‘দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’

نظرات · 19 بازدیدها

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বৃহস্পতিবার রাতে আহমাদ ওয়াদুদ নামের এক সাংবাদিকের মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটন?

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বৃহস্পতিবার রাতে আহমাদ ওয়াদুদ নামের এক সাংবাদিকের মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে নেওয়া হয়েছে। ওই সাংবাদিকের ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনসহ শুক্রবার তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনারুল ইসলাম, দুই কনস্টেবল মাজেদুর রহমান ও মো. নুরুন্নবী।

শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিক আহমাদ ওয়াদুদের ছিনতাই হওয়া মুঠোফোন উদ্ধারসহ তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর কর্তব্যে অবহেলা ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আলমগীর কবিরকে পুরো ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ের পাশের গলিতে বণিক বার্তা পত্রিকার সহসম্পাদক আহমাদ ওয়াদুদ সস্ত্রীক ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা চাপাতির মুখে তাঁদের পথ রোধ করেন এবং তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যান। ছিনতাইকারীদের চাপাতির আঘাতে তিনি আহত হন।

পুলিশ বলেছে, রাতেই ভুক্তভোগীরা মোহাম্মদপুর থানায় পুলিশের সহায়তা চাইতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ও অসদাচরণের শিকার হন। অভিযোগ রয়েছে, আহমাদ ওয়াদুদ মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি।

এ ঘটনায় রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের অসহযোগিতা নিয়ে আহমাদ ওয়াদুদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পরে সেই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।

‘দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’

আহমাদ ওয়াদুদ ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লেখেন, ‘মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা। আজ রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সাথে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকাপয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন।’
আহমাদ ওয়াদুদ আরও লেখেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার দূরত্ব ৩ মিনিট। আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার সাথে একটি ছিনতাই হয়েছে। তারা আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা করেন। দেখছি।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, ‘ডিউটি অফিসারের নাম এসআই জসিম। তার পাশে সাদাপোশাকে একজন পুলিশ সদস্য কাগজে অন্য একজনের অভিযোগ লিখছেন। সাদাপোশাকের ওই পুলিশ সদস্য আমার দিকে আঙুল তাক করে উগ্রভাবে বলেন: আপনার শার্টের বোতাম লাগান। আমি তখনই খেয়াল করলাম, ছিনতাইকারীদের আঘাতের সময় আমার একটি বোতাম খুলে গিয়েছিল।

আমি ওই অফিসারের কথায় আহত হলেও কোনো ঝামেলায় না গিয়ে সরি বলে বোতামটি লাগিয়ে নিলাম। এরপর তিনি আমাকে আমার সবগুলো বোতাম লাগাতে বললেন। আমার তখন শুধু টাই-বাটন, অর্থাৎ একদম গলার সঙ্গে থাকা বোতামটি খোলা ছিল, যেটা সাধারণত আমরা কখনো লাগাই না। আমি বললাম, প্লিজ আমার অভিযোগটি নিন।’

আহমাদ ওয়াদুদ লেখেন, ‘তারা বললেন, অভিযোগ লেখার লোক নেই। আমি তাদের বললাম, আমি নিজেই লিখে দিচ্ছি। আমাকে একটি কাগজ দিন। তারা কয়েক মিনিট পর আমাকে একটি সাদা কাগজ দিলেন। আমি একটি কলম দিতে অনুরোধ করলাম।অফিসার বললেন, আমাদের এক্সট্রা কলম নেই। অথচ সেখানে অনেকগুলো কলম পড়ে ছিল। যাহোক আমার স্ত্রী নিজের ব্যাগ খুঁজে আমাকে একটি কলম দিলেন। আমি সেটা দিয়ে আমার অভিযোগ লিখলাম। ডিউটি অফিসার আমার অভিযোগের কোনো কপি দিলেন না। শুধু আমাকে একটি ফোন নাম্বার দিয়ে বললেন, এটা এএসআই আনারুলের নাম্বার। উনি এখন নবোদয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে ওনার সাথে কথা বলেন।’

ফেসবুকে এই সাংবাদিক আরও লেখেন, ‘আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার মনে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন। এসআই জসিম আমার কথায় প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন, এটা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় ইনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না। এটা তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান। ওখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পাবেন না।’

আহমাদ ওয়াদুদ লেখেন, ‘আমি বললাম, আমার ধারণা ওরা ওখানে এখনো আছে। তবে এসআই জসিম বললেন, আপনার কমনসেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি? আমি তবু তাকে অনুরোধ করলাম, কাছেই যেহেতু, যেন একবার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসি সাহেবের রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসান সাদাপোশোকে ছিলেন। আমি তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!’

ডিএমপির তেজগাঁও উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন, সাংবাদিক ওয়াদুদের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টটি তাঁর নজরে আসে এবং তিনি ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। ওই ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলা ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগে পুলিশের চার সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

মো. ইবনে মিজান আরও বলেন, শুক্রবার সকালে ওই সাংবাদিককে ডেকে এনে মামলা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীরা হলেন ইউসুফ (২৬) সিয়াম (২৩) ও জহুরুল (২২)। তাঁদের মধ্যে ইউসুফ মূল ছিনতাইকারী।

 

نظرات