নৌকার মাথায় নেচে ভাইরাল ছোট্ট রায়ান

Comments · 0 Views

ঐতিহ্যবাহী একটি নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে নাচতে নাচতে মাঝিদের উৎসাহ দিচ্ছে রায়ান। তার ২০ সেকেন্ডের একটি নাচের ভিড?

ঐতিহ্যবাহী একটি নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে নাচতে নাচতে মাঝিদের উৎসাহ দিচ্ছে রায়ান। তার ২০ সেকেন্ডের একটি নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্ট

পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার কুয়ান্তান নদীর তীরে হাজারো মানুষের ভিড়। নদীতে লম্বা কাঠের নৌকায় গাদাগাদি করে বসে রঙিন দাঁড় টানছেন মাঝিরা। নদীর স্রোতে প্রাণপণ দাঁড় টেনে ছুটে চলছেন তাঁরা। শব্দ শুধু নদীর দুই পাড়ের হাজারো মানুষের উল্লাস আর হর্ষধ্বনির। এত উল্লাস আর হর্ষধ্বনির একটাই কারণ—১১ বছরের বালক রায়ান আরকান দিখা।

দেশটির ঐতিহ্যবাহী একটি নৌকার একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে নাচতে নাচতে মাঝিদের উৎসাহ দিচ্ছে রায়ান। তার ২০ সেকেন্ডের একটি নাচের ছোট ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। হাত ঘুরিয়ে, দেহ দুলিয়ে, স্রোতের ঢেউকে যেন নাচে রূপ দিয়েছে সে। খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ ফর্মুলা ওয়ানের অ্যালেক্স আলবন থেকে মোটোজিপির মার্ক মার্কেজও তার নাচের হাত ঘোরানো আর পা দোলানোর ভঙ্গি অনুকরণ করে নিজেদের ভিডিও বানিয়েছেন। ছোট্ট বালকের এই নাচে উৎসাহ পেয়ে সুমাত্রার রিয়াউ প্রদেশের কুয়ান্তান নদীর পাড়ে আয়োজিত নৌকাবাইচ বার্ষিক পাকু জালুর প্রতিযোগিতায় ছুটে এসেছে দেশি-বিদেশি হাজারো মানুষ। গতকাল রোববার এই প্রতিযোগিতা হয়েছে।

 
১১ বছর বয়সী রায়ানের ভঙ্গি অনুকরণ করে নিজেদের ভিডিও বানিয়েছেন খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ ফর্মুলা ওয়ানের অ্যালেক্স আলবন থেকে মোটোজিপির মার্ক মার্কেজও। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্ট
১১ বছর বয়সী রায়ানের ভঙ্গি অনুকরণ করে নিজেদের ভিডিও বানিয়েছেন খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ ফর্মুলা ওয়ানের অ্যালেক্স আলবন থেকে মোটোজিপির মার্ক মার্কেজও। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্টছবি: এএফপি

সুমাত্রা দ্বীপের রিয়াউ প্রদেশে গতকাল বার্ষিক পাকু জালুর প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আয়োজন হয়। অস্ট্রেলীয় পর্যটক ডানকান ম্যাকনট বলেন, ‘আমি পাকু জালুর দেখতে এসেছি, কারণ, আমি চেয়েছিলাম উৎসবটিকে ভিডিও করে বিশ্বকে দেখাতে। দাঁড় টানা ছেলেরা একেবারে খ্যাপাটে! তাঁরা অসাধারণ। আমি দারুণ উপভোগ করছি।’

মেদান শহর থেকে ১৭ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে উৎসব দেখতে এসেছেন ৩৮ বছর বয়সী ইন্দোনেশীয় নারী ইউইউন কুরনিয়া। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সরাসরি পাকু জালুর দেখতে চেয়েছিলাম। সামনে থেকে দেখা সত্যিই দারুণ।’

দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছর এ প্রতিযোগিতায় ১৪ লাখ দর্শক এসেছিল। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে যোগ হয়েছিল ২৫ লাখ ডলারের বেশি অর্থ।

রিয়াউ পর্যটন সংস্থার প্রধান রনি রাখমাত বলেন, এ বছর ১৫ লাখ দর্শক এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাঁদের মধ্যে বিদেশির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। বাড়তি ব্যয়ের কারণে আয় বেড়ে ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

 
দর্শনার্থীদের কেউ কেউ পানিতে নেমে কাছ থেকে নৌকাবাইচ দেখতে চাইছেন। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্ট
দর্শনার্থীদের কেউ কেউ পানিতে নেমে কাছ থেকে নৌকাবাইচ দেখতে চাইছেন। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্টছবি: এএফপি

‘সুপার কুল রায়ান’

স্থানীয় সরকারের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, এই নৌকাবাইচের শুরু বহু আগে, ১৭ শতকে। সে সময় সুমাত্রার গ্রামবাসীরা কাঠের লম্বা নৌকা ‘জালুর’-এ করে পণ্য ও মানুষ পরিবহন করত। ধীরে ধীরে তা রূপ নেয় প্রতিযোগিতায়, যা এখন প্রতিবছর আগস্টে আয়োজিত হয়।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, রায়ানের খ্যাতি প্রতিযোগিতাকে আরও জনপ্রিয় করেছে। ১৮ বছর বয়সী নায়সিলা আয়ুনিতা সারি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সে সুপার কুল। এই বয়সে একটি বাচ্চা পাকু জালুরকে ঘিরে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছে। নাচের মাধ্যমে সে পুরো পৃথিবীকে এই উৎসব চিনিয়ে দিয়েছে।’

কুয়ান্তান নদীর তীরে এখন উৎসবের আমেজ। রঙিন তাঁবু, ছাতা, লোকজ মেলা—সব মিলিয়ে দারুণ আয়োজন। কেউ কেউ আবার পানিতে নেমে কাছ থেকে নৌকাবাইচ দেখতে চাইছেন। আর নৌকার সামনের মাথায় দাঁড়িয়ে রায়ানের নাচ মাঝিদের প্রাণ জুগিয়ে চলেছে।

৩৫ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রিমা বলেন, ‘ওই বাচ্চা নৌকার মাথায় দাঁড়িয়ে নাচছে, এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। আমি হলে কখনোই সাহস করতাম না।’

নদীতে লম্বা কাঠের নৌকায় গাদাগাদি করে বসে রঙিন দাঁড় টানছেন মাঝিরা। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্ট
নদীতে লম্বা কাঠের নৌকায় গাদাগাদি করে বসে রঙিন দাঁড় টানছেন মাঝিরা। কুয়ান্তান নদী, রিয়াউ প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ২২ আগস্টছবি: এএফপি

ছোট শহরের বড় গর্ব

রনি রাখমাত বলেন, এবারের প্রতিযোগিতায় ২২০টির বেশি দল অংশ নিয়েছে, যাদের অধিকাংশই স্থানীয় গ্রাম বা উপজেলার প্রতিনিধিত্ব করছে। পুরস্কারের পরিমাণ প্রায় ৯০ কোটি রুপি (৫৫ হাজার মার্কিন ডলার)। আগের বছরগুলোতে এই আয়োজনে বিদেশি দর্শক প্রায়ই ছিলেন না, কিন্তু এবার আছেন।

রনি রাখমাত আরও বলেন, প্রশাসন এবার এই আয়োজন ও নদীর পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ জোর দিয়েছে। প্রতিযোগিতার আগে নদীর আশপাশে অবৈধ সোনা খনন বন্ধ করতে পুলিশ ও সেনারা পদক্ষেপ নিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের কণ্ঠে শোনা গেল গর্বের সুর। ফ্রিমা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে এই দৌড় দেখি। কখনো ভাবিনি, একদিন আমাদের ছোট্ট জায়গার দিকে পৃথিবীর নজর পড়বে। আজ রায়ানের জন্যই পাকু জালুর বিশ্বজুড়ে পরিচিত। আমরা কৃতজ্ঞ।’

Comments