ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের ভাবনা

نظرات · 7 بازدیدها

দুর্বল পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের একীভূতকরণে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখার খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সপ্তাহ??

দুর্বল পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের একীভূতকরণে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখার খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অনিয়মে জর্জরিত এই ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানত জমা থাকবে নতুন ব্যাংকের আমানত হিসেবে।

অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতগুলো শেয়ারে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। একীভূত প্রক্রিয়ায় কর্মীদের নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গণহারে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে না। বিশেষ করে যাঁরা নিয়ম মেনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন এবং অনিয়মে জড়িত নন তাঁদের চাকরি সুরক্ষিত থাকবে।

তবে একই এলাকায় পাঁচ ব্যাংকের একাধিক শাখা থাকায় কিছু কর্মীকে হয়তো অন্যত্র সমন্বয় করতে হবে। নতুন ব্যাংককে গ্রামীণ এলাকায় প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঝুঁকি কমে। এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক—এই পাঁচটি ব্যাংককে এক করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের সম্মতি পাওয়ার পর একেবারে নতুন ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।

পরে নিবন্ধন করবে আরজেএসসি। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় চলবে। পরিচালনাগত দিক দেখাশোনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে নতুন ব্যাংকের কার্যালয় নেওয়ার আলোচনা চলছে। তিন থেকে পাঁচ বছর সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে এটি বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে। এ সময় আন্তর্জাতিক সংস্থা বা ভালো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে মালিকানায় যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আমানত শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। চাইলে তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে অর্থ তুলে নিতে পারবে।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসব ব্যাংক একীভূত করতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে সরকারের কাছ থেকে চাওয়া হবে। পাশাপাশি আমানত বীমা তহবিল থেকে আট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি অর্থ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি থেকে। এ জন্য তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে।

বর্তমানে আমানত বীমা তহবিলে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে এই অর্থ কেবল সরকারি ট্রেজারি বিল বা বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়। একীভূতকরণে অর্থ জোগাতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর সরকার একীভূতকরণের জন্য বাজেটে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, এসব ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাই (একিউআর) রিপোর্টের ভিত্তিতেই একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মে মাস থেকে এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি প্রস্তাবিত কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা এরই মধ্যে গভর্নরের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি শিগগিরই অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়ে চিঠি পাঠাবেন।

পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন প্রায় এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ খেলাপি। এ কারণে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সহায়তা ছাড়া এগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া বিশ্বের তুলনায় আলাদা। অন্য দেশে আর্থিক সংকটে একীভূতকরণ হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের লুটপাটের কারণে ব্যাংক মিশিয়ে নতুন ব্যাংক গঠনের ঘটনা বিরল। তবে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ এবং একজন যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া জরুরি। আমানতকারী ও কর্মীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

নতুন ব্যাংকের নাম নিয়েও চলছে আলোচনা। আলোচনায় রয়েছে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ ও ‘আল ফাতাহ ইসলামী ব্যাংক’ নাম দুটি। তবে এখনো কোনো নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই নাম নির্ধারণ করা হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন ব্যাংককে একটি বৃহৎ এসএমই ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমানত সংগ্রহ করে সেই অঞ্চলের মধ্যেই বিনিয়োগ করার নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। এতে প্রান্তিক অর্থনীতি সক্রিয় হবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

نظرات