মস্কো থেকে ৬০০ মাইল পূর্বে তাতারস্তান অঞ্চলে অবস্থিত আলাবুগা কারখানাটি ইরানি নকশার ‘শাহেদ-১৩৬’ আক্রমণাত্মক ড্রোন (রাশিয়ায় ‘গেরান’ নামে ডাকা হয়) ক্রমবর্ধমান হারে উৎপাদন করছে। এই প্রকল্পের প্রধান মনে করেন, এটি তাদের অন্যতম সাফল্য।
রাশিয়ার একটি টিভি ডকুমেন্টারিতে দেশের বৃহত্তম ড্রোন কারখানা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একজন রাশিয়ান সাংবাদিক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘অবশেষে এমন কিছু পেলাম যা আর কারও নেই। রাশিয়ার কোথাও এভাবে দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ড্রোন উৎপাদন করা হয় না।’
‘এটি একটি সম্পূর্ণ উৎপাদন সুবিধা, সিইও তিমুর শাগিভালিভ ডকুমেন্টারিতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে ড্রোনের বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ এখন স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়।
শাগিভালিভ আরও বলেন, ‘অ্যালুমিনিয়াম বার থেকে ইঞ্জিন তৈরি হয়, মাইক্রোইলেকট্রনিক্স তৈরি হয় ইলেকট্রিক চিপ থেকে, ফিউজলেজ তৈরি হয় কার্বন ফাইবার ও ফাইবারগ্লাস থেকে—এখানে সবই সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়।’
এই দাবি ইঙ্গিত দেয় যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ড্রোন যুদ্ধের মূল হাতিয়ার ইরানি নকশার শাহেদ ড্রোনের উৎপাদন এখন রাশিয়ার সামরিক শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, এখন ৯০% উৎপাদন আলাবুগা বা রাশিয়ার অন্যান্য কারখানায় হয়।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, এই স্থানটি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে—নতুন উৎপাদন ইউনিট ও কর্মী ড্রোন নির্মাণের মাধ্যমে উৎপাদন বহুগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সম্প্রসারণ রাশিয়াকে ইরান থেকে আমদানিকৃত ড্রোনের আধুনিক ও যুদ্ধ-পরীক্ষিত সংস্করণ রপ্তানির সুযোগ দেবে—এমনকি তেহরানকেও।
তবে একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র বলেছেন, শাহেদ-১৩৬-এর সম্পূর্ণ রুশীকরণ ও আলাবুগার সম্প্রসারণ ইরানকে প্রান্তিক করে দিয়েছে, যা মস্কো ও তেহরানের মধ্যকার সম্পর্কের ফাটল প্রকাশ করে। ইরান রাশিয়াকে শুধু ড্রোনই নয়, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েও খুব কম ফিরতি পেয়েছে, যা তাদের ধৈর্য্য হারাতে বাধ্য করেছে।
জুন মাসে ইসরায়েলের ১২ দিনের বোমাবর্ষণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি লক্ষ্য করা হলে রাশিয়ার নিশ্চুপ সমর্থন তেহরানের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। তেহরানভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশ্লেষক আলী আকবর দারেইনি বলেন, ‘ইরান হয়তো আশা করেছিল রাশিয়া আরও সাহায্য করবে, কিন্তু রাশিয়া কেবল নিজের স্বার্থেই কাজ করে।’
সূত্র: সিএনএন নিউজ।