১০ বছরে ৫ ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় তৌহিদ আফ্রিদি

Komentar · 26 Tampilan

ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদির পথচলা শুরু। পরের বছর থেকে তিনি নিয়মিত ইউটিউব

ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদির পথচলা শুরু। পরের বছর থেকে তিনি নিয়মিত ইউটিউবার হিসেবে ভ্লগিং শুরু করেন। মাত্র এক বছরে পরিচিত বেড়ে যায়। একসময় দেশের শীর্ষ ইউটিউবার হিসেবে আলোচনায় আসেন। এখন ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবার ৬৩ লাখ ছাড়িয়েছে।

জনপ্রিয় এই ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর গত বছর থেকে সমালোচনার মধ্যেও পড়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তৌহিদ আফ্রিদি নীরব ছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছরের পথ চলায় ৫টি ঘটনা তাঁকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় নিয়ে এসেছিল।

গত রোববার বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। বরিশাল মহানগরের বাংলাবাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। রাতেই তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। সোমবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়।
দীঘি ও তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: ফেসবুক থেকে
দীঘি ও তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: ফেসবুক থেকে

দীঘির সঙ্গে প্রেম নাকি বন্ধুত্ব
তৌহিদ আফ্রিদি এবং মডেল ও চিত্রনায়িকা দীঘিকে প্রায় একসঙ্গে দেখা যেত। তাঁদের দুজনের আড্ডার ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করা হতো। ইউটিউবেও রয়েছে তাঁদের বেশ কয়েকটি ভিডিও। বেশ কিছু ছবিতে তাঁদের দেখা যায় রোমান্টিক ভঙ্গিতে। ছবিগুলো ভাইরাল হয়। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, তাঁরা দুজন প্রেম করছেন। এ নিয়ে নিয়মিত চর্চা হতে থাকে। ২০২২ সালের দিকে এ ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় আসেন আফ্রিদি। তবে দীঘি সব সময়ই বলতেন, তাঁরা ভালো বন্ধু। তাঁদের মধ্যে প্রেম নেই। দুই বছর আগে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীঘি বলেছিলেন, ‘তৌহিদ আফ্রিদির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমরা ভালো বন্ধু। কিন্তু অনেকেই অনেক কথা বলে। এই নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। আমাদের প্রায়ই দেখা হয়, আড্ডা হয়। মিডিয়ায় বন্ধুত্ব নিয়ে অনেক বেশি কথা হয়েই থাকে। এটা অনেকটা মনগড়া কথাও। সব মিলিয়ে আমি বলব, আফ্রিদি সব সময় ভালো বন্ধু ছিল, আছে, থাকবে।’

আরও পড়ুন
দেবের সঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: ফেসবুক থেকে
দেবের সঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: ফেসবুক থেকে
ইউটিউবার হিসেবে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবির নায়ক দেবের সাক্ষাৎকার নেন। সেই ভিডিওতে উঠে আসে দেবের অজানা নানা গল্প। শুধু তা–ই নয়, দেব তখন আফ্রিদিকে তাঁর অফিস ঘুরে দেখান। কলকাতার নানা জায়গায়ও ঘোরান, খাওয়ান।

কলকাতার নায়ক দেব আফ্রিদির মামা
বাংলাদেশের ইউটিউবার হিসেবে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবির নায়ক দেবের সাক্ষাৎকার নেন। সেই ভিডিওতে উঠে আসে দেবের অজানা নানা গল্প। শুধু তা–ই নয়, দেব তখন আফ্রিদিকে তাঁর অফিস ঘুরে দেখান। কলকাতার নানা জায়গায়ও ঘোরান, খাওয়ান। ভিডিওতে তখন দেব বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার কথা জানান। এমনকি কলকাতার কয়েকটি আয়োজনেও দেব নিয়ে যান তৌহিদ আফ্রিদিকে। পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলে আলোচনায় আসেন আফ্রিদি। অনেকেই তখন জানতে চান, কে এই তরুণ?

আফ্রিদি ভিডিওতে দেবকে মামা বলে সম্বোধন করেন। বোঝা যায়, তাঁদের সম্পর্ক বেশ ভালো। আলোচনার শুরুতে দেব বলেন, ‘তুমি শুধু বাংলাদেশে নও, আমাদের এখানেও পরিচিতি। তুমি আরও ভালো কাজ করো। মানুষকে যেকোনোভাবে ভালো রাখার চেষ্টা করো।’ এই ভিডিও প্রায় কোটি দর্শক দেখেছেন।

তৌহিদ আফ্রিদি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পান।
তৌহিদ আফ্রিদি
তৌহিদ আফ্রিদিছবি : তৌহিদ আফ্রিদির ইনস্টাগ্রাম

দশ লাখ সাবস্ক্রাইবার
২০১৫ সালের কথা। তখনো দেশে ইউটিউবারের সংখ্যা তেমন ছিল না। এমনকি ইউটিউবের ওপরও নির্ভর ছিলেন না তরুণেরা। অনেকে জানতেন না, ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে টাকা আয় করা যায়। সেই সময়েই হঠাৎ আলোচনায় আসেন এই তরুণ। একের পর এক নিজের নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও পোস্ট করে আলোচনায় আসেন। শূন্য থেকে শুরু হলেও এক বছরের মাথায় তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এক লাখ হয়ে যায়।

২০১৫ সালের কথা। তখনো দেশে ইউটিউবারের সংখ্যা তেমন ছিল না। এমনকি ইউটিউবের ওপরও নির্ভর ছিলেন না তরুণেরা। অনেকে জানতেন না, ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে টাকা আয় করা যায়। সেই সময়েই হঠাৎ আলোচনায় আসেন এই তরুণ।

দুই বছরেই পৌঁছে যায় ১০ লাখে, যা সে সময়ে ছিল ইউটিউবার হিসেবে রীতিমতো আলোচিত ঘটনা।

একসময় তিনি দেশের তরুণদের মধ্যে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় শীর্ষেও ছিলেন। যুক্তরাজ্য থেকে পড়াশোনা শেষ করেই দেশে এসে ইউটিউবার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রাঙ্ক ভিডিও, কমেডি নাটক, বিভিন্ন তারকা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারও নিতে দেখা যায় তাঁকে। বর্তমানে তাঁর ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৬.৩ মিলিয়ন।

রাইসা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন তিনি। এ নিয়ে শুরু হয় বিভ্রাট। পরে ঘটনা প্রসঙ্গে আফ্রিদি গণমাধ্যমে জানান, তাঁর বউ রাইসা নন, রিসাকে বিয়ে করেছেন। সম্পর্কে রাইসা আর রিসা যমজ বোন। এ নিয়ে নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে অনেকেই মজার ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে লিখতে থাকেন, ‘শ্যালিকাকে বিয়ে করেছেন আফ্রিদি।
বিয়ের সময়েও ভাইরাল হয়েছেন তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: ফেসবুক থেকে
বিয়ের সময়েও ভাইরাল হয়েছেন তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: ফেসবুক থেকে

শ্যালিকা–বিয়ে নিয়ে বুলিং
গত বছর হঠাৎই তৌহিদ আফ্রিদির বিয়ের সাজের একাধিক স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখনো বিয়ে নিয়ে কথা বলেননি আফ্রিদি। এর মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে, রাইসা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন তিনি। এ নিয়ে শুরু হয় বিভ্রাট। পরে ঘটনা প্রসঙ্গে আফ্রিদি গণমাধ্যমে জানান, তাঁর বউ রাইসা নন, রিসাকে বিয়ে করেছেন। সম্পর্কে রাইসা আর রিসা যমজ বোন। এ নিয়ে নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে অনেকেই মজার ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে লিখতে থাকেন, ‘শ্যালিকাকে বিয়ে করেছেন আফ্রিদি। বুলিংয়ের শিকার হন তৌহিদের শ্যালিকা রাইসা আল রোজা।’

এ ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোকে রাইসা সেই সময় জানিয়েছিলেন, আফ্রিদির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বোন রিসার। একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে আফ্রিদির বিয়ের বেশ কয়েকটি স্থিরচিত্র ও ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আসে। সেখানে রাইসাকে টিকটক স্টার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং আরও জানানো হয়, দীর্ঘদিনের প্রেমের পর এক হলো দুজন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বুলিংয়ের শিকারও হতে হয়েছে রাইসাকে।

রাইসা বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমি আর আমার বোন কেউই টিকটক স্টার না। আমাকে টিকটকে দেখেছে, এমন মানুষও আপনি তেমন খুঁজে পাবেন না। তবে হ্যাঁ, আমি ব্র্যান্ড প্রমোট করি। কিন্তু ২০২৩ সালে বিয়ে এবং এরপর মা হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলাম না। আমার পরিবার, স্বামীর পরিবারের একটা ভালো পরিচিতি আছে। এরপরও এমন বুলিং কাম্য নয়।’ এ ঘটনায় নতুন করে আলোচিত হন তৌহিদ আফ্রিদি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। ডিবির এই কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন আফ্রিদি, তাঁকে নিয়ে ভিডিও শেয়ার করেছেন।
নানা কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসে তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: কোলাজ
নানা কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসে তৌহিদ আফ্রিদি। ছবি: কোলাজ

রহস্যজনক ভূমিকায় আফ্রিদি
গত বছর কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সারা দেশে যখন একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটে চলে, তখন নীরব ছিলেন দেশের আলোচিত এই ইউটিউবার। তার কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। ডিবির এই কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন আফ্রিদি, তাঁকে নিয়ে ভিডিও শেয়ার করেছেন। নানা বিষয়ে সরব থাকলেও দেশের ক্রান্তিলগ্নে শুরুতে কোনো কথা বলেননি। এ নিয়ে ইউটিউবার বন্ধু সালমান মুক্তাদির সমালোচনা করেন। তখন নতুন করে আলোচনায় আসেন এই তরুণ।

পরে একসময় তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি দুঃখিত, এ বিষয়ে কথা বলতে আমি দেরি করে ফেলেছি। আমাকে আপনারা অনুগ্রহ করে আবু সাঈদ ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দিন। আমি এককভাবে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি আসছি আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে। আপনাদের সঙ্গে এক হয়ে মাঠে নামব। আর নয় রক্তক্ষরণ। শান্তি চাই, শান্তি চাই।’ এই পোস্টের পর আফ্রিদি আবার শিক্ষার্থীর ক্ষোভের মুখে পড়েন। আবার ভাইরাল হন। তাঁর এই স্ট্যাটাস মূলত প্রহসন হিসেবেই নেন শিক্ষার্থীরা।

Komentar