বয়সের বেশি পার্থক্যে বিয়ে করলে সামাজিক ও আইনিভাবে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়

Kommentarer · 22 Visninger

এ অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের একসময় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যেত। তখনো পুরুষের তুলনায় নারীর বয়স থাকত কম, সাধারণত ব্যবধানট??

এ অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের একসময় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যেত। তখনো পুরুষের তুলনায় নারীর বয়স থাকত কম, সাধারণত ব্যবধানটা হতো ৫ থেকে ১০ বছর। এখন ব্যবধান কমে কাছাকাছি বয়সে বিয়ে হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রম আছে। নানা কারণে কেউ কেউ নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বয়সীকেও বিয়ে করছেন। বিয়ের পর এমন দম্পতিরা আইনি ও সামাজিকভাবে যে চাপের মধ্যে পড়েন তাই জানাচ্ছেন দুই বিশেষজ্ঞ।

সমালোচনা সামলে চলার মানসিকতা থাকতে হবে

ড. শেখ মোহাম্মদ কায়েস, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শেখ মোহাম্মদ কায়েস
শেখ মোহাম্মদ কায়েসছবি: সংগৃ্হীত

দুজন মানুষ একই চিন্তাচেতনার হলে বিবাহিত সম্পর্ক সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে একই মানসিকতার হলেও অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য যদি খুব বেশি হয়, সমাজ সেটিকে মনে করে ‘অস্বাভাবিক’। যে কারণে এমন দম্পতিকে অনেক সময় সমাজের অঘোষিত শাস্তি বা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এ ধরনের বিয়েতে স্বামী যদি বড় আর স্ত্রী ছোট হয়, তাহলে মেয়েটির সমালোচনা করে বলা হয়, ‘নিশ্চয়ই লোভে পড়ে বিয়ে করেছে’, ‘স্বামী কয় দিন বাঁচবে।’ আবার পুরুষটিকে শুনতে হয়, ‘নিশ্চয়ই কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে’ অথবা ‘লোকটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এসব কারণে ধীরে ধীরে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন ওই নারী। অনেক সময় দুজনে সুখী হলেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে তাঁরা অসহায় বোধ করতে পারেন।

সামাজিক চাপ সামলানোর মত ক্ষমতা থাকতে হবে
সামাজিক চাপ সামলানোর মত ক্ষমতা থাকতে হবেমডেল: হামিদ ও রেহনুমা। ছবি: কবির হোসেন

সমাজ তো বটেই কাছের মানুষদের কাছ থেকেও এমন দম্পতিদের নানা রকম কথা শুনতে হয়; কিন্তু সমাজের অন্যদের মতো পরিবার বা বন্ধুরা যদি তাঁদের সম্পর্ককে সমর্থন না করেন, তাহলে চাপ আরও বাড়ে। তাই পরিবার ও কাছের মানুষদের সমর্থন জরুরি।

আবার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠার পরও কিন্তু বিপদ কাটে না। পরবর্তী সময়ে ভিন্নভাবে সামনে আসতে পারে সমালোচনা। দাম্পত্য জীবনের যেকোনো পর্যায়েই সমস্যা দেখা দিলে সেটি ‘বয়সের দোষ’ হিসেবে দেখতে পায় সমাজ। আর এ কথা এতভাবে শুনতে হয় যে একসময় দম্পতিরাও নিজের অজান্তে সেটি বিশ্বাস করতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন
 

আইনি দিকটাও ভেবে রাখুন

মিতি সানজানা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

মিতি সানজানা
মিতি সানজানাছবি: সংগৃহীত

আমাদের প্রেক্ষাপটে বয়সের বেশি ব্যবধানে বিয়ে মানে সাধারণত পুরুষের বেশি বয়সকেই বোঝায়। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন—বরের কি এটা দ্বিতীয় বিয়ে? বরের টাকাপয়সার লোভেই কি বিয়ে? আর এমন সব প্রশ্নের মধ্যে ঘুরেফিরেই নানা ধরনের আইনি জটিলতা দেখা দেয়। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধিত হবে না।

কোনো পুরুষ যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তাঁকে অবিলম্বে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান স্ত্রী আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার অধিকার রাখেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিলেও তিনি দুই স্ত্রীরই ভরণপোষণ দেবেন। এ ছাড়া উভয়ের নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবেন। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকার কোনো অবস্থাতেই খর্ব হবে না।

বেশি বয়সে বিয়ে আইনত অপরাধ নয়। তবে দ্বিতীয় বিয়ে হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমোদন লাগবে
বেশি বয়সে বিয়ে আইনত অপরাধ নয়। তবে দ্বিতীয় বিয়ে হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমোদন লাগবেমডেল: হামিদ ও রেহনুমা। ছবি: কবির হোসেন

এ ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করার আগে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন স্বামী। বিয়েসংক্রান্ত প্রতারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের অসম বয়সের বিয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথম পক্ষের সন্তান বা প্রথম স্ত্রী (যদি থাকেন) কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নেন না। ফলে যিনি বিয়ে করতে চান, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি স্ত্রী, সন্তানদের থেকে সেটি গোপন করেন। এর ফলে দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত নানা জটিলতা থেকে জেল–জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কনে যদি নাবালক হয়, তাহলে তার অভিভাবকেরা অপহরণের মামলাও করতে পারেন।

Kommentarer