জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সংগীতশিল্পী মৌসুমী চৌধুরীর গাওয়া ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গানটি প্রেরণা জুগিয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি সামনে রেখে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো
মৌসুমী চৌধুরী: বিগত সরকারের আমলে আমরা কথা বলতে পারিনি। আমাদের কোনো বাক্স্বাধীনতা ছিল না। ফলে অনেক কিছু আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, বাক্স্বাধীনতা পেয়েও পাইনি। এখন হয়তো স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি, মুখটা আটকে ধরছে না কেউ, তবু আমরা স্বাধীন নই। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই যাচ্ছি।

মৌসুমী চৌধুরী: ১৬-১৭ বছর থেকেই আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু আমি ২০২২ সালে বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনে শামিল হয়েছি। গানটা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০২৩ সালে। গানটি লিখেছেন আমার গুরু ইথুন বাবু। রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে গানটি গেয়েছি, এরপর গানটি নিয়ে পুরো দেশে ঘুরেছি। স্বভাবতই ফ্যাসিস্ট সরকারকে নিয়ে গানটা করা। সে ক্ষেত্রে জীবনের বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলাম। যার কারণে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে।

কখন পালিয়ে থাকতে হয়েছে?
মৌসুমী চৌধুরী: ২০২২ সালের পর থেকে কয়েকবার পালিয়ে থাকতে হয়েছে। তবে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পালিয়ে ছিলাম। তখন অনেক হুমকি পেয়েছিলাম, বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছে। গ্রামের বাড়ি থেকেও অনেক হুমকি পেয়েছিলাম। আমি বলব, সেই সময় থেকে এখন অনেক ভালো আছি। আমরা আরও ভালো থাকতে চাই।
আপনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত?
মৌসুমী চৌধুরী: হ্যাঁ। আন্দোলনের প্রোগ্রামগুলো শুরুর পর মনে হয়েছিল, শুধু অস্ত্র ধরেই তো দেশের জন্য যুদ্ধ করা যায় না; গান, নাটিকা, আবৃত্তির মাধ্যমেও অনেক কিছু ফুটিয়ে তোলা যায়। যদি আমার কণ্ঠই অস্ত্র হয়, তাহলে কেন আমি পিছিয়ে থাকব। কেন আমি যুদ্ধ করব না? এর পর থেকে বিএনপির সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে গেছি। আমি কোনো পদ–পদবির আশায় কাজ করছি না। ভালোবেসে কাজ করছি। দেশের প্রতি ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করছি।
২০২২ সালের গানটা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্দোলনে সাড়া ফেলল...
মৌসুমী চৌধুরী: জুলাইয়ের আন্দোলনে গানটা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদের যখন মৃত্যু হয়, তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ ঝরে পড়ে গেলে, এই খারাপ লাগাটা অন্য রকম। তখন পল্টনে আমরা আন্দোলন করছিলাম। একটা কাজে আমি যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েছিলাম। ওখানে আন্দোলনে আমার গানটা গাইছিল। শুনে খুব ভালো লেগেছিল। ৩ আগস্ট রাতেও রামপুরায় ছিলাম আমরা। ওই দিন ‘ক্ষমতা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটা গানও ছেড়েছিলাম। ৫ আগস্ট ঘুম থেকে উঠেই আনন্দের খবরটা পেয়েছিলাম। আনন্দমিছিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
এই সপ্তাহে ‘এ যুদ্ধ কবে হবে শেষ’ শিরোনামে আরেকটি গান করেছেন। গানটি কোন তাড়না থেকে করলেন?
মৌসুমী চৌধুরী: কয়েক মাস ধরেই দেশ নানান ঝামেলা, মারামারির মধ্যে যাচ্ছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে গানটা করেছি।