বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি কমে প্রায় দুই হাজার ৪৫ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার ২৪৩ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় দুই হাজার ৭৩৮ কোটি ডলার। মূলত আমদানির তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে বাণিজ ঘাটতি কমেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্পখাতে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে, যা উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে ডলার সংকট কমে যাওয়ায় আমদানিতে আগের মতো কড়াকড়ি নেই। ছোট- বড় যে কোনো আমদানিকারক এখন ঘোষিত দরে ডলার পাচ্ছেন। ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ নিয়ে বিদেশে পাচার কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির টাকা বিদেশে নেওয়ার ওপর কড়াকড়ি চলছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিগত সরকারের সময় অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতিতে শীর্ষ সন্দেহভাজন ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদের বিষয়ে যৌথ তদন্ত চলছে। তাদের পাচার করা অর্থ ফেরত আনার তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। আবার আগের মতো এক রকম পণ্যের এলসি খুলে আরেক পণ্য আনার সুযোগও সীমিত হয়েছে। যে কারণে ডলার প্রবাহে উন্নতি হয়েছে। রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ বেড়েছে বলেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হুন্ডিপ্রবণতা কমে আসায় খোলাবাজারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলার দরে তেমন পার্থক্য নেই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ৬৪১ কোটি ডলার তথা ২৬ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়েছে। গত অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে চলতি হিসাবে ৬৫১ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে ৯ বছর পর চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে আড়াইশ কোটি ডলারের মতো উদ্বৃত্ত ছিল।
আর্থিক হিসাবে গত অর্থবছর শেষে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩২০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৪৫৫ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য ইতিবাচক হয়েছে। সব মিলিয়ে গত জুন শেষে সামগ্রিক লেনদেনে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩২৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যেখানে ঘাটতি ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর ঘাটতি হয় ৬৬৬ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ৯২৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতির কারণে জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। জুন শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের জুন থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে হিসাব প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের শর্ত মেনে গত মে মাসে বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর গত জুলাইতে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে ৩ টাকা ৪৫ পয়সা কমে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায় নামে।
ইত্তেফাক/এমএএম