২০২৪ সাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ফাস্ট বোলারের ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই বোলারের চুল থেকে হাঁটাচলার স্টাইল, লম্বা রানআপ, ডেলিভারি ‘স্ট্রাইড’ আর উইকেট উদ্যাপন—সবকিছুই যেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি শোয়েব আখতারের হুবহু কপি। তখন অনেকেই মজা করে কমেন্ট বক্সে লিখেছিলেন, এই ফাস্ট বোলার নাকি ‘শোয়েব আখতারের থেকেও বেশি শোয়েব আখতার’!
সেই বোলারের নাম মুহাম্মদ ইমরান। এক বছরের মধ্যেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ওমান জাতীয় দলে। গত ফেব্রুয়ারিতে ওমানের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। এবার এই পেসার এশিয়া কাপের স্কোয়াডেও জায়গা পেয়েছেন। মঙ্গলবার ওমান তাদের ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে, যেখানে ইমরানও আছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হবে আট দলের এশিয়া কাপ।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ছিল ওমান ডি১০ লিগের। ২০২৪ সালের সেই টুর্নামেন্টে আইএএস ইনভিনসিবলসের হয়ে খেলেছিলেন ইমরান। এই পেসার নিয়েছিলেন ১৪ ম্যাচে ২১ উইকেট, গড় ছিল ১০.৭১ আর ইকোনমি রেট ৮.৬৫। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর সাফল্যের যাত্রা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বছর। গত মে মাসে কানাডার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তাঁর। ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত এই একটি ওয়ানডেই খেলেছেন ইমরান। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২টি, নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে উইকেট পাননি।
ইমরানের গল্প একেবারেই সিনেমার মতো। ১৮ বছর বয়সে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার দেরা ইসমাইল খানে আফগান সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে গোপনে বেরিয়ে পড়েন। পরিবারের ইচ্ছা ছিল ইমরান সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন, কিন্তু তিনি ট্রাক ধরে তিন দিনে পৌঁছে যান করাচিতে।
করাচির অনূর্ধ্ব-১৯ ট্রায়ালে ইমরান ঝড়ও তোলেন। ৬ ম্যাচে নেন ২১ উইকেট। ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে আলোচনায় আসেন। তবু পাকিস্তানের হয়ে তাঁর ভাগ্য খোলেনি।
তবে দৃশ্যপট পাল্টে যায় ২০১৯ সালে। ইমরানের এক বন্ধু তাঁর বোলিংয়ের ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করলে একটি ওমানি ফ্র্যাঞ্চাইজির চোখে পড়ে। এরপর তিনি সেই ফ্র্যাঞ্চাইজির সহায়তায় চলে যান ওমানে। জীবিকা নির্বাহে দিনে ১২ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টলেশনের কাজ করেছেন, আর বাকি সময়ে প্রশিক্ষণ। এখন সেই ইমরান খেলবেন এশিয়া কাপে।
ওমান এবারই প্রথম এশিয়া কাপে খেলছে। তাদের গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইমরানদের প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে, ১২ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে।