গ্যাসসংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি

Kommentarer · 8 Visningar

দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্পসহ বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোয় এখনো কাটেনি গ্যাসসংকট। এতে উদ্বি??

দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্পসহ বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোয় এখনো কাটেনি গ্যাসসংকট। এতে উদ্বিগ্ন শিল্পোদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকরা। ধারাবাহিকভাবে দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন কমতে থাকায় শিল্প-কারখানায় গ্যাসসংকট কাটা‌তে অন্তর্বর্তী সরকার বাড়তি এলএনজি আমদানি শুরু করে। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

চার বছর আগেও দেশীয় কূপগুলো থেকে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন হতো গড়ে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে সেটি নেমে এসেছে এক হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। এতে শিল্প-কারখানার পাশাপাশি সিএনজি স্টেশন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, আবাসিক খাতসহ সব ক্ষেত্রে চলছে গ্যাসসংকট।

শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, কোনোভাবেই শিল্পে গ্যাসসংকট কাটছে না। ফলে সক্ষমতা অনুযায়ী কারখানা চালানো যাচ্ছে না। এতে একদিকে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানিও। বিনিয়োগ থমকে থাকায় বাড়ছে না কর্মসংস্থান। শিল্প খাত না বাঁচলে থেমে যাবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। তাই শিল্প খাতের গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, দ্রুত গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস সরবরাহের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে মোট গ্যাসের চাহিদা চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। গত শুক্রবার দেশে মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয় এক হাজার ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর দেশীয় কূপগুলো থেকে সরবরাহ করা হয় এক হাজার ৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি এক হাজার ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। বড় এই ঘাটতির কারণ গ্যাসসংকট।

এদিকে পোশাকশিল্পে চলমান গ্যাসসংকট নিরসন ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। গত বুধবার সচিবালয়ে জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিজিএমইএর সভাপতি এ অনুরোধ জানান। এ সময় বিজিএমইএর নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না পাওয়ায় অনেক কারখানা পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। বিষয়টি রপ্তানি ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখতে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে পোশাকশিল্পের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি।’

সংকট মোকাবেলায় বিজিএমইএ সভাপতি জ্বালানি বিভাগে পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব জমা দেন। এগুলো হচ্ছে—দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সুরক্ষায় গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্রশিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তিতাস গ্যাসের নতুন সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই দ্রুত শেষ করতে হবে, যাতে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে পারে। লোড বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, শুধু সরঞ্জাম পরিবর্তন, পরিমার্জন বা স্থানান্তরের জন্য আবেদনকারীদের একটি আলাদা তালিকা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া; যা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে যেতে সাহায্য করবে। সাভারের ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তের কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত তিন থেকে চার পিএসআই চাপ নিশ্চিত করতে হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোগে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত, পোশাকশিল্পকে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। বিজিএমইএর প্রস্তাবিত বিষয়গুলো জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।’

সাভার : শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে গ্যাসসংকটে কারখানার মালিকরা ভোগান্তিতে আছেন। সময়মতো উৎপাদন নিশ্চিত করতে বিকল্প পদ্ধতি ডিজেল ও পেট্রল দিয়ে জেনারেটর, ব্রয়লার চালাতে হচ্ছে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্প মালিকরা। ফলে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সরেজমিনে সাভারের বেশ কটি কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাসসংকটের কারণে কারখানাগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারখানার জেনারেটর বা ব্রয়লার চালাতে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট) চাপের গ্যাস প্রয়োজন হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকের নিচে। এ কারণে বিকল্প পদ্ধতিতে কারখানাগুলো চালু রেখে পণ্য উৎপাদনে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই গ্যাসের চাপ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এমনিতেই বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে, বর্তমানে গ্যাসসংকটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাত হচ্ছে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

সাভারের পাকিজা গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল মোস্তাকিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য জায়গার মতো আমাদের কারখানায়ও গ্যাসসংকট দেখা দেওয়ায় সময়মতো উৎপাদন কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। শ্রমিকরা বেকার বসে থাকে। আমাদের কারখানায় গ্যাসের প্রেসার প্রয়োজন ১২ থেকে ১৫ পিএসআই। সেখানে আমরা দিনের বেলায় ২-৩ আর রাতের বেলায় ৫ পিএসআই গ্যাস পাচ্ছি। এতে নিয়মিত উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো শিপমেন্ট করা যাচ্ছে না। দ্রুত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করা না গেলে কারখানা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।’

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির সাভার জোনাল অফিসের ম্যানেজার আব্দুল্লাহ হাসান আল-মামুন বলেন, ‘আগের চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রতিদিন পাঁচটি শিল্প-কারখানা থেকে অভিযোগ এলেও গত দুই দিনে এসেছে মাত্র একটি কারখানা থেকে। আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে কাজ করছি। আশা করছি সামনে আর অভিযোগ থাকবে না।

Kommentarer