প্রথম দিনে ৩০০০ মিটার, দ্বিতীয় দিনে ৫০০০ মিটার আর তৃতীয় দিনে ১০০০০ মিটার। ১৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে টানা তিন দিনে তিনটি রেকর্ড গড়ে অভাবনীয় কীর্তি গড়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অ্যাথলেট রিনকী বিশ্বাস। ১৫০০ মিটারে গতকাল রেকর্ড না গড়লেও সোনা জিতেছেন। খালি পায়ে দৌড়ে দৃষ্টি কেড়েছেন সবার, হয়েছেন প্রতিযোগিতায় সেরা নারী অ্যাথলেটও। রিনকী প্রথম আলোকে বললেন তাঁর উঠে আসার গল্প—
টানা তিন দিনে তিনটি রেকর্ড। এই অর্জনে আপনার অনুভূতি কী?
রিনকী বিশ্বাস: অনেক ভালো লাগছে। এতটা ভাবিনি। ধরে নিয়েছিলাম ২টি রেকর্ড হবে, ৩ হাজার আর ৫ হাজারে। কিন্তু ১০ হাজারেও হবে, এটা ভাবনার বাইরে ছিল। অবিশ্বাস্য লাগছে।
তিনটি ইভেন্টেই আপনি খালি পায়ে দৌড়েছেন। এর কারণ কি জুতার অভাব, নাকি অন্য কিছু?
রিনকী: জুতা আছে। তবে খালি পায়ে দৌড়াতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। লম্বা দৌড় তো...। জুতা পরলে অনেক সময় সমস্যা হয় আমার। তবে সব সময় যে খালি পায়ে দৌড়াই, তেমন নয়। খালি পায়ে দৌড়াতে একটু আরামও লাগে। এ কারণেই অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে।
জুতা আছে। তবে খালি পায়ে দৌড়াতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। লম্বা দৌড় তো...।
কিন্তু খালি পায়ে দৌড়ালে চোটে পড়ার ভয় থাকে না?
রিনকী: শুরু থেকে খালি পায়ে দৌড়ানোয় সমস্যা হয় না। পায়ে লিকো প্লাস্টার লাগাই। কখনো কোনো ব্যথা পাইনি।

ছোটবেলা থেকেই নড়াইলে লম্বা দৌড় দৌড়াতেন। আপনার গড়ে ওঠায় সেই অভিজ্ঞতা কেমন কাজে লেগেছে?
রিনকী: ২০১৮ সালে আমি নড়াইলে দৌড় শুরু করি। স্কুল স্তরে খেলি তখন। শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে দৌড়াতাম। নড়াইলের লোহাগড়ায় আমার বাসা। সেখান থেকে জাতীয় জুনিয়র মিটে খেলি। সোনা, রুপা জিতি। সেই থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চোখে পড়ি।
এবারের প্রতিযোগিতায় মানসিকভাবে সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত কোনটা ছিল?
রিনকী: কঠিন তেমন মনে হয়নি। তবে শেষ দিকটায় একটু কষ্ট হয়েছে। তবু জানপ্রাণ দিয়ে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছেছি।
আপনার প্রতিদিনের অনুশীলনের কথা বলুন। কে আপনাকে প্রশিক্ষণ দেন?
রিনকী: নৌবাহিনীর দূরপাল্লার কোচ নুরুজ্জামান স্যার অনেক সহায়তা করেছেন। তাঁর অধীনে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা অনুশীন করেছি। আমার এত দূর আসার পেছনে নৌবাহিনীর অনেক অবদান।
নৌবাহনীতে কী হিসেবে আছেন? বেতন কেমন?
রিনকী: চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড় হিসেবে আছি। কোনো ডিউটি করতে হয় না। ৪০ হাজার টাকা বেতন পাই।
এ পর্যন্ত জাতীয় প্রতিযোগিতায় কতগুলো পদক জিতলেন?
রিনকী: ৩০টির মতো হবে। এর মধ্যে ১০টির বেশি সোনা।

পরিবার ও এলাকার মানুষজন আপনার খেলাধুলাকে কীভাবে দেখেন? সমর্থন পান, নাকি বাধাও আসে?
রিনকী: বাধা আসে না। পরিবার থেকে অনেক সমর্থন পাই। শুরু থেকেই পরিবার পাশে আছে। বাবা বসন্ত বিশ্বাস সব সময় পাশে ছিলেন। তিনি খেলাধুলাপ্রিয় মানুষ, মাছের ব্যবসা করেন। আমার ভাইও একজন অ্যাথলেট। সে–ও লং জাম্পার। আর্মিতে চাকরি করে। নতুন অ্যাথলেট হওয়ায় সে এবার খেলেনি।
বাংলাদেশে দূরপাল্লার দৌড়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ খুব বেশি নয়। আপনি কেন এ ধরনের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে এলেন?
রিনকী: আমি প্রথমে ফুটবলার ছিলাম। সেখান থেকেই লং রানে আসা।
রেকর্ড করার পর সতীর্থ ও প্রতিপক্ষ অ্যাথলেটদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
রিনকী: অনেক ভালো। সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এটা অনেক আনন্দের দিন আমার জন্য।
চাকরিটা স্থায়ী হোক, এটাই চাই। বেতনও যেন বাড়ে।
এই যে তিনটি রেকর্ডসহ এবার ১৫০০ মিটারেও সোনা জিতলেন। এতে পেশাগত জীবনে আপনার কি উন্নতি হবে?
রিনকী: চাকরিটা স্থায়ী হোক, এটাই চাই। বেতনও যেন বাড়ে।

ভবিষ্যতে আপনার স্বপ্ন কী? আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণের ইচ্ছা আছে তো?
রিনকী: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে চাই। এশিয়ানসহ সব গেমসে বাংলাদেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে চাই। ক্যারিয়ার শেষে একজন ভালো মানের দূরপাল্লার কোচ হতে চাই।
বাংলাদেশে অ্যাথলেটদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কেমন মনে হয়? কোথায় বেশি ঘাটতি দেখেন?
রিনকী: আমাদের দেশে অ্যাথলেটদের আরও আর্থিক সহায়তা পাওয়া দরকার। এটার ঘাটতি আছে।
তিনটি রেকর্ডভাঙা সাফল্যের পর গ্রামীণ মেয়েদের খেলাধুলার জন্য কী বার্তা দেবেন?
রিনকী: আমাকে দেখে অনেকে খেলায় আসবে, বিশেষ করে দূরপাল্লার দৌড়ে। এ জায়গায় মেয়েরা সাধারণত আসতে চায় না। কারণ, অনেক কষ্ট।
আপনি যদি খেলাধুলায় না আসতেন, তবে আজ নিজেকে কোথায় কল্পনা করতেন?
রিনকী: লেখাপড়া করতাম। হয়তো স্কুল টিচার হতাম।