মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কারণে বাংলাদেশের জন্য তাৎক্ষণিক কোন বড় বিপদ নেই এমনটি বলা যাচ্ছে না। অনেকেই ধারণা করছেন বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি ছোটো ছোটো ভূমিকম্প হয়ে কেটে যাচ্ছে আবার অনেকে ধারণা করছেন এইসব ছোটো ভূমিকম্প এক মারাত্মক ভূমিকম্পের আভাসমাত্র।
কিছুদিন আগে মিয়ানমারে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যার কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক দূরে ছিলো এবং রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিলো ৭.২। এই ভূমিকম্প বাংলাদেশে সরাসরি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারেনি। তবে, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে, ডাউকি ফল্ট সহ বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার সেখানে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয় বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশ থেকে।
এইতো গত ৩১ জুলাই মিয়ানমারে একটি ছোটো ভূমিকম্প আঘাত হানলেও তার রেশ ঠিকই টের পায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল। ভূমিকম্পটি রাজধানীর আগারগাঁও থেকে ৪০৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আঘাত হানে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ভূমিকম্পটি মাটির ১২৫ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছিলো। আর গভীরে উৎপত্তি হওয়ায় দূরবর্তী এলাকায় কম্পন বেশি অনুভূত হয়।
মিয়ানমারের ওই ভূমিকম্পে ১৬০০ এর অধিক মানুষ প্রাণ হারান। তাহলে প্রশ্ন উঠছে জনবহুল বাংলাদেশে বড় কোনো ভূমিকম্প আঘাত হানলে এর কী পরিণাম হতে পারে।
ঢাকা শহর এমনিতেই খুব ঘনবসতি। ডোবানালা ভরাট করে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি। ঢাকায় যদি ৭ রিখটার স্কেলের একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। তাহলে ঢাকা শহর পরিণত হবে হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের মতো। দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষতাও আমরা অর্জন করতে পারিনি। বলা হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে প্রধান ৪টি ফল্ট রয়েছে, সেগুলোই মূলত ভূমিকম্পের মূল উৎস।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাউকি ফল্টে ১৮৯৭ সালে ৮.৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো। মধুপুর ফল্টে ১৮৮৫ সালে ৭ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হয়েছিলো। সীতাকুণ্ডু -মিয়ানমার ফল্টে অনেক আগে ১৭৬২ সালে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। আর আসাম-সিলেট ফল্টেও অতীতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিলো।
সাম্প্রতিক সময় প্রায়ই হালকা ভূমিকম্পের খবর ছাপা হচ্ছে। ভূমিকম্পের এসব প্রবণতাই আভাস দেয়, যেকোনো সময় একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি।
হাইতির ঘটনার পর প্রমাণিত হয় যে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ জনশক্তির কতো প্রয়োজন। দুর্বল ভবনের কারণেই হাইতির পোর্ট অব স্পেনে কোনো ভবনই আর দাঁড়িয়ে নেই। ঢাকার অবস্থা হবে এর চেয়েও ভয়াবহ, এমনটি মনে করছেন বিশেষজ্ঞটা। হাইতির ঘটনাবলী আমাদের জন্য একটি ‘ওয়েক আপ’ কল। দীর্ঘস্থায়ী তো বটেই, স্বল্পস্থায়ী একটি পরিকল্পনা নেওয়া খুবই জরুরি।