চান্দা ভাই এখন সিডনি, শোনালেন নেট দুনিয়া জয়ের গল্প

Mga komento · 26 Mga view

রাকিব হাসান ও খাইরুল ইসলাম দুই ভাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘চান্দা ভাই’ নামে জনপ্রিয় রাকিব। ফেসবুক ও ইউটিউব?

রাকিব হাসান ও খাইরুল ইসলাম দুই ভাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘চান্দা ভাই’ নামে জনপ্রিয় রাকিব। ফেসবুক ও ইউটিউব—দুই প্ল্যাটফর্মেই ঘুরে বেড়ায় তাঁদের মজার মজার সব ভিডিও কনটেন্ট। ফেসবুক পেজে তাঁদের অনুসারী ৫০ লাখের বেশি, একেকটি ভিডিওর ভিউ কয়েক কোটি। একটি ভিডিও তো মাত্র ২৩ ঘণ্টায় দেখেছেন ২ কোটি ৮০ লাখ দর্শক! একটি চ্যারিটি কার্যক্রমে অংশ নিতে এবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হাজির হয়েছেন দুই ভাই। সেখানেই তাঁদের গল্প শুনলেন কাউসার খান

ইউটিউবে প্রথমে ‘ফ্যামিলি এন্টারটেইনমেন্ট বিডি’ নামে একটি চ্যানেল খোলেন খাইরুল ইসলাম। সেটা ছিল নিছক শখের বশে কিছু ভিডিও বানানোর চেষ্টা। বন্ধুবান্ধব মিলে তৈরি করা হতো মজার সব ভিডিও। দর্শকের সাড়াও ছিল খুবই সীমিত। ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চ্যানেলটি পুনরায় যাত্রা শুরু করে। রাকিব বলেন, ‘আমি গান গাইতাম, খাইরুল ভিডিও করত। নিজেরাই সেসব রেকর্ড করে চ্যানেলে দিতাম। কিন্তু খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। পরে মাথায় আসে—ভারতের সিআইডি সিরিজের মতো দেশীয় সংস্করণ বানানো যায় কি না। শুরু করলাম আমাদের বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় মাটির কাছাকাছি গল্প। আমি পরিচালনা করতাম, পরে অভিনয়ও শুরু করি। আস্তে আস্তে দর্শকসংখ্যা বাড়ে, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’

 
ইউটিউবের জগতে নামার আগে রাকিব খুলনার একটি হোটেলে ইভেন্ট ম্যানেজারের চাকরি করতেন। আর খাইরুল ইসলাম ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। রাকিব বলেন, ‘আমি ওকে বলি, তোর ভবিষ্যৎ এখানে না, ইউটিউবে। চাকরি ছেড়ে দে। ও আমার কথা শুনে চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর আমরা পুরোপুরি এই কাজেই মন দিলাম।’ বর্তমানে তাঁদের টিমে স্থায়ী সদস্য ১২ জন। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩২ জন কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের ভাষায়, ‘আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার, যার প্রত্যেক সদস্যের অবদানেই আজকের এ জায়গায় আসা সম্ভব হয়েছে।’

রাকিবদের বাড়ি খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায়। মা–বাবা দুজনই বরিশালের হলেও চাকরিসূত্রে এসেছিলেন খুলনায়। তিন ভাই, দুই বোনের পরিবারে ছোটবেলা কেটেছে রাকিব-খাইরুলের। মা সব সময় পাশে থেকেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। রাকিব বলেন, ‘আমার মা আমাদের শিখিয়েছেন—সঠিক পথে থেকো, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলো। এটাই আমাদের চলার মূলমন্ত্র।’

দেশ থেকে বিদেশ
শুটিং, পরিকল্পনা, সম্পাদনা—সবকিছুই এখনো খুলনা থেকেই পরিচালিত হয়। তবে কনটেন্টের প্রসার এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। সে সূত্রেই এবার তাঁরা গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ১৮ দিনের সফরে ঘুরছেন সিডনি, তাসমানিয়ার হোবার্ট ও মেলবোর্নে। শুধু ঘোরা নয়, সঙ্গে আছে নতুন শিখন আর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ।
রাকিব বলেন, ‘সিডনিতে এসে প্রযুক্তিনির্ভর জীবন দেখে অভিভূত হয়েছি। সবকিছু হয় কার্ড দিয়ে, হাতে নগদ টাকা দেখাই যায় না। মানুষ নিয়ম মেনে চলে। রাস্তায় কেউ অকারণে হর্ন বাজায় না। এই সংস্কৃতি যদি আমাদের দেশেও আসত, কত সুন্দর হতো।’ তাঁদের বিদেশ সফরের পেছনে রয়েছে একাধিক স্পনসরের সহযোগিতা। এমনকি একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসও তাঁদের সিডনি সফরে অংশীদার হয়েছে।

শুধু বিনোদন নয়, দায়িত্বও
এ সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে অংশগ্রহণ একটি চ্যারিটি কার্যক্রমে। আগামী ৬ আগস্ট সিডনিতে দুই দিনব্যাপী এক আয়োজনে অংশ নেবেন রাকিব ও খাইরুল।

রাকিব বলেন, ‘এই চ্যারিটির মাধ্যমে আমরা সমাজে একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়েই বড় কিছু গড়া যায়। সৃষ্টিকর্তা সহায় হলে ভবিষ্যতে দেশের জন্য আরও বড় কিছু করতে চাই।’ খাইরুল বলেন, ‘এ সফরে শুধু জায়গা ঘোরা নয়, মানুষের সঙ্গে সম্পর্কও তৈরি হচ্ছে। মেলবোর্নে আমাদের এক প্রবাসী বন্ধু স্বাগত জানাবেন, যিনি একসময় নিজেও কনটেন্ট বানাতেন। এমন আন্তসাংস্কৃতিক সম্পর্কগুলো আমাদের যাত্রাকে আরও অর্থবহ করে তুলছে।’
কনটেন্ট নির্মাতা পরিচয়ের পাশাপাশি রাকিব হাসান লেখালেখিও করেন। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই ‘বিনোদনের বারবিকিউ’। এতে হাস্যরসে মোড়ানো সামাজিক ছোটগল্প রয়েছে। রাকিব বলেন, ‘এই বই আমার ভালোবাসা, চিন্তা আর শ্রমের ফসল। যেমনভাবে ভিডিও কনটেন্ট বানাই, ঠিক তেমনি লেখালেখির মধ্যেও আমি নিজের ভাবনা তুলে ধরতে চাই।’

আমি শুধু বিনোদন দিতে চাই না, চাই আমাদের কাজ মানুষকে ভাবতে শেখাক, হাসতে শেখাক, নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে উৎসাহ দিক।
ফিরিয়ে দিতে চান সমাজকে
এই সফরের মাধ্যমে তাঁদের চোখে নতুন এক পৃথিবী ধরা দিয়েছে। প্রযুক্তি, শৃঙ্খলা, সংস্কৃতি—সবই নতুন শেখার সুযোগ তৈরি করেছে। তবে সবকিছুর শেষ কথা, তাঁরা যা পেয়েছেন, তা ফিরিয়ে দিতে চান সমাজকে। রাকিব বলেন, ‘আমি শুধু বিনোদন দিতে চাই না, চাই আমাদের কাজ মানুষকে ভাবতে শেখাক, হাসতে শেখাক, নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে উৎসাহ দিক।’ ‘আমরা ছোট ছোট পদক্ষেপে বিশ্বাস করি। সৃষ্টিকর্তা যদি সাহায্য করেন, তাহলে একদিন আমরা দেশের জন্য বৃহৎ কিছু করতে পারব।’
Mga komento