অস্কারজয়ী ডকুমেন্টারি নো আদার ল্যান্ড-এর সঙ্গে যুক্ত ফিলিস্তিনি কর্মী ও শিক্ষক ওদাহ মুহাম্মাদ হাদালিনকে গুলি করে হত্যা করেছে এক ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। ঘটনাটি ঘটেছে হেবরনের কাছে অবস্থিত দখলকৃত পশ্চিম তীরের মাসাফার ইয়াত্তার উম আল-খায়র গ্রামে। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় কর্মকর্তারা ও সাংবাদিকদের বরাতে জানা যায়, হাদালিন ছিলেন একজন সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলার বিরুদ্ধে নিজের কমিউনিটির পক্ষে সংগ্রাম করে আসছিলেন।
ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “উম আল-খায়র গ্রামে বসতি স্থাপনকারীদের হামলার সময় ওদাহ হাদালিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।”
নো আদার ল্যান্ড ডকুমেন্টারির সহ-পরিচালক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক বাসেল আদরা এবং ইসরায়েলি সাংবাদিক ইউভাল আব্রাহাম নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাদালিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আদরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “আজ সন্ধ্যায় আমার প্রিয় বন্ধু ওদাহকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তার গ্রামের কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন এক বসতি স্থাপনকারী গুলি চালায় এবং গুলি তার বুক ভেদ করে প্রাণ কেড়ে নেয়।”
আব্রাহাম বলেন, “ওদাহ ছিলেন একজন অসাধারণ কর্মী, যিনি নো আদার ল্যান্ড ডকুমেন্টারির নির্মাণে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।”
তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন যেখানে দেখা যায় একজন ব্যক্তি এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ছে। আব্রাহাম দাবি করেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত বসতি স্থাপনকারী ইইনন লেভি, যিনি এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত।
ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তারা “আল-কারমিল” এলাকার কাছে একটি ঘটনার তদন্ত করছে এবং একজন ইসরায়েলি নাগরিককে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, তারা জানায় চারজন ফিলিস্তিনি ও দুইজন বিদেশি পর্যটককে আটক করা হয়েছে। তবে নিহত ফিলিস্তিনি “ঘটনার সাথে কিভাবে জড়িত ছিলেন” তা এখনো যাচাই করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, ওই হামলায় আরেকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন, যাকে এক বসতি স্থাপনকারী মারধর করে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাদালিন এমন এক অঞ্চলের বাসিন্দা, যেটি ইসরায়েল "ফায়ারিং জোন" বা সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। মাসাফার ইয়াত্তার গ্রামের বাসিন্দারা বহু বছর ধরে ইসরায়েলি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। সেই সংগ্রামের চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে নো আদার ল্যান্ড ডকুমেন্টারিতে, যা চলতি বছরের মার্চে অস্কারে সেরা ডকুমেন্টারির পুরস্কার পায়।
এই হত্যাকাণ্ড এমন সময় ঘটলো, যখন ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বিটসেলেম এক প্রতিবেদনে জানায়— গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। সংস্থাটি জানায়, “প্রতিদিনই সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে—যেখানে অগ্নিসংযোগ, চুরি, বাড়ি দখল, অস্ত্রের মুখে হুমকি ও মারধরের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব হামলা ইসরায়েল সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায়ই ঘটছে।”
বর্তমানে পশ্চিম তীরে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনির সঙ্গে বসবাস করছে প্রায় ৫ লাখ ইসরায়েলি, যারা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বসতিতে বসবাস করছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ১,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি ইসরায়েলি, যাদের মধ্যে বেসামরিক ও সেনা সদস্যও রয়েছেন।