এই সিনেমার গল্পটিও যেন কোনো সিনেমার গল্পকে হার মানায়। মাত্র ৭০ লাখ রুপি বাজেট ছিল। বাজেট ও পরিসর কম দেখে সিনেমায় কেউ নাম লেখাতে চাননি। শুরুতে লগ্নিও করতে চাননি প্রযোজক। সেই সিনেমাই পরে গড়েছিল রেকর্ড। ৩০০ দিনে আয় করেছিল ৫০ কোটি রুপি, যা বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো। কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির এই সিনেমার নাম ‘মুঙ্গারু মেল’। বিভিন্ন সময় সমালোচক ও দর্শকেরা এই রেকর্ডের পেছনে পাঁচটি কারণের কথা বলেছিলেন।
দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছিল গল্প
শুরুতে বেশ কিছু তারকাকে নিয়ে সিনেমার শুটিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু বাজেট কম থাকায় কেউ রাজি হননি, নতুন নির্মাতা হিসেবেও গুরুত্ব পাননি যোগরাজ ভাট। এ ছাড়া অনেকেই সিনেমার গল্প ভালো না বলে এড়িয়ে গেছেন। সেই গল্পই মুক্তির পর মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলেছিল। যা ছিল ভারতীয় সিনেমার মাল্টিপ্লেক্সের জন্য নতুন রেকর্ড। এর মূল কারণ ছিল, সিনেমাটি দর্শকদের টেনেছিল। বেশির ভাগ দর্শকদের কাছে গল্পটি ছিল আবেগপ্রবণ, তাঁদের স্পর্শ করেছিল। সিনেমাটিতে তুলে ধরা নিজস্ব সংস্কৃতি দর্শক পছন্দ করেছিলেন। গল্পটি তরুণ–তরুণীর প্রেমের। যে তরুণ একসময় জানতে পারে, তার পছন্দের মানুষের বিয়ে ঠিক হয়েছে। সাদামাটা মনে হলেও এটির উপস্থাপনাই দর্শকদের নজর কেড়েছিল। সিনেমায় একাধিক টুইস্ট ছিল।

সিনেমার সংগীত
দর্শকদের নজর কেড়েছিল সিনেমার আবহসংগীত। এ ছাড়া স্বল্প আয়োজনে গানগুলোও শ্রুতিমধুর হয়েছিল। অনেক সমালোচক মনে করেন, সিনেমা বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ার অন্যতম কারণ ছিল রোমান্টিক গান আর ঘটনার সঙ্গে গানগুলোর ব্যবহার। সুনিধি চৌহান, শ্রেয়া ঘোষালদের গানগুলো ২০০৬ সালে দর্শকদের মুখে মুখে ছিল। সিনেমাটির একাধিক গান জনপ্রিয় হয়। গানের স্বত্বও কোটি টাকার বেশি বিক্রি হয়। ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে সেরা পরিচালক, সেরা সিনেমার পাশাপাশি এটি সেরা সংগীতের জন্যও পুরস্কৃত হয়েছিল।
নতুন মুখই দর্শক টানে
একসময় যে গল্পটিতে অনেকেই অভিনয় করতে চাননি, লগ্নি করতে চাননি কোনো প্রযোজক। বাধ্য হয়েই সিনেমাটি অপরিচিত দুই তরুণ-তরুণীকে দিয়ে নির্মিত হয়। এই নতুন দুই মুখই দর্শক গ্রহণ করেন। তাঁদের রসায়ন দর্শকদের উপভোগ্য করে তোলে। গল্প, পটভূমির সঙ্গে তাঁরা ছিলেন মানানসই। দুই অভিনয়শিল্পী গণেশ ও পূজার এটি প্রথম জুটি হয়ে কাজ করা। এটি ছিল পূজা গান্ধীর দ্বিতীয় সিনেমা। গণেশ এর আগে বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করলেও এটা ছিল তাঁর ক্যারিয়ারে প্রথম আলোচিত সিনেমা। দুজনের ভাগ্য বদলে দেয় সিনেমাটি। এটি ছিল পরিচালকের দ্বিতীয় সিনেমা।

বৃষ্টির মধ্যে শুটিং
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটাই ভারতীয় কোনো সিনেমা, যার ৮০ ভাগ শুটিং হয়েছিল বৃষ্টির মধ্যে। এটা দর্শকদের নতুন এক ভিজ্যুয়াল দিয়েছিল। যে কারণে কেউ কেউ সিনেমার ফ্রেমকে কবিতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বেশির ভাগ শুটিং হয়েছে কর্ণাটকের মাদীকেরি শহরসহ বিভিন্ন লোকেশনে। দর্শকদের কাছে লোকেশন একদমই নতুন ছিল। লোকেশনগুলো সিনেমার ক্লাইমেক্সের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া বিশেষভাবে সিনেমাটির জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন এর চিত্রগ্রাহক। এটি ছিল চিত্রগ্রাহকের প্রথম কাজ। এর আগে তিনি পার্টটাইম ফটোগ্রাফির কাজ করতেন।

দর্শক বাড়িয়েছিল দর্শক
সিনেমাটি দুই বছরের বেশি সময় চলেছিল। দেশের বাইরেও সিনেমাটিকে গ্রহণ করেন ভারতীয় দর্শক। সব মিলিয়ে আয় ছিল ৭০ কোটি রুপি। কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এটিই ৫০ কোটি রুপি আয় করা প্রথম সিনেমা। এই স্বল্প বাজেটের সিনেমাটি আলোচিত হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল, যাঁরাই সিনেমাটি দেখেছিলেন তাঁরাই এর প্রশংসা করেছিলেন। যে কারণে মুখে মুখে সিনেমাটির প্রচার বাড়তে থাকে। এটাই দর্শকপ্রিয়তা বাড়ায়।
তথ্য: আইএমডিবি, ইন্ডিয়া ডটকম
