দায়মুক্তি পেতে লুন্ঠিত ২ লাখ ঘনফুট পাথর স্বেচ্ছায় ফেরত

Reacties · 18 Uitzichten

প্রশাসন শক্ত হলে যে যেকোনো কিছু সম্ভব। এর দৃষ্টান্ত স্বেচ্ছায় লুণ্ঠিত সাদা পাথর ফেরত দেওয়ার প্রবণতা।

প্রশাসন শক্ত হলে যে যেকোনো কিছু সম্ভব। এর দৃষ্টান্ত স্বেচ্ছায় লুণ্ঠিত সাদা পাথর ফেরত দেওয়ার প্রবণতা।

স্বেচ্ছায় লুণ্ঠিত পাথর ফেরত দিতে ৩দিনের আলটিমেটাম দেন নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। এরপর পর কোম্পানীগঞ্জ থেকে লুট হওয়া সাদাপাথর নিজ খরচে বহন করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করছেন মানুষজন।

 

অথচ ওএসডি হয়ে সিলেট ছাড়া সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক ব্যর্থতায় লুট হয় সাদাপাথর। ব্যর্থতার পরিচয় দেন তার অধস্তন জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে। এমনকি পুলিশ প্রশাসনও। যারা এখনো বহাল রয়েছেন। কেবল ঝড় গেলো ডিসি, ইউএনও’র ওপর দিয়ে!

রোববার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি প্রায় দুই লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন।

শনিবার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার বেলা পাঁচটার মধ্যে মজুত রাখা সাদাপাথর নিজ খরচে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে প্রশাসনের কাছে জমা দিলেই বিনাশর্তে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এ সময়সীমার পর যাদের কাছে পাথর পাওয়া যাবে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, শনিবার বিকেল থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে লুণ্ঠিত পাথর ফিরিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। রোববার পর্যন্ত মাইকিং অব্যাহত ছিল।

প্রশাসনের এমন ঘোষণার পর রোববার প্রথম দিন কোম্পানীগঞ্জ সদর ও আশপাশের এলাকার মজুতকারীরা লুটের পাথর নিজ খরচে ট্রাক, নৌকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভোলাগঞ্জে এনে জমা দিয়েছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার বিকেল থেকে রোববার রাত আটটা পর্যন্ত অন্তত শতাধিক মানুষ প্রায় ২ লাখ ঘনফুট সাদাপাথর স্বেচ্ছায় নিজ খরচে পরিবহন করে প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন।

সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রথম দিন সদর উপজেলার দুজন ব্যক্তি আটটি ট্রাকে করে তাদের কাছে মজুত থাকা ৮০০ ঘনঘুট পাথর নিজ খরচে ভোলাগঞ্জে পাঠিয়েছেন।

এর আগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ধোপাগুল এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত ৫০ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর অন্তত শ’খানেক ট্রাকে ভরে ভোলাগঞ্জে পাঠানো হয়েছে।

এদিন (রোববার) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উপজেলাটিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে।

এছাড়া গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জৈন্তাপুর থেকে আরও সাড়ে পাঁচ হাজার ঘনফুট পাথর রোববার পাঠানো হয়েছে গোয়াইনঘাটে। ফেরত দেওয়া এসব পাথর জাফলং জিরো পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হবে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, লুট হওয়া সাদাপাথরের একটি বিশাল অংশ সিলেটের বাইরে চলে গেছে। অনেকে পাথর লুটে নিয়েছেন। আর ব্যবসার জন্য অনেকে এসব লুটের পাথর কিনে মজুত রেখেছেন।

এদিকে, প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক যারা নিজ খরচে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র সংলগ্ন ভোলাগঞ্জে রুটের পাথর ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। সরাসরি লুটের সঙ্গে জড়িত না থাকলে এসব ব্যক্তিরা দায়মুক্তি পাবেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. রবিন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আশপাশের মানুষজন সাদাপাথর ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এ যাবত কী পরিমাণ পাথর ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা এখনো ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। কেবল স্থানীয় প্রশাসন এখন এসব পাথর গ্রহণ করছে। ফেরত দেওয়া এসব পাথর পুনরায় সাদাপাথর এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হবে, যাতে পর্যটন এলাকাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। সেই চেষ্টা করছে প্রশাসন।

সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, রোববার পর্যন্ত ২দিনে সিলেট সদর উপজেলা থেকে ৯০ ট্রাক সাদা পাথর কোম্পানীগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু পাথর অভিযানে জব্দকৃত। আর কিছু ব্যবসায়ী ফেরত দিয়েছেন।

এরআগে শনিবার জেলা প্রশাসন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর থেকে লুন্ঠিত পাথর মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে নিজে খরচে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পর কারো কাছে সাদাপাথর পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন থেকে শনিবার একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয় এবং পাথর অধ্যুষিত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে মাইকিংও করা হয়।

সিলেটের জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, সিলেট সদর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অনেকে পাথর লুকিয়ে রেখেছেন। এসব পাথর উদ্ধারে দুই উপজেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শনিবার অনুষ্ঠিত সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার মধ্যে লুণ্ঠিত সাদাপাথর যাদের কাছে মজুত আছে, তারা যেন নিজ খরচে কিংবা স্ব উদ্যোগে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় পৌঁছে দেন। যেহেতু জনপ্রতিনিধিরা সরকারের অংশ, তাই এ পাথর উদ্ধারে তাদেরও দায় রয়েছে। যার যার এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে পাথর ভোলাগঞ্জে পৌঁছানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়।

তবে নির্ধারিত সময়ের পর যে এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাথর পাওয়া গেলে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ডিসি।

২৫ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার: রোববার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এ যাবত সাদাপাথর থেকে লুণ্ঠিত ২৫ লাখ ঘনফুট পাথর এরই মধ্যে জব্দ করেছে প্রশাসন। জব্দকৃত পাথরের প্রায় ১২ লাখ ঘনফুট ভোলাগঞ্জ ডাম্পিং স্ট্যান্ডে সংরক্ষিত রয়েছে। আর জব্দকৃত এসব পাথরের একটি অংশ পর্যায়ক্রমে পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আনুমানিক সাড়ে ৪ লাখ ঘনফুট পাথর পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। একই দিনে নতুন করে আরও ৮৫ হাজার ঘনফুট পাথর ডাম্পিং স্ট্যান্ডে আনা হয়েছে। তন্মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পুনঃস্থাপন করা হয়েছে সাদাপাথরে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দস্থানে নিরাপদে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সাদাপাথরেএবং আশপাশের এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করে। আর গত জুলাই ও আগস্টে দুই সপ্তাহে সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভোলাগঞ্জ নোম্যানস ল্যান্ডের ১০ নং এলাকায় সাদাপাথরের স্তূপ এলাকাটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই নাম পড়ে যায় সাদাপাথর পর্যটন স্পট। প্রতিদিন পর্যটক মুখর থাকায় এ পর্যটন এলাকা ঘিরে নৌকা শ্রমিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলাগঞ্জে পাথর লুটের মহোৎসব চলে।

জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে পাথর খেকোরা লুটের ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সমালোচনার কেবল মুখে কেবল ডিসিকে ওএসডি, এবং ইউএনকে বদলি করা হয়। যদিও সাদাপাথর আগের রূপে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক। নতুন জেলা প্রশাসক আসার পর পাথর উদ্ধার অভিযানে গতি বাড়ানো হয়েছে। জব্দ পাথর সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে সাদাপাথর আগের রূপে ফিরিয়ে আনার কাজ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মানুষজন।

Reacties