দিলশাদ থেকে সাবিনা হয়ে ওঠার গল্প ‘জুঁই ফুল’

Комментарии · 14 Просмотры

বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমীন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর কণ্ঠে বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা ও সংগ??

বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমীন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর কণ্ঠে বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা ও সংগ্রামের সুর গেঁথে আছে। তাঁকে ঘিরে এবার নির্মিত হলো বিশেষ ডকুফিল্ম ‘জুঁই ফুল: সাবিনা ইয়াসমীন’। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ নির্মাণ করেছেন এই প্রামাণ্যচিত্র।
সাবিনা ইয়াসমীনের জন্মদিন ৪ সেপ্টেম্বর। জন্মদিন উপলক্ষে এর পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হবে ডকুফিল্মটি। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে চ্যানেল আই কার্যালয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনী হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং সাবিনা ইয়াসমীন।

বিকেল পৌনে চারটায় চ্যানেল আইয়ে প্রবেশ করেন সাবিনা ইয়াসমীন। সবুজগালিচা বেয়ে এগিয়ে আসেন বাংলা সংগীতের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। গাড়ি থেকে নামতেই ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করেন শাইখ সিরাজ। সাড়ে চারটায় শুরু হয় প্রদর্শনী। ২০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই। নিজের জীবনীভিত্তিক কাজ নিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন বললেন, ‘অনুভূতি তো আসলে প্রকাশ করতে পারছি না। কী ভাষায় বলব, বুঝতে পারছি না। শাইখ সিরাজ ভাই যে এত সুন্দর করে এটি নির্মাণ করলেন, দেখে তো অবাক হয়ে যাচ্ছি। এতটা দারুণ আর গোছানো হবে আমি ভাবিনি।’
ডকুফিল্মটি নিয়ে নির্মাতা শাইখ সিরাজ বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমীন শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস। তাঁর সংগ্রাম, সাফল্য, শিল্পীসত্তা—সবকিছুই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি এই ডকুফিল্মে। এটি কেবল ইতিহাসের দলিল নয়, বরং একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ।’

 

ডকুফিল্মে কী থাকছে

‘জুঁই ফুল: সাবিনা ইয়াসমীন’-এ উঠে এসেছে ষাটের দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাবিনা ইয়াসমীনের সংগীতযাত্রা, ব্যক্তিজীবনের অজানা অধ্যায় এবং স্মৃতিময় গল্প। একান্ত সাক্ষাৎকার, আর্কাইভাল ভিডিও ও ছবি, কালজয়ী গানের পরিবেশনা এবং সমসাময়িক শিল্পীদের অংশগ্রহণ ডকুফিল্মটিকে করেছে বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমী। তিন ধাপে নেওয়া সাক্ষাৎকারে সমান্তরাল সম্পাদনায় ফুটে উঠেছে শিল্পীর হাসি, আবেগ ও সংগ্রামের গল্প। তাঁর প্রথম গান গাওয়ার স্মৃতি, প্রথম পারিশ্রমিক পাওয়া, ১২ বছর বয়সে আলতাফ মাহমুদের হাত ধরে সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ পাওয়া কিংবা দিলশাদ ইয়াসমীন থেকে বাংলা গানের সাবিনা ইয়াসমীন হয়ে ওঠার যাত্রা এতে বিশেষভাবে ধরা দিয়েছে।

বিশেষ প্রদর্শনীতে সাবিনা ইয়াসমিন ও শাইখ সিরাজ
বিশেষ প্রদর্শনীতে সাবিনা ইয়াসমিন ও শাইখ সিরাজচ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে

বাংলা গানের ‘জুঁই ফুল’
মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার মঞ্চে গান করেন সাবিনা ইয়াসমীন। ১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সুরে ছোটদের জন্য গান গেয়ে সংগীতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করেন। একই বছর এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে গান করেন।

আর ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন।
এরপর একে একে হয়ে ওঠেন বাংলা গানের অপরিহার্য কণ্ঠস্বর। সত্য সাহা, আলম খান, সুবল দাস, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলসহ অসংখ্য কিংবদন্তি সুরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। কণ্ঠ মিলিয়েছেন মান্না দে, কিশোর কুমার, আশা ভোসলে, কুমার শানু, শ্যামল মিত্রের মতো শিল্পীর সঙ্গে।

সাবিনা ইয়াসমিনকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন শাইখ সিরাজ
সাবিনা ইয়াসমিনকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন শাইখ সিরাজচ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে

গেয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি চলচ্চিত্রের গান। ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো’, ‘সবার তো ভালোবাসা দরকার’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’—এমন অজস্র গান আজও শ্রোতার হৃদয়ে বাজে।
সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৪ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সাবিনা ইয়াসমীন বাংলা গানের ইতিহাসে একটি পূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছেন।
২০২০ সালে প্রয়াত কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্রে তিনি সর্বশেষ কণ্ঠ দেন। শুধু তা–ই নয়, ছবিটির চারটি গানে প্রথমবার সুরকার হিসেবেও কাজ করেন।

Комментарии