খালেদা জিয়া হলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্রপ্রহরী

Commenti · 21 Visualizzazioni

যেকোনো দেশ, জাতি ও ব্যক্তির জন্য শতাব্দীর শুরুর সময়টায় অনেক কিছুই অর্জনের থাকে। একবিংশ শতাব্দীর পঁচিশ বছর অত??

যেকোনো দেশ, জাতি ও ব্যক্তির জন্য শতাব্দীর শুরুর সময়টায় অনেক কিছুই অর্জনের থাকে। একবিংশ শতাব্দীর পঁচিশ বছর অতিক্রমের পরও বাংলাদেশের অর্জন সামান্যই। এতটাই সামান্য, যা খালি চোখে খুঁজে পাওয়া কঠিন। অথচ শতাব্দী শুরুর সময়ের অর্জনগুলো পরবর্তীতে সময়টার অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হিসেবে থাকে। তাই এ কথা বলাই চলে, আমরা এক নয়া শতাব্দীর বাসিন্দা। এই সময়ে ভালো ও সুন্দরের সপক্ষে অবস্থান নেওয়া কঠিন হলেও নিজেকে চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার সময় এটাই। যেখানে মানুষ ও মানবতার পক্ষে স্লোগান থাকবে। মানুষ ছাড়া এই পৃথিবীর কোনো মূল্য ছিল না।

ভবিষ্যতেও থাকবে না। তাই পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করতে প্রয়োজন সত্যিকারের ব্যক্তি। যারা ওপরের দিকে তাকিয়ে শুকরিয়া হবে, আবার নিচে তাকিয়ে বিপদগ্রস্তের মাথায় হাত রাখবে, সুখে-দুঃখে কথা বলবে, সত্য আর সুন্দরকে তুলে ধরতে জীবন বাজি রাখবে, যিনি এমনটা করবেন তিনিই মূলত পৃথিবীর মহৎ ও মহান। প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক সমাজে কিছু ভালো ব্যক্তি আছে। ব্যক্তি ও মানুষের মধ্যে সূক্ষ্ম একটি তফাত হলো, মানুষ ব্যক্ত করতে না পারলেও ব্যক্তি ব্যক্ত করতে পারেন, তাই সব সময় ব্যক্তির গুরুত্ব আলাদা। সত্যিকারের মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তি শত সমস্যার ভেতরেও সত্যকে বুকে ধারণ ও লালন করেন।

ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করতে হাজার, লাখ এমনকি কোটি মানুষের আয়োজন পাওয়া গেলেও শান্তির পায়রা উড়াতে পাওয়া যাবে মুষ্টিমেয় কয়েকজন। এই কয়েকজনই গোটা সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর গোড়ায় পানি ঢালে। যুদ্ধের বিপক্ষে থাকে, বিপন্ন মানুষের পক্ষে কথা বলে।

পৃথিবীতে এমন মহান ব্যক্তির উদাহরণ কম নেই। নেলসন ম্যান্ডেলাকে আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা বলা হয়। কারণ তিনি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ অবসানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ম্যান্ডেলা গণতন্ত্র, বর্ণবাদ, জাতিগত সংহতি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে আফ্রিকায় সাম্যের প্রতীকে পরিণত হন। অথচ তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর রবেন আইল্যান্ড কারাভোগের পরও পর্বতসমান দৃঢ়তা ও নেতৃত্বের গুণে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে থাকার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেন।

1
জব্বার আল নাঈম

ভারতে অবিসংবাদিত নেতা ও পিতা হিসেবে মান্য করা হয় মহাত্মা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে। কারণ তাঁর ছিল অহিংসা ও সত্যের প্রতি অবিচল আস্থা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভারতের হয়ে তিনিই সব যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এ জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে কারান্তরিন হয়েছিলেন। দোষ ছিল, অহিংস আন্দোলন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি সত্যাগ্রহ ও আইন অমান্য আন্দোলন করেন। এমন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ব্রিটিশরা তাঁকে জেলে নিয়েও দমন করতে ব্যর্থ হয়। একটা পর্যায়ে গান্ধী হয়ে ওঠেন ভারতবাসীর মুক্তি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ফলাফল ভারত স্বাধীন হয়। আমেরিকার আব্রাহাম লিঙ্কন, জার্মানের অটো ভন বিসমার্ক, উইনস্টন চার্চিল, জোসিপ ব্রোজ টিটো, হো চি মিন কিংবা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অতন্দ্রপ্রহরী বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র যেন একে অপরের পরিপূরক। আসলে দেশ ও মানুষের মুক্তি যখন অবধারিত তখনই কিছু মহান ব্যক্তির আগমন ঘটে প্রত্যেক দেশ ও জাতির মধ্যে। নিঃসন্দেহে খালেদা জিয়া তাঁদের মধ্যে একজন।

০২.

বিগত সতেরো বছর বাংলাদেশের ছিল বিপর্যস্ত রাজনীতি! যেখানে নির্বিচারে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা (ক্রসফায়ার), বিচার হলেও তা ছিল প্রহসনের, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমন-পীড়ন, খুন, হামলা, মামলা সাধারণ ঘটনায় পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এমন অত্যাচার ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে কিছু দল সোচ্চার ভূমিকা পালন করলেও বিরোধী রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বলতে ছিল বিএনপি জোট। সঙ্গে ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি ও অন্যান্য ছোট ছোট দল। বিগত দিনে কমবেশি সব দলই ক্ষতির মুখোমুখি হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দলটির নাম বিএনপি! দলটির কর্মীদের দেওয়া হয়েছিল জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা তকমা। নেতা ও কর্মী নিঃশেষ করার জন্য অব্যাহত ছিল একের পর এক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। তবে রেকর্ড ক্রস ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

২০০৬-পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার জীবনে বয়ে গেছে ভয়ংকর সব টর্নেডো! হারিয়েছেন একের পর এক স্বজন। প্রত্যেক মানুষেরই কিছু আশ্রয়ের জায়গা থাকে, যাঁরা সুখে-দুঃখে সব সময় ছায়ার মতো পাশে থাকেন সেই বড় বোন খুরশীদ জাহান হক ২০০৬ সালে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশ্রয়ের নাম মা, সেই মমতাময়ী তৈয়বা মজুমদার ২০০৮ সালে, ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দার ২০১২ সালে, আর বুকের মানিক আদরের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ২০১৫ সালে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন! এত স্বজন হারানোর পরও রাষ্ট্র থেকে কোনো অনুকম্পা তো দূরের কথা, উল্টো ২০১০ সালে তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাড়তে হয়েছে ত্রিশ বছরেরও অধিক সময় বসবাস করা স্বামী ও সন্তানদের স্মৃতিচিহৃ বিজড়িত সেনানিবাসের মইনুল সড়কের বাড়িটি। ২০০৮ সালে একমাত্র পুত্র বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও নির্মম নির্যাতনের মুখে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়। সেই যাত্রায় তিনি জীবনে বেঁচে গেলেও রাজনৈতিকভাবে ধরাশায়ী করার সব কুচক্রান্ত অব্যাহত রাখল আওয়ামী লীগ।

তবু খালেদা জিয়া দেশ, গণতন্ত্র ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে রাজপথের লড়াই-সংগ্রামে সর্বাগ্রে সব সময় ছিলেন আপসহীন। লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার মানসে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে মাঠে ছিলেন পর্বতের মতো অনড়। হাসিনা সরকার আবারও নতুন ফাঁদ তৈরি করে, দেওয়া হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজা, পাঁচ বছরের জেল! তবু শোষক সরকারের কাছে মুক্তি না চেয়ে দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং জনগণের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে আদেশ দেন। শেষে বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই ফিরে আসবেন এবং জনগণের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁর আন্দোলন চলবে। সত্যি বলতে খালেদা জিয়া তবু আন্দোলন থামিয়ে দেননি। একহাতে লড়াইয়ের লাঠি আর অন্য হাতে গণতন্ত্রের প্রদীপ নিয়ে প্রতিদিন ছুটেছিলেন। দেশে গণতন্ত্রকে উদ্ধার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এতটুকুও ক্লান্তিবোধ করেননি।

যদি খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের ব্যাকরণ পাঠ করে-লোভের নৌকায় চড়ে ২০১৩ সালের একদলীয় নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট আর ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন মেনে নিতেন, তাহলে একদলীয় শাসন আজীবনের জন্য কায়েম হতো, জুলাই জাগরণ বাংলাদেশের জীবনে কখনোই আসত না, গণতন্ত্রও পুনরুজ্জীবন পেত না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করা, সেটা করার অর্থই বাঙালির অবিসংবাদিত নেত্রী এবং গণতন্ত্রের অতন্দ্রপ্রহরী বেগম খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের ময়দানে রাজকীয় সংবর্ধনা জানানোর সমান।

Commenti