টাকার পেছনে ছুটলে এত দিনে আমার বাড়ি–গাড়ি থাকত

Kommentarer · 4 Visninger

মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমার মাধ্যমে আলোচনায় আসা নাজিফা তুষি অন্যদের তুলনায় খানিকটা ধীরগতিত

মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমার মাধ্যমে আলোচনায় আসা নাজিফা তুষি অন্যদের তুলনায় খানিকটা ধীরগতিতেই এগোচ্ছেন। তবে অল্প কাজেই তৈরি করেছেন আলাদা জায়গা। দুটি সিনেমা ও একটি ওয়েব সিরিজ শেষ করে এখন মনোযোগ নতুন ছবির প্রস্তুতিতে। সাম্প্রতিক কাজসহ অন্য নানা প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

 

প্রথম আলো : 

অনেকে বলেন, ব্যক্তি তুষি আর অভিনেত্রী তুষির সঙ্গে একদম মিল। এমন বলার কারণ কী?

 

 

নাজিফা তুষি: ব্যক্তিগত জীবনে আমি অনেকটাই বুঝেশুনে পা ফেলি, ধীরস্থিরভাবে। হুট করেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। সেটা আমার ক্যারিয়ারেও আছে। আমি শুরু থেকেই বাছবিচার করে কাজ করছি। একটি চিত্রনাট্য পেলাম আর ঝাঁপিয়ে পড়লাম, বিষয়টা এমন নয়। শুধু শুধু কাজের সংখ্যা বাড়াতে চাই না। দর্শক যদি কোনো কাজ গ্রহণই না করে, সেটা করে লাভ নেই। ব্যক্তিগত জীবনের মতোই ক্যারিয়ারে তাড়াহুড়া নেই।

 

প্রথম আলো : 

ধীরে চলার নীতি কবে থেকে নিয়েছেন?

 

 

নাজিফা তুষি: আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে। তখন নায়িকা চরিত্রের গতানুগতিক প্রেমের গল্পের প্রস্তাব আসছিল। বেশির ভাগ গল্পে একজন নায়কের সাপোর্টিভ ক্যারেক্টারের চরিত্রের প্রস্তাব পেতাম, যাকে নামমাত্র নায়িকা হিসেব দরকার। কিন্তু তথাকথিত বাংলা সিনেমার নায়িকা হতে চাইনি। ভালো চরিত্রের অপেক্ষা করেছি। সেই জায়গা থেকে দিনের পর দিন ক্যারিয়ারে ঝুঁকি নিয়েছি, ধৈর্য ধরেছি। আমার কিন্তু ধৈর্য ধারণের ফল হাওয়া। আমি জানতাম না আমার জীবনে হাওয়া আসবে। অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠব, সেটাও জানতাম না। এসবই ধীরে চলো নীতির ফল।

 

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো : 

কেন নায়িকা হতে চাননি?

 

 

 

নাজিফা তুষি: নায়িকা নয়, আমি নিজেকে অভিনেত্রী মনে করি। শুরুতে আমার গ্ল্যামারকে সেল করা বা শুধু সৌন্দর্য দেখে আমাকে কেউ ডাকুক, সেটা চাইনি। এ সিদ্ধান্তে আমি হারিয়ে যেতে পারতাম। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, কেউ মন থেকে চেষ্টা–পরিশ্রম করলে হারিয়ে যায় না। তবে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে হয়। কারণ, এটা দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠ নয়।

 

প্রথম আলো : 

‘আইসক্রিম’ সিনেমায় নাম লেখানোর ক্ষেত্রে কি তাড়াহুড়া ছিল না?

 

 

নাজিফা তুষি: আইসক্রিম সিনেমার সময় আমি একদমই ছোট, ১০ বছর আগের কথা। আমার প্রথম সিনেমা, তখন অনেক কিছুই বুঝিনি। প্রথম মনে হয়েছিল, আমি সিনেমায় ফোকাস করতে চাই, বড় পর্দার নায়িকা হব—এমন কোনো ফ্যাসিনেশন ছিল হয়তো। তখন ছোট ছিলাম, কী বুঝে সিনেমাটি করেছিলাম, জানি না। তবে আইসক্রিম আমার জীবনে না এলে অনেক কিছু হতো না। সিনেমাটি আমার জীবনের জন্য কখনোই খারাপ সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা করে পরে বুঝতে পেরেছি, আমার অনেক কিছু শেখার বাকি। তখন আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো। শিখতে শুরু করলাম। তারপর আমার জীবনে কাজে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিইনি।

 

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো : 

পেশাদার শিল্পী হিসেবে এত বেছে কাজ করতে গিয়ে কি আর্থিক সংকটে পড়তে হয় না?

 

 

নাজিফা তুষি: অবশ্যই, এটা আমাকে মেনে নিতেই হচ্ছে। আমি অর্থের পেছনে ছুটলে এত দিনে আমার বাড়ি–গাড়ি থাকত। আমার কাছে এটাই মনে হয়েছে, কোয়ালিটিটা বজায় রেখে কাজ করলে কোনো না কোনো দিন আগে–পরে অর্থ, সম্মান আসবেই। এখন সেটার ফল কিছুটা পাচ্ছি। কোনো ব্যান্ডের কাজ করলে সেখানে ভালো একটা সম্মানী থাকে। এখন অনেক গুণী নির্মাতা ভালো কাজে ডাকছেন। আস্তে আস্তে ভক্তদের মনে ঢুকছি, এটাও আমার কাছে আশীর্বাদ।

 

প্রথম আলো : 

আপনার সৌন্দর্যের সবচেয়ে ভালো প্রশংসা কার কাছ থেকে শুনেছেন?

 

 

নাজিফা তুষি: আমার সৌন্দর্যের কেউ প্রশংসা করে না (হাসি)। অডিয়েন্স প্রশংসা করে। আমাকে কেউ সামনাসামনি বলেনি আমি অনেক সুন্দর। এমনটা শুনিনি। তবে এটা বুঝতে পারি, কেউ সুন্দর বলতে চায়। এগুলো আমি মাথায় নিই না। কারণ, আমার কাছে মনে হয় না আমি অনেক সুন্দর। যতটা প্রেজেন্টেবল থাকা দরকার, ততটা আছি। আর সৌন্দর্যের শেষ নেই। কত সুন্দর সুন্দর মানুষ আছে পৃথিবীতে।

 

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো : 

আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে সৌন্দর্যকে কীভাবে দেখেন?

 

 

নাজিফা তুষি: একটা মানুষের কাজ, আচরণ বা ব্যক্তিত্ব সবার আগে আমাকে আকর্ষণ করে। একটা মানুষ কতটা মেধাবী, তার পরিশ্রমের ডেডিকেশন কতটা, আউট অব বিউটি থেকে ইনার বিউটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো তুলনা করতে চান? আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশের মেল অ্যাক্টরদের থেকে ফিমেল অ্যাক্টররা অনেক বেশি সুন্দর। কাজের জায়গায় এরা সৎ। আমাদের দেশের মেয়েরা শিক্ষায়, পরিশ্রমে, ডেডিকেশন, সততায় ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। আমরা যে সোসাইটি বিলং করি, সেখানে ছেলে অ্যাক্টররা অভিনয়ে, রেমুনারেশনে আমাদের ডমিনেট করে। ছেলেরা যে অনেক বেশি ডিসিপ্লিনড, তা নয়। যখন একটা ছেলের পরিচিতি বাড়ে, তখন সে পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেয়, ভালো চরিত্র পায়। কিন্তু একটা মেয়ের ক্ষেত্রে ভালো চরিত্র পাওয়া কঠিন। সব মিলিয়ে আমি ইন্ডাস্ট্রির ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের এগিয়ে রাখব।

 

প্রথম আলো : 

মেয়েদের মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখবেন?

 

 

নাজিফা তুষি: এখনো তো তাসনিয়া ফারিণ ভালো করছে। তানজিন তিশা পটেনশিয়াল আছে, সে মেধাবী শিল্পী, কিন্তু ব্যাটে–বলে হয়তো ওর সুযোগটা হচ্ছে না। তাসনুভা তিশাও ভালো, হয়তো সুযোগটা পাচ্ছে না। কিন্তু পাওয়া উচিত। সাদিয়া আয়মানও ভালো করছে। মেহজাবীন চৌধুরী, সাবিলা নূর, তারাও মেধাবী, সেই সুযোগও পেয়েছে। সবার নাম হয়তো এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু অনেকেই ভালো করছে।

 

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো : 

ক্যারিয়ারে ভালো করলে পেছন থেকে কেউ টেনে ধরার মতো কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে?

 

 

নাজিফা তুষি: এ অভিজ্ঞতা হরহামেশাই হয়। আমি ইন্ডাস্ট্রির মানুষের সঙ্গে কাজ ছাড়া তেমন মিশি না। আমার দুনিয়াটা অনেক ছোট। হাওয়া যখন হিট হয়, তখন মানুষ অনেক প্রশংসা করে। তখনো স্টারডম কী, আমি বুঝিনি। হাওয়ার পরই দর্শক আমাকে চেনা শুরু করে। তখন আমার নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেউ ভালো করলে পলিটিকস যদি বলেন, সেটা হয়। এই জিনিসটাই আমার পছন্দ নয়। কলিগরাই বাজে কথা বলে। অনেকেই অনেকের ব্র্যান্ডিং নষ্ট করার চেষ্টা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমাদের নারী শিল্পীদের মধ্য যদি বোঝাপড়া খুবই ভালো থাকে, তাহলে আমাদের জায়গা এগিয়ে যাবে, আরও শক্ত হবে। কারও পেছনে লেগে কয়বার তার ক্ষতি করা যায়? এক, দুই, তিনবার, কিন্তু সে যদি সৎ, ডিসিপ্লিন ওয়েতে থাকে, তাহলে তাকে দাবায়ে রাখা যায় না। যোগ্যতা থাকলে প্রকাশ পাবেই।

 

প্রথম আলো : 

টেনে ধরার মতো ঘটনা মাথা থেকে মুছে ফেলতে কী করেন?

 

 

নাজিফা তুষি: আমাকে অনেক রাইটার, পেইন্টার, সিঙ্গার, অ্যাক্টর অনুপ্রাণিত করে। নেচারও আমাকে ভালো থাকতে সহায়তা করে। আমার মা–বাবাও অনুপ্রাণিত করে। তারা সৎ এবং সময়ের মূল্য বোঝে। সেভাবেই তারা আমাকে বড় করেছে। সুতরাং সহজেই আমি হতাশ হই না।

 

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো : 

প্রচলিত একটা ধারণা, ‘পর্দায় বেশি থাকলেই জনপ্রিয়তা আসে।’ আপনার অভিজ্ঞতায় এ ধারণা কতটা সত্যি?

 

 

নাজিফা তুষি: ছোটবেলা থেকেই সবাই আমাকে বলেছে, বেশি বেশি পর্দায় থাকতে হবে, নইলে দর্শক আমাকে চিনবে না। সেখানে কিন্তু পর্দায় কম থেকেই একমাত্র হাওয়া সিনেমা দিয়েই টিকে আছি। তারকাখ্যাতি পেয়েছি। ওটিটির অল্প কিছু কাজের মধ্যে নেটওয়ার্কের বাইরে, সিন্ডিকেট কাজগুলো দিয়ে প্রশংসা পেয়েছি। পর্দায় বেশি সময় থাকতে হবে, এটা কখনোই ভাবি না।

 

প্রথম আলো : 

নির্মাতাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বোঝাপড়া কার সঙ্গে?

 

 

নাজিফা তুষি: আমার তো নূরুল আলম আতিক, মেজবাউর রহমান সুমন, সাদ, রায়হান রাফী ভাইসহ অনেকের সঙ্গেই বোঝাপড়া ভালো। কাজের জায়গা থেকেই সবার সঙ্গে সম্পর্ক। যাঁদের সঙ্গে একটু আগে থেকেই পরিচয় থাকে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তাঁদের নির্দেশনায় কিছুটা বেশি কমফোর্ট জোন পাই। সেখানে আমি সুমন ভাইয়ের কথা বলব। তাঁকে কিছুটা এগিয়ে রাখব।

 

প্রথম আলো : 

‘রইদ’, ‘রঙ্গমালা’, এরপর কী?

 

 

নাজিফা তুষি: অনেক আগে ‘রইদ’–এর শুটিং শেষ। এটা নিয়ে সামনে সুখবর আসবে। ‘রঙ্গমালা’র কিছু শুটিং বাকি রয়েছে। সেটা অক্টোবরে করব। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের একটি সিরিজ করেছি, সামনে আসবে। এখন নতুন আরেকটি কাজের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততা রয়েছে। কাজটি সম্পর্কে সময় হলেই জানাব। আরও কিছু কাজ রয়েছে। এগুলো পরপর এলেই মনে হবে, কত কাজ করি।

 

নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
নাজিফা তুষি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

 

Kommentarer