একজন ক্রিকেটার। ভারত জাতীয় দলে খেলেন, আইপিএলের তারকা। অন্যজন রাজনীতিবিদ। উত্তর প্রদেশের একটি আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে ভোটে জেতা সংসদ সদস্য। আইপিএলের তারকা রিংকু সিং আর ২৫ বছর বয়সেই সংসদে পৌঁছে যাওয়া প্রিয়া সরোজ গত জুনে বাগদান সেরেছেন। এ বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারার কথা।
২০২৩ আইপিএলে ম্যাচের শেষ পাঁচ বলে ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া রিংকু ও গত বছর সমাজবাদী পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য হওয়া প্রিয়া দুজনের বাড়িই ভারতের উত্তর প্রদেশে। তবে জেলা ভিন্ন। রিংকুর আলীগড়ে, প্রিয়ার বারানসিতে। অনেকের ধারণা, রিংকু তারকা হয়ে ওঠার পর অথবা প্রিয়া সংসদ সদস্য হওয়ার পরই হয়তো পারিবারিকভাবে অথবা প্রথমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে তাদের। তবে আসল ঘটনা ভিন্ন।
রিংকু ও প্রিয়ার মধ্যে প্রথম যোগাযোগ যখন হয়, দুজনের কেউই প্রতিষ্ঠিত নন। মানে রিংকু আইপিএলে তারকা বনেননি, ভারত ক্রিকেট দলে তো বহু দুর। আর প্রিয়াও সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াননি। এমনকি দুজনের পরিচয় কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানেও নয়, বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রেমও শুরু হয় পরিচয়ের কিছুদিন পরই।
আমি প্রিয়ার ছবি দেখলাম, ভালো লাগল। মনে হলো, হ্যাঁ, এই মেয়েটাই আমার জন্য পারফেক্ট। ভাবলাম, মেয়েটাকে মেসেজ করব। আবার ভাবলাম, না। এটা ঠিক হবে না।

সম্প্রতি নিউজ ২৪ স্পোর্টস নামের ইউটিউব চ্যানেলে ব্যক্তিগত ও ক্রিকেট জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রিংকু। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন প্রিয়ার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ, প্রেম এবং বিয়ে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েও।
সঞ্চালক দুজনের মধ্যে যোগাযোগের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে রিংকু বলেন, ‘এটা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে। করোনার মধ্যে আইপিএল চলছিল মুম্বাইয়ে। তো গল্পটা এ রকম ছিল— আমার একটা ফ্যান পেজ ছিল, ওখানে প্রিয়ার একটা ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। তার গ্রামে ভোট হচ্ছিল। কেউ হয়তো তাঁকে বলেছিল, ‘‘তোমার স্টোরি পোস্ট করব, এতে তোমার উপকার হবে।’’’
নিজের ফ্যান পেজে প্রিয়াকে প্রথম দেখার স্মৃতিচারণ করে রিংকু বলে চলেন, ‘প্রিয়ার এক বড় বোন আছে, তার একটা ব্যবসা আছে। তো সেটা নিয়েই স্টোরি পোস্ট করা হয়েছিল। তখন আমি প্রিয়ার ছবি দেখলাম, ভালো লাগল। মনে হলো, হ্যাঁ, এই মেয়েটাই আমার জন্য পারফেক্ট। ভাবলাম, মেয়েটাকে মেসেজ করব। আবার ভাবলাম, না। এটা ঠিক হবে না।’
এরপর কীভাবে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রিংকু বলেন, ‘তারপর দেখি সে আমার এক-দুটো ছবিতে লাইক দিল। হ্যাঁ, প্রথমে ও-ই লাইক করেছিল। তখন আমি তাকে ইনস্টাগ্রামে মেসেজ করি। সেখান থেকেই শুরু।’

রিংকু মেসেজ দেওয়ার কতক্ষণ পর প্রিয়া উত্তর দিয়েছিলেন প্রশ্ন করলে রিংকু বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গেই জবাব এসেছিল। আমরা কথা বলা শুরু করলাম। তারপর এক সপ্তাহ, দেড় সপ্তাহ পর থেকে নিয়মিত কথা বলতে শুরু করলাম। ম্যাচে যাওয়ার আগে কথা বলতাম, আর সেই প্রেমের অনুভূতি তৈরি হলো ২০২২ সালেই।’
প্রিয়ার পরিবার আগে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বাবা তুফান সরোজ তিনবারের সংসদ সদস্য। ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মাছলিশহর থেকে সমাজবাদী পার্টির হয়ে ভোটে দাঁড় করিয়ে দেন মেয়ে প্রিয়াকে। ভোটের ফলে দেখা যায়, বিজেপি প্রার্থী বিপি সরোজকে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন প্রিয়া। তাতে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হয়ে যান প্রিয়া।
প্রিয়ার নির্বাচনী ফল যখন প্রকাশ করা হয়, রিংকু তখন ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের ট্রাভেলিং রিজার্ভ সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে। সে সময়ের স্মৃতিচারণ রিংকুর কথায় উঠে এসেছে এভাবে—‘আমি তখন নিউইয়র্কে। মনে হয় ভোর ৪টা বাজে ওখানে, আর ভারতে ছিল রাত। তখনই তার ফলাফল বেরোল। এটা ছিল দারুণ আনন্দের বিষয় যে ২৫ বছর বয়সে একজন তরুণ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওর জন্য এটা বড় বিষয় ছিল। আর তার বাবা তাকে অনেক সহায়তা করেছিলেন।’

প্রিয়া সংসদ সদস্য হওয়ার পর তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখেছেন কি না প্রশ্নে রিংকু জানান, একটা ক্ষতি হয়েছে, ‘তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। তবে আগে আমরা সারা দিন কথা বলতাম। এখন ততটা হয় না। মানে, এখন অনেক কম হয় কারণ সে নিজের কাজ করে। গ্রামে ঘোরে, মানুষকে সাহায্য করে, সংসদে সেশন থাকে। এগুলোতে সে খুব ব্যস্ত। দিনে আমাদের কথা তেমন হয় না। রাতে কথা হয়।’
এ বছরের নভেম্বরে বিয়ে অনুষ্ঠান সেরে নেওয়ার কথা ভাবছেন রিংকু। যদিও দুজনের পারিপার্শ্বিক ব্যস্ততার ওপর নির্ভর করবে সব কিছু। যখনই হোক, বিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে কোথাও যাওয়ার চিন্তা রিংকু ও প্রিয়ার। তবে দুজনের পছন্দ দুই জায়গায়—‘দেখা যাক কোথায় করা যায়। প্রিয়া বলেছে সুইজারল্যান্ড, আর আমি চাই নরওয়ে যেতে। আমি অনেক ভ্লগ দেখি।নরওয়ে আমার কাছে খুব সুন্দর লেগেছে’—বললেন রিংকু।