ক্রয়ক্ষমতা সামান্য বাড়লেও প্রকৃত আয় এখনো নেতিবাচক

Commenti · 2 Visualizzazioni

মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মজুরি ও পণ্যমূল্যের ব্যবধান আরো হ্রাস পে??

বাংলাদেশ ব্যাংকের 'বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির গতি' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এটি কিছুটা কম হলেও এখনো তা স্বস্তিদায়ক নয়। একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান রয়ে গেছে, যদিও তা আগের চেয়ে কিছুটা সংকুচিত হয়েছে।

 

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মজুরি হার সূচক (ডব্লিউআরআই) অনুসারে, জুন মাসেও দেশের গড় প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল। টানা ৪১ মাস ধরে এই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে। জুনে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, যেখানে একই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির তুলনায় ০.৩০ শতাংশ কম।

 

এর আগের মাস মে-তেও একই চিত্র দেখা গেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত মিলিয়ে ৬৩টি পেশায় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা ওই সময়ের মূল্যস্ফীতির চেয়ে ০.৮৪ শতাংশ পয়েন্ট কম।

 

 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি যা অর্থবছরের প্রথমার্ধ জুড়ে দুই অঙ্কে ছিল, তা ধীরে ধীরে কমে জুন শেষে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। চাল, গমসহ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ছিল এই প্রান্তিকে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির প্রধান কারন, যার অবদান ছিল ৪৩ দশমিক ৭শতাংশ, সাম্প্রতিক সময়ে যা সর্বোচ্চ।

 

অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি, প্রান্তিকভিত্তিতে গড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে পোশাক, জুতা ও গৃহস্থালি জ্বালানির দাম ছিল সবচেয়ে বেশি বাড়তি।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়, খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে হিসাব করা 'কোর ইনফ্লেশন' (মূলে মূল্যস্ফীতি) ছিল ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ২ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। এর অর্থ হলো, খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও অন্যান্য খাতে চাপ রয়ে গেছে।

 

চতুর্থ প্রান্তিকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে খাদ্যপণ্যের অবদান ছিল ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমেছে। জ্বালানি খাতের অবদান প্রায় একই থেকে গেছে, উভয় প্রান্তিকে গড়ে ৯ শতাংশের মতো।

 

পচনশীল পণ্যের মূল্যস্ফীতিতে অবদান কিছুটা কমে হয়েছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, আগের প্রান্তিকে যা ছিল ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, শাকসবজি ও মাছের দাম কিছুটা কমেছে। অপরদিকে, অপচনশীল পণ্যের অবদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৫০ শতাংশ। সেবা খাতের মূল্যস্ফীতিতে অবদানও সামান্য বেড়েছে, ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশে।

 

মাসওয়ারি হিসেবে, জুনে মূল্যস্ফীতি ০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে মে মাসে তা ০ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছিল। খাদ্যপণ্যে জুনে মাসিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১ শতাংশ, মে-তে যা ছিল ঋণাত্মক ১ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মে ও জুন উভয় মাসেই মাসিক মূল্যস্ফীতি ইতিবাচক ছিল ০ দশমিক ৩ শতাংশ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিশ্লেষণ এমন সময় এলো যখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি ধীরে কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০২৫ সালের এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ হতে পারে। তবে অনুকূল আবহাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য হ্রাস ও কঠোর নীতিমালার কারণে পরবর্তী অর্থবছরে কিছুটা কমবে।

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) 'বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস' প্রতিবেদনে বলেছে, বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতিতে কমবে। তবে স্বল্পআয় ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা কিছুটা দ্রুত হতে পারে।

 

আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ হতে পারে, যা ধীরে ধীরে কমে পরবর্তী বছরগুলোতে ৫ শতাংশে নামতে পারে।

 

ইত্তেফাক/এমএএম

Commenti