শেখ হাসিনাকে কেন ভারত পুশ ইন করছে না প্রশ্ন তুলে বিএনপির সিনিয়ার যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা বাংলাভাষী মুসলমান। আমরা মুসলমান, কিন্তু বাঙালি। পশ্চিমবাংলা ও ত্রিপুরায়ও প্রচুর বাঙালি বাস করে। তাদের মধ্যে অনেকে মুসলমান আছে। তাদের পুশ ইন করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাও তো বাঙালি মুসলমান, বাংলাদেশের মানুষ, তাকে পুশ ইন করছেন না কেন? যেসব দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে ভারতে তাদের তো পুশ ইন করছেন না। কেন?’ সোমবার (২৮ জুলাই) এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শুধু রাজনৈতি স্বার্থে পুশ ইন করছে ভারত। ভারতের নাগরিক, হাজার হাজার বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে, কিন্তু সে মুসলমান ও বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে তাদের বাংলাদেশে পুশ ইন করছে। সরকারের উচিত এগুলো পুশব্যাক করা। এই পুশব্যাক সরকার কেন করতে পারছে না? বিএনপির সময়ে তো পুশব্যাক করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা পাচারকারী, লুটেরা ও প্রকাশ্যে গণহত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছে দিল্লি শেখ হাসিনাসহ। তারা পুশ ইন হন না, অথচ সেখানে স্থায়ীভাবে বাস করে, ভারতের নাগরিক, তারা পুশ ইন হন। এগুলো কেন করা হচ্ছে। এ জন্য করা হচ্ছে, সেই দেশ তাদের পছন্দমতো সরকার চায়। সেই সরকারকে জনগণ পছন্দ করুক বা না করুক; তাতে কোনো যায় আসে না তাদের। তাদের মনোনিত ব্যক্তি থাকতে হবে, তার মানে এটা কারা করে, যারা প্রভুত্বকারী দেশ, সাম্রাজ্যবাদী দেশ- এটা তারা করে। যখন তারা অন্য দেশকে দখল করতে চায়। তারা তাদের প্রতিভূকে সেই সব জায়গায় বসিয়ে রাখে। শেখ হাসিনা তাদের প্রতিভূ। এ কারণেই তাদের মন খারাপ। এ কারণেই আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘ইন্ডিয়া ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে। সরকারও স্থলবন্দর দিয়ে সে দেশ থেকে সুতা নিয়ে আসতো। বাংলাদেশ সরকার সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। বাপের বেটার মতো কাজ করেছে। আমরা পৃথিবীর বহুদেশ থেকে সুতা আমদানি করতে পারবো। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য কারও ওপর নির্ভরশীল হবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তুলা উৎপাদন হয়, তাদের সাথে বাংলাদেশ গিয়ে কথা বলবে। সেখান থেকে সুতা নিয়ে আসবে। আমাদের পোশাক শিল্প আরও সম্প্রসারিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘৩৫ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একটা ভারসাম্যের জন্য বাংলাদেশ ২৫টা বোয়িং বিমান কিনবে। এত বোয়িং বিমান আমরা রাখবো কোথায়? কিন্তু আপনারা যুদ্ধ বিমান কেনন না কেন? আমার সার্বভৌমত্বের ওপর তো অনেক সময় চাপ আসে নানা দিক থেকে। আপনি দুই তিনটা বোয়িং কেনেন অসুবিধা নেই, কিন্তু যুদ্ধ বিমান কেনেন। যত বেশি পারা যায় কেনেন। আপানি আপনার সামরিক সরঞ্জাম বৃদ্ধি করুন এবং সামরিক বাহিনী- স্থল, নৌ ও বিমান তিনটাই আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। আমরা একটা শক্তিশালী জাতি হতে চাই। আমরা নতজানু জাতি হতে চাই না।’
রাজনীতির বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘মানবসেবা দিয়েই রাজনীতি করতে হবে। আমি ‘অডাসিটি অব হোপ’ নামে বারাক ওবামার একটা বই পড়েছিলাম। তার রাজনৈতিক উত্থান কীভাবে সেটা এখানে লেখা আছে। তুষার ঝড়ে সিকাগোতে কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে গেলে ফ্রিজের দুধ নষ্ট হয়ে যায়, বাইসাইকেলে করে ওবামা বাড়িতে বাড়িতে দুধ পৌঁছাতেন; যাতে শিশুরা দুধ থেকে বঞ্চিত না হয়। সমাজ সেবার মাধ্যমেই তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন, তাও একজন কালো মানুষ।’
তিনি ডেঙ্গু নিয়ে বলেন, ‘যেখান থেকে ডেঙ্গুর উৎস সেখান থেকে কাজ করতে হবে। তা না করে, শেখ হাসিনার মতো শুধু বাজেট, টাকা নিয়ে আসা, ওষুধ কেনা, কিন্তু সেই ওষুধ আর গোডউনে নেই, সেই ওষুধ মেয়র তাপসের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি। আজকের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেটা মানুষ প্রত্যাশা করেছে, সেই কাজগুলো হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘মানবসেবার মহৎ দায়িত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে। আর গণতন্ত্র যাতে আর কখনোই বিঘ্নিত না হয়, রাস্তার মধ্যে মুখ থুবড়ে না পড়ে। এ জন্য যে সংস্কারগুলো করা দরকার, সেই সংস্কারের প্রতি সবাই সমর্থন দিচ্ছে। এ নিয়ে তো আর কথা বলার দরকার নেই। কিন্তু এটার কথা বলে নির্বাচন প্রলম্বিত করা, গণতন্ত্র যদি মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হবে কেন?’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রশাসন কেন নির্বিকার। আজকে এআই-এর মাধ্যমে নানা প্রচার চলছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল কিছু লোককে এ ব্যাপারে নিয়োজিত করেছে। কিন্তু আজকে তো থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে। আজকের ছবিতে দেখলাম কায়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তারা মুখ ঢেকে ঢেকে যাচ্ছে। এগুলো কাউকে বলতে হয় না। বলবেন, যারা অন্যায় করছে তাদের ধরুন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন কাজ করুক নিরপেক্ষভাবে। পুলিশ প্রশাসন আমরা বলার পরও চাঁদাবাজদের ধরেনি। আমরা বলার পরও দখলদারদের ধরেনি। কেমন যেন একটা ঢিলেঢালা ভাব। কেন? এ ব্যাপারে দল থেকে বারবার বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নামে কেউ যদি অন্যায়, অপকর্ম করে আমরা ঢালাওভাবে বলেছি, আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বলার আগে পুলিশ যদি জানতে পারে তাহলে ব্যবস্থা নিন, এ ব্যাপারে কেউ আপনাদের বাধা দেবে না। তবে অন্যায় যেন না হয়।’
রিজভী বলেন, ‘অনেক সময় এটাও দেখি পুলিশ নানা স্বার্থে অনেক ভালো মানুষকে ফাঁসায়। এমন কাজ করবেন না। কিন্তু কেউ দোকানে চাঁদার জন্য হুমকি দিচ্ছে, এমন হলে ধরুন। আমি নিজে দেখেছি, বিএনপির নাম করে রাজধানীতে ফলের দোকানে চাঁদা চাচ্ছে। আমি বললাম কেউ আসলে আমাকে জানাবেন, এরপর আর আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন যদি দোকানদারদের বলে কোনো চাঁদাবাজ আসলে আমাদের সাথে সাথে খবর দেবেন, আমরা তাদের ধরবো। তার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন। প্রশাসন যত গতিশীল হবে মানুষ ততো স্বস্তিতে থাকবে। মানুষ যতো নিরাপদে থাকবে সরকার তত শক্তিশালী হবে।’