বাস্তব প্রতিফলন হবে।’

স্টারমারের কড়া অবস্থান

তিন রাষ্ট্র আলোচনার পর স্টারমার বলেন, ‘জিম্মিদের অব্যাহত বন্দিত্ব, ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রতিরোধ, চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং গাজায় ইসরায়েলের অতিরিক্ত সামরিক পদক্ষেপ—সবই নিন্দনীয়।’

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি অবশ্যই শান্তির পথের একটি ধাপ হওয়া উচিত। আমি এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন। তবে এটি এমন একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হতে হবে, যা দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ও উভয় জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’

উদ্বেগ বাড়ছে ইসরায়েলের মিত্রদের মধ্যেও

গাজায় মানবিক সংকট, যেখানে শিশুদেরও অনাহারে মৃত্যু হয়েছে, তা ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ইউরোপে ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানি বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি ‘চূড়ান্ত কূটনৈতিক পদক্ষেপের অংশ’ হওয়া উচিত এবং তারা শিগগিরই এটি বিবেচনা করছে না। তবে বার্লিন ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করে গাজায় সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

জার্মান সরকার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েল ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে, যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা উল্লেখ করেছে, যদি অগ্রগতি না হয়, তবে চাপ বাড়ানো হতে পারে। তবে কিভাবে তা করা হবে, তা বলা হয়নি।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক চাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্য

ব্রিটেন ইতোমধ্যে ইসরায়েলের কাছে কিছু অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছে, মুক্ত বাণিজ্য আলোচনাও স্থগিত রেখেছে এবং কিছু চরম ডানপন্থী মন্ত্রী ও বসতি স্থাপনকারীকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। তবুও স্টারমারের ওপর চাপ রয়েছে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টাও স্টারমারের নীতির পেছনে প্রভাব ফেলছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্টারমার স্কটল্যান্ডে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যেখানে ট্রাম্পের দুটি গলফ কোর্স রয়েছে।

বিশ্লেষকের মতামত

চ্যাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, ম্যাক্রোঁর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত ‘অন্যান্য দেশকে সঙ্গে পাওয়ার জন্য কিছুটা সময় ও সুযোগ তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যুক্তরাজ্য প্রস্তুত, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। স্টারমার হুট করে কিছু করেন না। এই উদ্যোগ হয়তো তাকে সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।’

Mga komento