এশিয়া কাপে কেমন হলো পাকিস্তান দল, আধুনিক ক্রিকেট খেলতে পারবে তো

注释 · 18 意见

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের স্ট্রাইক রেট। প্রায় নিরীহ স্ট্রাইক রেটের কারণেই তারা টি-ট

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের স্ট্রাইক রেট। প্রায় নিরীহ স্ট্রাইক রেটের কারণেই তারা টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছেন। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপেও পাকিস্তান দলে সুযোগ পাননি।

আশ্চর্যজনক বিষয়, এই দুই সাবেক অধিনায়ককে বাদ দিয়ে যাঁর হাতে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই সালমান আগার স্ট্রাইক রেট ১১৫.৮৫। পাকিস্তান ক্রিকেট বড়ই রহস্যময়!

তাহলে কেন বাদ পড়লেন বাবর ও রিজওয়ান? কোনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন? প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে বসে ষড়যন্ত্র খোঁজার দরকার নেই। ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাই খোঁজা যাক।

 

নেই বাবর ও রিজওয়ান, তাতে কী!

বাবর ও রিজওয়ানের বাদ পড়ার মূল কারণ হতে পারে তাদের ব্যাটিং অর্ডার। দুজনেই টি-টোয়েন্টিতে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেন। ওপেন করতেই বেশি পছন্দ করেন। দুজন ওপেন করলে তিনে খেলেন ফখর জামান। কখনো কখনো ফখরকে ওপেনিংয়ে ঠেলে নিজেরাও কেউ ৩ নম্বরে আসতেন। বাবর ও রিজওয়ান না থাকায় পাকিস্তান দলে টপ অর্ডারে খেলছেন সাইম আইয়ুব ও সাহিবজাদা ফারহান।

সাইমকে পাকিস্তানের ‘নেক্সট বিগ থিং’ বলে ধরা হয়। এখনো সেরাটা দিতে পারেননি। তবে সময়ও ফুরিয়ে যায়নি, বয়স মাত্র ২৩। ৩৬ টি–টোয়েন্টি খেলা বাঁহাতি ১৩৭.১৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ব্যাটটা ভালোই চালাতে পারেন।

সাইম–সাহিবজাদাতেই পাকিস্তানের ভরসা।
সাইম–সাহিবজাদাতেই পাকিস্তানের ভরসা।এএফপি

১৫ টি-টোয়েন্টি খেলা সাহিবজাদা ফারহানের স্ট্রাইক রেট ১২৭.০১। একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। সাহিবজাদার অভিষেক সেই ২০১৮ সালে। প্রথম ৬ বছরে ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র ৯টি। সব মিলিয়ে রান করেছিলেন ৮৬।

তবে ২৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার পুনর্জীবিত হয়েছে পিএসএলের আগে গত ১৪ মার্চে শুরু হওয়া ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে। সেই টুর্নামেন্টে তিনি করেন ৬০৫ রান। ৭ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন ৩টি, ফিফটি ২টি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ৭২ বলে অপরাজিত ১৬২।

৪০টি ছক্কায় টুর্নামেন্টে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৮৯.৬৫, আর গড়টা তো অবিশ্বাস্য—১২১। একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তিন সেঞ্চুরি করা পঞ্চম ক্রিকেটার ছিলেন সাহিবজাদা। ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান কত ছিল জানেন—২৮২। মানে সাহিবজাদার চেয়ে ৩২৩ রান কম।

সর্বশেষ ছয় ম্যাচের তিনটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন সাহিবজাদা।
সর্বশেষ ছয় ম্যাচের তিনটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন সাহিবজাদা।এএফপি

এমন অবিশ্বাস্য টুর্নামেন্ট কাটানোর পর পাকিস্তান সুপার লিগেও করেন সেঞ্চুরি। এভাবে আবার দলে আসেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এরপর পাকিস্তানের হয়ে তিনি ৬ ম্যাচ খেলে ফিফটি করেছেন তিনটিতে, এই তিন ম্যাচেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। বলা যায়, বাবর-রিজওয়ান ছাড়াই পাকিস্তানের টপ অর্ডার সেরা সময় কাটাচ্ছে।

হ্যাঁ, তাঁদের মতো ততটা ধারাবাহিক হয়তো কেউই হবেন না। তবে সাহিবজাদা, সাইম কিংবা ফখর যেদিন খেলবেন, সেদিন ম্যাচ জিতিয়ে আসার সামর্থ্য আছে তিনজনেরই। তিনজনই আধুনিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে পারেন মানে প্রথম বল থেকে চালিয়ে খেলার সামর্থ্য রাখেন।

 
আরও পড়ুন

সালমানকে টানছেন অন্যরা...

অধিনায়ক সালমানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে দেখছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সে কারণে স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তিনিই টি-টোয়েন্টি দলের নেতা। ব্যাটিং অর্ডারে তাঁকে পাকিস্তান জায়গা দিতে পারছেন মোহাম্মদ হারিস, হাসান নেওয়াজের জন্য। এই দুই ব্যাটসম্যান বেশ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন।

সালমানের অধীনে আধুনিক টি–টোয়েন্টি খেলছে পাকিস্তান।
সালমানের অধীনে আধুনিক টি–টোয়েন্টি খেলছে পাকিস্তান।এএফপি

গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হাসান তো ৪৪ বলে সেঞ্চুরিও করেছেন, যা পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম। পাকিস্তানের হয়ে ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১৭৫.৬৪। এমন স্ট্রাইক রেটই সব বলে দিচ্ছে। হারিস খুব একটা ধারাবাহিক নন, গড়টা ১৮–এর মতো। তবে তাঁর স্ট্রাইক রেটে ১৪৪.৮১। আর সালমানেরও দলের প্রয়োজনে কার্যকর ইনিংস খেলার সামর্থ্য আছে।

শেষ করবেন কারা

ফিনিশার হিসেবে পাকিস্তানের এশিয়া কাপের দলে আছেন খুশদিল শাহ, ফাহিম আশরাফ, হুসেইন তালাত ও মোহাম্মদ নেওয়াজ। চার অলরাউন্ডর একসঙ্গে একাদশে সুযোগ পাবেন না। তবে সবারই বিপদ সামলে বড় শট খেলার সামর্থ্য আছে। হুসেইন মিডল অর্ডারেও ব্যাটিং করতে পারেন।

ফাহিম ও নেওয়াজের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেটে ১৩০–এর বেশি। যদিও খুশদিলের বেশ কম, ১০৪.৬২। তবে সর্বশেষ বিপিএলে ৮ ম্যাচে ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে ২৯৮ রান করে পাকিস্তান দলে ফেরা খুশদিল এখন ইনিংস শেষ করতে পাকিস্তানের সেরা বিকল্প। হুসেইনের স্ট্রাইক রেটেও ১২০–এর নিচে। সব মিলিয়ে এখানে পাকিস্তানের প্রমাণিত পারফর্মার নেই। এটাই পাকিস্তানের অন্যতম বড় দুর্বলতা।

আছেন দুই কবজির স্পিনার...

বোলিংয়ে পাকিস্তানের ভরসার দুই নাম—আবরার আহমেদ ও সুফিয়ান মুকিম। এরাও যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় কোনো নাম, তা নয়। তবে দুজনেরই উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আছে। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান ১৩ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ২১টি। আবরারের উইকেট ১৪ ম্যাচে ১৭টি।

সাদামাটা পেস বোলিং

শাহিন শাহ আফ্রিদি আর আগের মতো নেই। নতুন বল হাতে নিলেই যে উইকেট পাবেন, সেটা এখন আর বলা যায় না। কোনোমতে জায়গাও পেয়েছেন এশিয়া কাপের দলে। একাদশেও জায়গা নিশ্চিত নয়। পাকিস্তানের ভরসার জায়গা হারিস রউফ। তবে পাকিস্তানের এই ফাস্ট বোলার অবশ্য অনেক দিন ধরেই বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপসহ নানা টুর্নামেন্ট খেলছেন। পাকিস্তানকে কোনো ট্রফি দিতে পারেননি।

আফ্রিদি কি হারিয়েই গেলেন?
আফ্রিদি কি হারিয়েই গেলেন?এএফপি

এ ছাড়া আছেন অভিজ্ঞ হাসান আলী। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে ৮ উইকেট নেওয়া পেসার সালমান মির্জাকে দলে রাখা হয়েছে। আছেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রও। ওয়াসিম অবশ্য ব্যাটিংটাও ভালো করেন। পাকিস্তানের পেস বোলিং লাইনআপও অনেকটাই গড়পড়তা। পাকিস্তান বলেই হয়তো এরপরও কিছুটা আশা রাখছেন দেশটির সমর্থকেরা।

পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ
সাহিবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, ফখর জামান, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটকিপার), সালমান আগা, হাসান নেওয়াজ, খুশদিল শাহ/মোহাম্মদ নেওয়াজ, আবরার আহমেদ/সুফিয়ান মুকিম, সালমান মির্জা, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলী।
注释