বেকারত্বেও বাড়ছে অপরাধ

टिप्पणियाँ · 26 विचारों

শিল্পনগরী গাজীপুরে নতুন আতঙ্ক বেকার হওয়া শ্রমিক। তাদের অনেকে চুরি ছিনতাই ও প্রতারণার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়?

শিল্পনগরী গাজীপুরে নতুন আতঙ্ক বেকার হওয়া শ্রমিক। তাদের অনেকে চুরি ছিনতাই ও প্রতারণার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত ছয় মাসে শুধু গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে এক হাজার ৬০০ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে আট শতাধিক হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্ট ও অন্যান্য কারখানার বেকার শ্রমিক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকার সমস্যার সমাধান, যুবসমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করা, সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হলে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। একটি সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই গাজীপুরসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধপ্রবণ এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তাতে জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার সম্ভাবনা আবার তৈরি হবে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ-জিএমপির তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি গাজীপুরে অপরাধ বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ বেকারত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।

গাজীপুরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এলাকাটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য পেছন থেকে নৈরাজ্য সৃষ্টির ইন্ধন দেওয়ার তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু গাজীপুরেই গত এক বছরে ৭২টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানা বন্ধ করায় ৭৩ হাজারের মতো শ্রমিক বেকার হয়েছেন।

বেকারত্বের ফলে অনেকেই অপরাধের দিকে পা বাড়াচ্ছেন।  কল-কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত গাজীপুরের ৭২টি কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে নিজ নিজ কারখানা কর্তৃপক্ষ। গত ছয় মাসেই বন্ধ হয়েছে ২৯টি। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকোর ১৩টিসহ মাহমুদ জিন্স, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটিল ফ্যাশন, ক্লাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলসসহ বিজিএমইএভুক্ত বড় ২০টি প্রতিষ্ঠানও। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, কারখানা বন্ধ হওয়ায় জেলায় বেকার হয়েছেন প্রায় ৭৩ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। তাদের অনেকে কাজ না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন, আবার অনেকে জড়াচ্ছেন অপরাধে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান গতকাল সন্ধ্যায় জানান, বেকার শ্রমিকদের বিভিন্ন অপরাধে জড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। গত ছয় মাসে গাজীপুর মহানগর এলাকা থেকে এক হাজার ৬০০ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫০ শতাংশই বেকার হওয়া লোকজন রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ নির্মূল করা কঠিন। জনগণের সহায়তা লাগবে।’

এ ছাড়া গাজীপুর মহানগর পুলিশে লোকবল স্বল্পতার কথাও জানায় পুলিশ। তা অপরাধ দমনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পর্যাপ্ত লোকবল এবং সরঞ্জামের অভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে সব জায়গায় র্কাযকরভাবে নজরদারি করা এবং অপরাধ প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও গাজীপুরের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, ‘এসব অপরাধ কমাতে হলে বেকারদের আয়ের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তা না হলে অপরাধ দিন দিন আরো বাড়বে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর এলাকাটিতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় অনেকে মাদক কারবারেও ঝুঁকছে। গাজীপুর মহানগরের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন গতকাল বলেন, মাদকাসক্ত টোকাই গ্রুপের কারণে চলাচল করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এদের ৫০০ টাকা দিয়েই এলাকায় ‘গ্যাঞ্জাম’ লাগানো যাচ্ছে। আর তাদের ব্যবহার করছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। গাজীপুরের অনেক বাসিন্দা নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি চিন্তা করে ঢাকায় বসবাস করছেন। তাঁর কথার সত্যতা মেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংগীতশিল্পীর কথায়। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি গাজীপুরে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ঢাকায় বসবাস শুরু করেছি। নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় এসেছি।’ তিনি জানান, গাজীপুরে শুধু যে এবারই একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা নয়। এর আগেও প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তী সময়ে মুক্তি পেয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়েছে। ফলে এলাকার মানুষ চোখের সামনে অপরাধের ঘটনা ঘটলেও প্রতিবাদের সাহস করে না। তিনি জানান, ২০১৯ সালে লিয়াকত হোসেন নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জড়িতদের শাস্তি হয়েছে এমন খবর পাইনি।

গাজীপুর শিল্প এলাকা হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিপুলসংখ্যক ভাসমান মানুষ বসবাস করে। জনসংখ্যার তুলনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের  অপ্রতুলতা এবং মহানগর ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায়, বিশেষ করে বস্তি এলাকাগুলোয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সহজে বিস্তার হচ্ছে। সেই তথ্যের সত্যতাও পাওয়া যায়। দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ছয়জনের বাড়ি পাঁচটি জেলায়। গ্রেপ্তারকৃত মিজান ওরফে কেটু মিজানের বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর গ্রামে। আলামিনের বাড়ি খুলনার সোনাডাঙ্গার ময়লাপোতা গ্রামে। পাবনার ফরিদপুরের সোনাহারা গ্রামে মো. স্বাধীনের বাড়ি, কুমিল্লার হোমনা থানার অনন্তপুর গ্রামে বাড়ি মো. শাহজালালের, ফয়সাল হাসানের বাড়ি পাবনার চাটমোহরে ও সুমন ওরফে সাব্বিরের বাড়ি শেরপুরের নকলার চিতলিয়া গ্রামে।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ১০৩টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর মহানগরে ৪১টি এবং জেলার পাঁচটি থানায় ৬০টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।  এই পরিসংখ্যানটি জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।

বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, গাজীপুরে অপরাধ বৃদ্ধির কারণগুলোর একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটা জটিল সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন। শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সমাজের সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানবিক সমাজ গঠনের জন্য আরো সোচ্চার হতে হবে।

टिप्पणियाँ
खोज