মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সফলতম বোলার। তারপরও বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি অফ স্পিনার জান্নাতুল ফেরদৌসের।
আশা ছিল আবার দেশের ক্রিকেটে ফিরবেন, ফিরেছেন।
আশা ছিল আবার লাল–সবুজ জার্সি গায়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, খেলেছেন।
কিন্তু ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেও আসন্ন নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ না পেয়ে এখন সব আশা হারিয়ে ফেলেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ভাবছেন, দেশের ক্রিকেটকে দায় বলে আবারও পাড়ি জমাবেন অস্ট্রেলিয়ায়।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে আট দলের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। টুর্নামেন্টের জন্য গত ২৩ আগস্ট ঘোষিত ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাননি জান্নাতুল। তবে ২৫ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার গত মে মাস থেকে চলমান নারী দলের অনুশীলন ক্যাম্পে আছেন।
২০১৬ সালে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পাওয়া জান্নাতুলের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৮ সালের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। দলে ছিলেন সে বছরের এশিয়া কাপেও। এরপরই ব্রাত্য হয়ে পড়েন জাতীয় দলে।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে চলে যান সিডনিতে। চার বছর অস্ট্রেলিয়ায় থেকে খেলেছেন সিডনি ক্রিকেট ক্লাব, ব্যাংকসটাউন স্পোর্টস উইমেন্স ক্রিকেট ক্লাব ও সর্বশেষ ক্যানবেরার রাজ্য দল অস্ট্রেলিয়া ক্যাপিটালস টেরিটরির হয়ে। ২০২০–২১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও পেছনে ফেলে পেয়েছিলেন ব্যাংকসটাউন স্পোর্টস উইমেন্স ক্রিকেট ক্লাবের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি।

গত বছর বাংলাদেশে ফিরে আসেন আবারও জাতীয় দলে খেলার আশা নিয়ে। আশা পূরণ করতে পারফর্ম করতে হতো। সেটিও করেছেন দারুণভাবেই। মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন (৮ ম্যাচে ২১ উইকেট)। মেয়েদের লাল বলের আসর বিসিএলের সর্বশেষ আসরেও দুই ম্যাচের তিন ইনিংসে ১৪ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এই পারফরম্যান্স জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নও পূরণ করে দেয় জান্নাতুলের। গত ডিসেম্বরে সিলেটে আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর এপ্রিলে খেলেছেন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়েও। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৫ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে পান ৫ উইকেট। ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সফলতম বোলারও ছিলেন জান্নাতুল।
এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ‘পুরস্কার’ যখন দল থেকে বাদ পড়া, স্বাভাবিকভাবেই হতাশ জান্নাতুল। কেন বাদ পড়লেন—জানতে চাইলে গতকাল এই প্রতিবেদককে বলা কথায়ও প্রকাশ পেয়ে গেল সেটি, ‘এটা আমার জন্য অবশ্যই শকিং। তবে আমার কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।’

উত্তর জানার চেষ্টা হয়েছে মেয়েদের ক্রিকেটের নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদের কাছ থেকেও। কিন্তু দল নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। যদিও জানা গেছে, কোচ–নির্বাচকের চোখে জান্নাতুলের অফ স্পিন নাকি বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে কিছুটা কম কার্যকর।
ভালো খেলতে থাকা অবস্থায়ও বাদ পড়ে জান্নাতুল ধরেই নিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁর আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আবারও তাই ফিরে যেতে চান অস্ট্রেলিয়ায়, ‘জানি না কী বলব! যে রকম আশা করে দেশে এসেছিলাম, যে রকম পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিলাম… কিন্তু এভাবে চললে আমি কীভাবে এখানে খেলা চালিয়ে যাব? হয়তো আবার অস্ট্রেলিয়াতেই ফিরে যাব, সেখানেই ক্রিকেট খেলব। আমি সেখানে খেলতে পারব, পড়াশোনা করতে পারব, আবার টুকটাক কোচিংয়েও মনোযোগ দেব ভাবছি।’
অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় খেলার পাশাপাশি লেভেল–২ কোচিং কোর্স করে ফেলেছেন জান্নাতুল। অস্ট্রেলিয়ার দু–একটি ক্লাবের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানালেন জান্নাতুল, ‘দুটি ক্লাব এরই মধ্যে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা বলেছে আমার জন্য সব সময় দরজা খোলা আছে।’

এবার ফিরে জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতাটা ‘মিশ্র’ই হয়েছে জান্নাতুলের। তাঁর ভাষায়, ‘এক দিক দিয়ে অভিজ্ঞতা ভালো যে, আমি আবার অনেক দিন পর জাতীয় দলে ফিরতে পেরেছি। আমার ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলে খেলা, লাল–সবুজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। তবে এমন কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে যাওয়াটা কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই কাম্য হবে না।’
সেটা কী? এই প্রশ্নে অবশ্য ‘তা এখন আর না বলি..’ বলে নিরুত্তরই থাকলেন জান্নাতুল।