ক্রাইম রিপোর্টার আর বাড়িওয়ালার মেয়ের গল্প

Reacties · 19 Uitzichten

ভালোবাসা আনন্দও দেয়, ব্যথাও দেয়। তবু মানুষ ভালোবাসে, ভালোবেসে দুঃখ পায়। সম্পর্ক যখন কুঁড়ি থেকে ফুলে রূপ নেয়, ত??

ভালোবাসা আনন্দও দেয়, ব্যথাও দেয়। তবু মানুষ ভালোবাসে, ভালোবেসে দুঃখ পায়। সম্পর্ক যখন কুঁড়ি থেকে ফুলে রূপ নেয়, তখন নানা পরীক্ষায় পড়তে হয়। ঠিক এই আবহই ধরা দিয়েছে পরিচালক মুরসালিন শুভর নাটক ‘দেরি করে আসবেন’-এ। জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, সাদিয়া আয়মান, সমু চৌধুরীসহ অভিনয়শিল্পীরা নাটকটি ৩১ জুলাই ক্যাপিটাল ড্রামা ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত করেছেন। মুক্তির পর থেকে চার মিলিয়নের কাছাকাছি ভিউ ও দর্শকের প্রশংসায় ভাসছে নাটকটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও ভাসছে নানা দৃশ্য।

আজ শনিবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইউটিউবে নাটকটির ভিউ চার মিলিয়ন পেরিয়ে গেছে। উচ্ছ্বসিত হয়ে নাটকটি দর্শক যেমন দেখছেন, তেমনি অনুভূতির কথাও লিখছেন মন্তব্যে। রনি রায় নামে এক দর্শক লিখেছেন, ‘আজ দেরি করে আসবেন কিন্তু; কথাগুলো বলার পর সাদিয়ার মুখের মৃদু হাসিটুকু অপূর্বর সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলী দর্শকের মনকে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে যায় মুহূর্তে। অসম্ভব সুন্দর নাটক।’ মেহেদী হাসান লিখেছেন, ‘সুন্দর নাটক, সাদিয়া আয়মান অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পরিণত। অপূর্ব তো অপূর্বই।’

‘দেরি করে আসবেন’ নাটকটি নিয়ে দর্শকের যে উচ্ছ্বাস তা কি কেবল ভালোবাসার বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলতে পারার জন্য? আদতে কী আছে নাটকটিতে, মুগ্ধতা নিয়ে কেন দেখছেন দর্শক?

‘দেরি করে আসবেন’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে
‘দেরি করে আসবেন’ নাটকের দৃশ্য। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

ব্যাচেলর জীবন বড় রহস্যময়, কাঁটায় ভরা, যন্ত্রণায় ভরা। ঢাকা শহর, শুধু ঢাকা শহরই–বা বলছি কেন, যেকোনো শহরে একজন ব্যাচেলরের প্রথম প্রতিবন্ধকতা থাকার জন্য ভালো বাড়ি খুঁজে পাওয়া। বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা ব্যাচেলরদের ভাড়া দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। তাই এর বিপরীত চিত্র দেখলেই ভীষণ ভালো লাগায় মন ভরে যায়। নাটকটির শুরুই হয়েছে অভিক নামের একজন ব্যাচেলরকে সাধারণ কিছু শর্ত দিয়ে খুশিমনে ছাদের ঘর ভাড়া দেওয়ার দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। যা ভালো লাগা তৈরি করেছে।

হ্যাঁ, ঠিক ভাবছেন, ভাড়াটে অভিক এই গল্পের নায়ক। চরিত্রটিকে পর্দায় প্রাণ দিয়েছেন বড় ছেলেখ্যাত অভিনেতা অপূর্ব। নাটকটিতে পেশায় তিনি সাংবাদিক। একটি দৈনিকে ক্রাইম বিটে কাজ করেন। যদিও নাটকে সাংবাদিকতার বিষয়টা স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলায় যত্নের যথেষ্ট কমতি আছে। তারপরও প্রসঙ্গক্রমে সত্যি লিখতে না পারলে একজন প্রকৃত সৎ সাংবাদিকের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়, সেই আক্ষেপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা দেখা গেছে। পাশাপাশি সমাজে ভিকটিমের ওপর দোষ চাপানোর যে প্রবণতা, বিষয়টিও উঠে এসেছে।

‘দেরি করে আসবেন’ নাটকের পোস্টার থেকে। নির্মাতার ফেসবুক থেকে
‘দেরি করে আসবেন’ নাটকের পোস্টার থেকে। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

কিন্তু প্রেম, ভালোবাসা? বাড়িওয়ালার মেয়ে কানন। চরিত্রটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন সাদিয়া আয়মান। কাননের সঙ্গে ভাড়াটে অভিকের প্রেম? বাড়িওয়ালার মেয়ের সঙ্গে ভাড়াটের প্রেমের গল্পের অগণিত নাটক ইতিপূর্বে হয়েছে, ভবিষ্যতেও আরও হবে। কিন্তু ‘দেরি করে আসবেন’ নাটকটির ভিন্নতা আসলে কোথায়? গল্প–ভাবনা গতানুগতিক মনে হলেও উপস্থাপনে ভিন্নতা ও নান্দনিকতা আছে। উপস্থাপন বেশ অন্য রকম, অনেক সুন্দর।

বাস্তবে যেমন ঘটে আরকি, কারও প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয় ধীরে ধীরে। আবার কারও কারও জীবনে ভালো লাগার ব্যাপারটা ঘটে আকস্মিক। কাননের সঙ্গে সেই অর্থে অভিকের পরিচয় ছিল না। অভিক প্রায়ই বাসায় ফিরতে রাত হয়। এগারোটায় বাসার গেট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কাননের বাবা ভালো মানুষ। কোনো বাগ্‌বিতন্ডা ছাড়াই অভিক এসে ফোন করলে গেট খুলে দেন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কাননের বাবার পা মচকে যায়। তখন বাধ্য হয়েই প্রথম দিন গেট খুলে দেয় কানন। সেদিনই কাননের সঙ্গে অভিকের আনুষ্ঠানিক পরিচয়। গেট খুলে দেওয়ার সুবিধার্থে মোবাইল নম্বর দেওয়া–নেওয়া। তারপর দিন যেতে যেতে অভিক তার প্রতি কাননের যত্ন টের পায়। জানতে পারে তার মতো কাননও কবিতা ভালোবাসে। বই পড়ে। এর মধ্যে একদিন অভিকের জ্বর হলে, কানন নিজে গিয়ে থার্মোমিটার, ওষুধ দিয়ে আসে। জীবনে যে কখনো ভালোবাসা পায়নি, তার কাছে এই যত্ন পরম পাওয়া। অভিক ধরেই নেয় কানন তাকে পছন্দ করে। ক্রমে ক্রমে কাননের মায়ায় আটকে যায়। নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে কাননকে। অন্যদিকে অভিকের আগ্রহ টের পেতেই কানন নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়। একদিন বেলিফুলের গাছ কিনে কানন বাড়ি ফিরছিল। অভিক তাকে নিজের বাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বললে কানন ফিরিয়ে দেয়।
তারপর অভিক একদিন ফোন করে বলে, বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসি আপনার জন্যে? কানন ‘না’ বলে। অভিকের উৎসাহ, আশা স্তিমিত হয়ে যায়। অভিক ধরেই নেয় কাননের সঙ্গে তার কিছু সম্ভব নয়। কাননের বাবাও সুস্থ হয়ে ওঠেন। কাননকে আর অভিকে গেট খুলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু হঠাৎ করেই গল্প মোড় নেয় অন্যদিকে।

অভিকের চরিত্রে অপূর্বর অভিনয় ছিল সাবলীল, সুন্দর। একজন ব্যাচেলর সংবাদকর্মীর জীবনকে অভিনয়দক্ষতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে কার্পণ্য করেননি তিনি। সাদিয়া আয়মানও নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ‘কানন’ চরিত্রটিকে প্রাণ দিয়েছেন। বিশেষ করে, কাননের কণ্ঠে সাদিয়া যখন বলেন, ‘ফুল ফোটার জন্যে বসন্তের অপেক্ষা করতে হয়। সময়ের আগে কিছু ফোটে না।’ তখন এক অন্য রকম ভালো লাগার রেশ বয়ে যায়। কথাটা যেন সব প্রেমিকের জন্য, পৃথিবীর সব ভালোবাসার মানুষের জন্য একটা দৃষ্টিপাত, একটা পরামর্শ রেখে যায়।

কানন আর অভিকের গল্প  শেষ পর্যন্ত কীভাবে সমাপ্তির দিকে এগিয়েছে, কেউ কেউ নাটকটি দেখে জীবনে কেন একজন ‘কাননে’র প্রত্যাশা করছেন জানতে দেখে নিন ‘দেরি করে আসবেন’ নাটকটি।

 

Reacties