বিদেশ সফরে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব: গাভাস্কার পড়েছিলেন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে

Komentar · 15 Tampilan

বিদেশ সফরে খেলার বাইরে ক্রিকেটারদের জীবনটা কেমন, কীভাবে কাটে তাঁদের সময়? অন্য দেশ, অন্য সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিত?

বিদেশ সফরে খেলার বাইরে ক্রিকেটারদের জীবনটা কেমন, কীভাবে কাটে তাঁদের সময়? অন্য দেশ, অন্য সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়েন তাঁরা? এ নিয়ে নিজের আত্মজীবনী ‘সানি ডেজ’-এ একটা অধ্যায় লিখেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। বিদেশ সফরে তিনি কীভাবে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন, লিখেছেন সেই গল্পও। তবে পড়ার সময় পাঠকদের মনে রাখতে হবে, ‘সানি ডেজ’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। গল্পগুলো সেই সময়ের। টেস্ট ক্রিকেটে ১০১২২ রানের মালিক গাভাস্কার পরে তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ার নিয়ে একাধিক আত্মজীবনীসহ লিখেছেন আরও অনেকগুলো বই।

কী লিখেছেন সুনীল গাভাস্কার

ক্রিকেটারদের একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়—বিদেশ সফরে কেমন কাটে? বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, বিদেশ সফর মানেই বুঝি শুধুই আনন্দ। কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্যি নয়। আনন্দ আছে, তবে এর পাশাপাশি কষ্টও কম নয়।

একটা নতুন দেশে গেলে প্রথম সমস্যাটাই হলো ভাষা আর খাবার। ভারতীয় দলের সবাই ভালোভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না, বুঝতেও পারে না। বিদেশি উচ্চারণের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতেই সফরের প্রায় অর্ধেকটা শেষ হয়ে যায়। যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাধারণ মানুষ যে ইংরেজিতে কথা বলে, সেটার ব্যাকরণ বলতে কিছু থাকে না। ওদের কথা বোঝা বেশ কঠিন।

 
আরও পড়ুন

খাবারও আরেকটা বড় সমস্যা। বিদেশের খাবার এতই বিস্বাদ যে ভারতীয় দলের ছেলেরা পেট ভরানোর মতো কিছু খুঁজে পায় না। দলের দক্ষিণ ভারতীয় খেলোয়াড়েরা ভাত খেতে চান, আর উত্তর ভারতীয়দের মন চায় মসলাদার খাবার। তবে ইংল্যান্ডে অনেক ভারতীয় রেস্তোরাঁ আছে, আর অনেক পরিবারও ক্রিকেটারদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়।

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড সফরে ভারতীয় পরিবারগুলো এত বেশি আপ্যায়ন করেছিল যে খেলোয়াড়েরা একপর্যায়ে নিউজিল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। নিউজিল্যান্ডে রেস্তোরাঁগুলো তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতীয় ছেলেরা ভাত খাওয়ার জন্য চাইনিজ রেস্তোরাঁয় যেত, উত্তর ভারতীয়দের খাবার শেষ হতো চিলি সসের বোতল খালি করে।

টেস্টে ব্যাটিং করছেন গাভাস্কার
টেস্টে ব্যাটিং করছেন গাভাস্কারবিসিসিআই

আবহাওয়াও আরেকটা ব্যাপার, যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক সময় লাগে। তবে উত্তর ভারতের খেলোয়াড়েরা ঠান্ডার সঙ্গে যতটা সহজে মানিয়ে নিতে পারে, পশ্চিম ও দক্ষিণের খেলোয়াড়দের জন্য তা কঠিন। কারণ, তাদের অঞ্চলে তেমন শীত পড়ে না। চারটা সোয়েটার পরে ক্রিকেট খেলা মোটেও আরামদায়ক নয়। হাত পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে যখন শেষ মুহূর্তে বল ধরা লাগে, তখন ক্যাচ হাতছাড়া হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি এমন কয়েকজন খেলোয়াড়কে চিনি, যারা বিদেশের ঠান্ডা আবহাওয়ার কথা ভেবে প্লেনেই ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলে!

 
আরও পড়ুন

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়াটাও মাঝে মাঝে ক্লান্তিকর মনে হয়। বিশেষ করে ইংল্যান্ডে এটা খুবই ঝামেলার। ম্যাচের শেষ সকালে খেলোয়াড়দের হোটেল ছাড়তে হয়, সন্ধ্যায় মাঠের বাইরে তাদের জন্য বাস অপেক্ষা করে। সেই বাসে করে তারা পরের ম্যাচের জন্য রওনা দেয়। কাউন্টিতে থাকা হয় মাত্র দুই দিন, তৃতীয় সকালে আবার রওনা। তাই অনেকেই স্যুটকেস খুলতেই চায় না। অনেক সময় তো নতুন কাউন্টিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়, আর রুম পেতে পেতে প্রায় ভোর।

১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আমরা সেন্ট কিটস থেকে ত্রিনিদাদে পৌঁছেছিলাম সকালে। তারপর ৪০ মাইল গাড়িতে করে গিয়ে আমাদের খেলতে যেতে হয়েছিল। সবাই তখনো প্রায় ঘুমে! ভাগ্য ভালো, অজিত ওয়াদেকার টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন। আমি আর অশোক মানকড় যখন ইনিংস ওপেন করতে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের বলা হয়েছিল—যতক্ষণ সম্ভব যেন ব্যাটিং করি, যাতে বাকিরা ঘুমাতে পারে। ৩ নম্বরে নামার কথা সেলিম দুরানির। তিনি আমাদের বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পারো ব্যাটিং করো, প্লিজ শট খেলো না! আমি নামলে প্যাড পরেই ঘুমিয়ে যাব।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং করছেন গাভাস্কার
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং করছেন গাভাস্কারইনস্টাগ্রাম

বাসে ভ্রমণ ক্লান্তিকর হলেও অনেক সময় খুব মজা হতো। খেলোয়াড়েরা মজা করে একজন অন্যজনের সাক্ষাৎকার নেয়। ফারুক ইঞ্জিনিয়ার প্রায়ই খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নিতেন, যার মধ্যে একনাথ সোলকারের সাক্ষাৎকার হতো সবচেয়ে হাস্যকর। হেড়ে গলায় গানও গাওয়া হতো। যারা তাসপ্রেমী, তারা দলের নতুনদের টাকাপয়সা হাতানোর সুযোগ খুঁজত।

আরও পড়ুন

সবচেয়ে সহজ মুম্বাই দলের সঙ্গে সফর করা। সোলকার, মানকড় আর আবদুল ইসমাইলের মতো মজার মানুষ থাকলে দীর্ঘ পথও দ্রুত শেষ হয়ে যায়! মুম্বাই দলে খেলোয়াড়দের সখ্য অবিশ্বাস্য। লাজুক নতুন খেলোয়াড়ও দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে, নার্ভাসনেস খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। মুম্বাই দলের একটা ‘সানডে ক্লাব’ আছে। প্রতি সন্ধ্যায় সবাই দুই ঘণ্টার জন্য জড়ো হয় মজা করার জন্য। মিটিংয়ের একজন চেয়ারম্যান থাকেন, তিনি দুজন সহকারী নিয়োগ করেন। সহকারীরা বাকিদের আপ্যায়নের দায়িত্ব নেন। সানডে ক্লাবের সুবিধা হলো, এটা শুধু সবাইকে একত্র করে না, বরং নতুনদেরও দেখায় যে সিনিয়র খেলোয়াড়েরাও আসলে তাদের মতোই সাধারণ। সবচেয়ে বড় কথা, এটা একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে।

এই মিটিংয়ে ম্যাচের সব উত্তেজনা, সাফল্য আর ব্যর্থতা সবাই ভুলে যায়। যে খেলোয়াড় শূন্য রানে আউট হয়েছে, তারও ব্যর্থতা নিয়ে মন খারাপ করার সময় থাকে না। এখানে চেয়ারম্যানের নির্ধারিত ড্রেসকোড না মানলে জরিমানাও করা হয়। সাধারণত সবার ওপর সমানভাবে জরিমানা বসানো হয়, যাতে সেদিনের এবং ভবিষ্যতের খরচ তুলে ফেলা যায়।

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ায় ‘রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ দলেরও একটা ‘সানডে ক্লাব’ আছে। একবার তাদের মিটিংয়ের জন্য খেলোয়াড়দের শুধু আন্ডারওয়্যার আর টাই পরে আসতে বলা হয়েছিল, কেউ আর কিছু পরতে পারবে না। সবাইকে নিজেদের রুম থেকে মিটিং রুম পর্যন্ত এই পোশাকেই আসতে হয়েছিল। দুজন খেলোয়াড় অন্য ফ্লোরে ছিল। তারা লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে উঠলেন, যাতে লোকজন না দেখে।

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক গড়েছিলেন গাভাস্কার
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক গড়েছিলেন গাভাস্কারবিসিসিআই

মিটিং শুরু হলে চেয়ারম্যান দেখলেন, টনি গ্রেগ ও হিলটন অ্যাকারম্যানের টাই নেই। তাদের জরিমানা করা হবে। তবে গ্রেগ উঠে দাঁড়ালেন, বললেন যে তিনি আসলে টাই পরে আছেন। এটা প্রমাণ করতে তিনি তার আন্ডারওয়্যার নামিয়ে দেখালেন যে, কোমরে টাই পরেছেন! তাঁর যুক্তি ছিল, চেয়ারম্যান নির্দিষ্ট করে বলেননি যে টাই কোথায় পরতে হবে! জহির আব্বাস ছিলেন চেয়ারম্যান, খুব হাসিখুশি মানুষ। তিনি হাসতে হাসতে রোহান কানহাইকে বললেন, ‘মিস্টার কানহাই, আমি চাই আপনি বটম আপ করুন!’ রোহান কথাটির আক্ষরিক অর্থ ধরে নিয়ে তাঁর পশ্চাদ্দেশ তুলে ধরলেন!

আরও পড়ুন

সফর খুব মজার হতে পারে। কিছু ঘটনা আছে, যা অবিশ্বাস্যভাবে হাস্যকর। একবার আমাদের এক খেলোয়াড় গভীর রাতে রুমে ফেরার সময় ম্যানেজারের হাতে ধরা পড়লেন। ম্যানেজার তখন তাঁর রুমের দরজা খুলে সকালের পেপার নিতে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই লিফটের দরজা খুলল, আমাদের নায়ক রাতের পার্টি সেরে এসে পড়লেন ম্যানেজারের সামনে। কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও তিনি শান্তভাবে ম্যানেজারকে ‘শুভ সকাল’ জানালেন! ম্যানেজার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এত সকালে কোথায় গিয়েছিলে?’ সঙ্গে সঙ্গে তাঁর উত্তর, ‘মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলাম।’ ম্যানেজার আশ্চর্যজনকভাবে এটা বিশ্বাসও করলেন। খেয়ালই করলেন না যে কেউ স্যুট পরে, চুল আর টাই এলোমেলো অবস্থায় সকালে হাঁটতে বের হয় না!

মাঠে ও মাঠের বাইরে মজা করতে খুব পছন্দ করতেন গাভাস্কার
মাঠে ও মাঠের বাইরে মজা করতে খুব পছন্দ করতেন গাভাস্কারউইজডেন ক্রিকেট

আরেকজন ম্যানেজার ছিলেন, যিনি রাতে বাইরে থাকার বিষয়ে ছিলেন খুবই কঠোর। খেলোয়াড়দের ধরতে তিনি হোটেলের মূল দরজার উল্টো দিকে কোনো গাছ বা পিলারের আড়ালে লুকিয়ে থাকতেন। একসন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন মিলে তাঁকে চমকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেদিন তিনি হোটেলের উল্টো দিকে বাসস্ট্যান্ডে লুকিয়ে ছিলেন। আমরা হোটেলে ফেরার সময় শেষ হওয়ার আগেই সেখানে পৌঁছে তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, ‘শুভ সন্ধ্যা, স্যার। কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন?’ তিনি তোতলাতে তোতলাতে বললেন, রাতে ভারী খাবারের পর একটু তাজা বাতাস নিতে বাইরে এসেছেন।

আরও পড়ুন

আরেকবার আমরা তিনজন শহর দেখতে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরের দিনের ম্যাচে আমাদের কারও খেলার কথা ছিল না। ফলে রাত করে ফেরা নিয়েও কোনো চিন্তা ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে আমরা কথা বলছিলাম, যদি হঠাৎ ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তাহলে কী বলব। কথা শেষ হতে না হতেই মোড় ঘুরতেই আমরা সত্যিই ম্যানেজারের মুখোমুখি! তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ঘড়ি দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমাদের একজন উত্তর দিল, ‘আপনি তো সানিকে (আমাকে এই নামেই ডাকা হয়) চেনেন, ও টাই খুব পছন্দ করে, তাই আমাকে কিছু টাই দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিল।’ ম্যানেজার বেশ চালাক ছিলেন, বললেন, ‘আমিও টাই কিনব, তোমাদের সঙ্গে যাব!’ ব্যস, শহর ঘোরার আশা শেষ!

 
আরও পড়ুন

ভাগ্যক্রমে, এখন আর ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন স্কুলছাত্রের মতো আচরণ করা হয় না। ম্যানেজাররাও বুঝে গেছেন—রাত ১০টায় ঘুমানোর চেয়ে মাঝেমধ্যে একটু দেরি করে ফেরাটা দোষের কিছু নয়। আর এমনিতেও টেস্ট ম্যাচের সময় কেউ আসলে রাত করে ফিরতে চায় না। কেউই নিজের ক্ষতি চায় না।

দীর্ঘ সফরে মাঝেমধ্যে বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়। কখনো কখনো দেখা গেল, বাড়ি থেকে কোনো চিঠি বা ফোন আসেনি। এক ক্রিকেটার তো প্রতিদিন বান্ধবীকে ফোন করার চেষ্টা করতেন, কিন্তু পুরো সফরে একবারই সফল হয়েছিলেন—ফেরার আগের দিন! কারণ, ফোন অপারেটররা ভারতের সেই জায়গার নামই বুঝতে পারত না।

স্ত্রী মার্শনিলের সঙ্গে গাভাস্কার
স্ত্রী মার্শনিলের সঙ্গে গাভাস্কারইনস্টাগ্রাম

সফরের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, যে দেশগুলোয় যাওয়া হয়, সেখানে বন্ধু তৈরি হয়। অনেক সময় প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়। আর ফ্ল্যানেল ব্যাকগ্রাউন্ডে রং ছড়াতেন স্থানীয় মেয়েরা।

ব্যাচেলরদের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর একটু বেশিই ‘রোমাঞ্চকর’। ১৯৫৩ সালে সুভাষ গুপ্তে ত্রিনিদাদের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৬২ সালের সফরে একটি পত্রিকার হয়ে কভার করতে আসা ডিকি রত্নাগরও ত্রিনিদাদের এক নারীকে বিয়ে করেন, গোবিন্দরাজ গায়ানার এক মেয়েকে বিয়ে করেন ১৯৭১ সালে। ১৯৭৬ সালের সফরেও একজন প্রায় ‘আউট’ হতে বসেছিলেন।

আরও পড়ুন

১৯৭৬ সালের গায়ানা সফরে আমার সঙ্গেও ঘটেছিল এক অদ্ভুত ঘটনা। গায়ানায় একসকালে ফোন এল, হোটেলের লবিতে এক মেয়ে অপেক্ষা করছে। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বললাম এবং জানালাম যে আমার নামতে অনেক সময় লাগবে। সে বলল, অপেক্ষা করতে রাজি। দুপুরে যখন নামলাম, দেখি সত্যিই অপেক্ষা করছে। সে চায় ভারতের সিনেমায় নায়িকা হতে এবং আমাকে সাহায্য করতে বলল। আমি বললাম, ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট আর বিমানের টিকিট ছাড়া আর কোনো সমস্যা দেখি না। সে আমাকে বলল, তার বাবা পালিয়ে গেছেন, তাই পাসপোর্ট আবেদনের ফর্মে স্বাক্ষর করার মতো কেউ নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি? সে কিছুটা ইতস্তত করে বলল, উপায় হচ্ছে, তাকে বিয়ে করে আমার স্ত্রী হিসেবে ভারতে নিয়ে যাওয়া! সে আমাকে নিশ্চিত করল যে একবার ভারতে পৌঁছানোর পর সে তার নিজের পথে চলে যাবে। আমি তাকে বললাম, আমি তো বিবাহিত। দলে বেশ কয়েকজন ব্যাচেলর আছে। কেন আমাকেই বেছে নিলে? সে বলল, ‘তুমি সবচেয়ে বিখ্যাত, তাই।’

গল্প এখানেই শেষ হয়নি। সে যখন নিশ্চিত হলো যে আমি উইকেটের বাইরে গিয়ে তার স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ব না, তখন আমাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইতে লাগল এবং তাকে বোন হিসেবে মনে করতে বলল!

সফরের এটাও একধরনের ‘ঝুঁকি’। হয়তো এটা পড়ার পর একদিন ক্রিকেট বোর্ড নতুন নিয়মই চালু করে দেবে—সফরে গিয়ে বিয়ে করা যাবে না!

পাঠকের জন্য

১৯৭১ সালে ২২ বছর বয়সে ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়ে গাভাস্কারের। ১৯৭৪ সালেই তিনি উত্তর প্রদেশের কানপুরের এক শিল্পপতির মেয়ে মার্শনিলকে বিয়ে করেন। তবে দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল আরও এক বছর আগে, ১৯৭৩ সালে গাভাস্কারের একটা ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন মার্শনিল। এই দম্পতির একটাই ছেলে, রোহান গাভাস্কার, জন্ম ১৯৭৬ সালে। বাবার মতো রোহানও ক্রিকেটার, তবে বাবার মতো বড় ব্যাটসম্যান হতে পারেননি। মাত্র ১১ ওয়ানডেতেই শেষ হয়ে গেছে তাঁর জাতীয় দলের ক্যারিয়ার। গাভাস্কার এখন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন।
Komentar