নিউইয়র্কে জোহরানের জয়ে কেন ক্ষিপ্ত মোদি সমর্থকেরা

Kommentare · 41 Ansichten

নিউইয়র্কের প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হওয়ার পথে থাকা জোহরান মামদানি এখন ভারতের হিন্দুত

নিউইয়র্কের প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হওয়ার পথে থাকা জোহরান মামদানি এখন ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ও মোদি সমর্থকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। গত ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির প্রাথমিক নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ের পর থেকেই তার মুসলিম পরিচয় এবং মোদি সরকারের সমালোচনা তাকে বিজেপিপন্থী ও প্রবাসী হিন্দু ডানপন্থীদের রোষানলে ফেলেছে।

৩৩ বছর বয়সী মামদানিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'জিহাদি', 'ইসলামপন্থী', 'ভারতবিরোধী' বলে আক্রমণ করা হচ্ছে। নিউ জার্সিভিত্তিক 'ইন্ডিয়ান আমেরিকানস ফর কুয়োমো' নামক একটি গোষ্ঠী নিউইয়র্কের আকাশে 'সেফ নিউইয়র্ক সিটি ফ্রম গ্লোবাল ইনতিফিদা, রিজেক্ট মামদানি' বার্তা লিখে ব্যানারও উড়িয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট-এর পরিচালক কায়লা বাসেট এটিকে 'সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা' বলে মন্তব্য করেছেন।

ভারতের বিজেপি সংসদ সদস্য কঙ্গনা রানাউত এক্স-এ পোস্টে বলেছেন, মামদানির কথা শুনলে 'পাকিস্তানি' বলে বেশি মনে হয়, 'ভারতীয়' নয়, এবং তিনি 'হিন্দুধর্ম নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত'। ভারতের প্রভাবশালী প্রো-বিজেপি টিভি চ্যানেল আজ-তাক মামদানিকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করে দাবি করেছে যে, তিনি 'ভারতবিরোধী' সংগঠনের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়েছেন।

জোহরান মামদানি নিজেকে একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং ভারতের গুজরাট দাঙ্গা (২০০২), বাবরি মসজিদ ধ্বংস, এবং কারাবন্দী অ্যাকটিভিস্ট উমর খালিদের মুক্তি দাবি করে বহুবার মোদি সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। সম্প্রতি এক টাউন হলের সভায় তিনি নরেন্দ্র মোদিকে 'যুদ্ধাপরাধী' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, মোদি আবার নিউইয়র্ক সফরে এলে তিনি তার সঙ্গে কোনো বৈঠকে অংশ নেবেন না। সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোহিত চোপড়া মনে করেন, হিন্দুত্ববাদী মহল গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে নীরব থাকলেও মামদানির মতো কেউ এটি মনে করিয়ে দিলে তাদের ক্ষোভ জন্মায়।

তবে, সমালোচনা সত্ত্বেও জোহরান মামদানি দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। প্রাথমিক নির্বাচনে তিনি অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে ৫৬ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেছেন। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অরবিন্দ রাজাগোপাল এই জয়কে 'সিসমিক (ভূমিকম্প-তুল্য) বিজয়' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, মামদানির স্প্যানিশ, হিন্দি, উর্দু এবং বাংলা জানার ক্ষমতা তাকে বিরল নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ায় মুসলিমবিরোধী বক্তব্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মামদানির মতো স্পষ্টবাদী প্রার্থীই সবচেয়ে কার্যকর জবাব।

নিউইয়র্ক সিটির সংগঠন ডেসিস রাইসিং আপ অ্যান্ড মুভিং-এর রাজনৈতিক পরিচালক জাগপ্রীত সিং বলেছেন, সমালোচনার বড় অংশ শহরের বাইরে থেকে এসেছে। তিনি জানান, নিউইয়র্কের হিন্দু ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটি মামদানিকে ইতিমধ্যে আপন করে নিয়েছে এবং তিনি স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি দীপাবলিকে রাজ্য সরকারের ছুটির স্বীকৃতি দিতে একটি বিলও পেশ করেছিলেন।

মুসলিম পরিচয়, মোদি সরকারের বিরোধিতা এবং দক্ষিণ এশীয় গরিব-মধ্যবিত্ত কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব—এই তিনটি স্তম্ভেই জোহরান মামদানি নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তার এই জয় শুধু নিউইয়র্কের রাজনীতিতেই নয়, প্রবাসী ভারতীয় সমাজ ও বৈশ্বিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ এক বার্তা হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে মামদানির বিরুদ্ধে মোদি সমর্থকদের ক্ষোভ তাদের মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব স্পষ্ট করে তুলছে।

Kommentare