দেশের প্রথম ‘মেগাস্টার’ উজ্জ্বল উপাধি নিয়ে মাথা ঘামান না

Comentários · 45 Visualizações

অভিনেতা জাহিদ হাসান মন্তব্য করেছিলেন শাকিব খানের ক্ষেত্রে ‘মেগাস্টার’ শব্দটা কানে লাগে। এ কথার কারণে দীর্ঘ

অভিনেতা জাহিদ হাসান মন্তব্য করেছিলেন শাকিব খানের ক্ষেত্রে ‘মেগাস্টার’ শব্দটা কানে লাগে। এ কথার কারণে দীর্ঘ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানকে কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়। শেষ জাহিদ হাসান কার্যত দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এদেশের চলচ্চিত্রে ‘মেগাস্টার’ যাকে বলা হয়, তিনি নায়ক উজ্জ্বল।

 
এদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি যখন ভরা যৌবনে তখন অজস্র সুপার ডুপার হিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিনীত ‘নসিব’ ছবিটি টানা ৯ মাস ধরে চাঁদপুরের একটি সিনেমা হলে চলেছিল। যা এদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিরল। ‘মেগাস্টার’ বলা হলেও তিনি এসব উপাধি কিংবা তকমা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান না উজ্জ্বল।
 

 

উজ্জ্বলের আসল নাম আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। এই অভিনেতা ১৯৪৬ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার জন্তিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৭-৬৯ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকে বা টিএসসিতে অনুষ্ঠিত নাটকে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতেন আর সুজাতা বা রুবিনা ছিল তার সহ-শিল্পী।

 

 

উজ্জ্বল ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত নাটক করতেন ঢাকা টেলিভিশনে। নাটকের অভিনয় দেখে প্রযোজকেরা তাকে চলচ্চিত্রে নেওয়ার আগ্রহ দেখান। এরপর ১৯৭০ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত বিনিময় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। প্রথম চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। এরপর ১৯৭২ সালে তিনি ইউসুফ জহির পরিচালিত হাস্যরসাত্মক-নাট্যধর্মী ইয়ে করে বিয়ে ছবিতে বুলবুল আহমেদ ও ববিতার সাথে অভিনয় করেন।

 
একই বছর সুভাষ দত্ত পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

 

উজ্জ্বলকে এই দেশের চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে ‘মেগাস্টার’ তকমা। মেগাস্টার উপাধি কিভাবে পেয়েছেন উজ্জ্বল- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে নায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেখেন আমি কিভাবে চলচ্চিত্রে এলাম, সেটা প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু কে আমাকে কি উপাধী দিয়েছে সেটা আমি নিজের মুখে বলতে চাই না, এটা আমার কাছে খুবই সিলি মনে হয়। এখন এসব নিয়ে যা আলোচনা হয় এসব আমাদের কাছে সাবজেক্ট না। আমরা চলচ্চিত্রের মানুষ এটাই আমাদের বড় পরিচয়। আমাকে মেগাস্টার বলা হয় এটা অবশ্যই বড় বিষয়, কিন্তু আমার মুখ থেকে এটা ভালো শোনায় না। চলচ্চিত্রে দীর্ঘ জীবন পাওয়া সহজ না,তা হয়েছে। এই প্রজন্মের কাছেও আমি পরিচিত, এটা তো এমনি এমনি হয়নি। আমাকে অর্জন করতে হয়েছে।’

Hero Uzzal

কবরীর সঙ্গে উজ্জ্বল

উজ্জ্বল নিজে না বললেও জানা গেছে কিভাবে তিনি পেয়েছেন মেগাস্টার উপাধি। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দুলাল খান জানালেন, উজ্জ্বল ভাইয়ের পরপর বেশ কয়েকটা সিনেমা হিট হয়। সুপার ডুপার হিট। সে সময় নায়ক উজ্জ্বলকে মেগাস্টার উপাধি দেন চিত্রালী পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ জামান চৌধুরী খোকা। দুলাল খান বলেন, ‘‘আশির দশকের শুরুতে নসিব, উসিলা নালিশের মতো চলচ্চিত্রগুলো যখন সুপার ডুপার হিট হলো, সে সময় চিত্রালীতে আহমেদ জামান চৌধুরী খোকা একটা আর্টিকেল লেখেন, সেসময় ‘ড্যাশিং হিরো’ সোহেল চৌধুরীর ওপরে কেউ নাই, তখনই আহমেদ জামান চৌধুরী তাঁর আর্টিকেলে উজ্জ্বলকে ‘মেগাস্টার’ তকমা দেন। আর এই উপাধি ‘জি হ্যাঁ ভাই’ খ্যাত মাজহারুল ইসলামের কণ্ঠে রেডিওর মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।’’  

এসব চলচ্চিত্রের বিষয়ে অবশ্য উজ্জ্বলও সাক্ষাৎকারে বলেছেন,  ‘‘মমতাজ আলী পরিচালিত ‘নসিব’, ‘উসিলা’, ‘নালিশ’সহ বেশ কয়েকটি অ্যাকশন সিনেমার নায়ক আমি। এই সিনেমাগুলো আমাকে এদেশের মানুষের কাছে অ্যাকশন সিনেমার অন্যতম প্রধান নায়ক হিসেবে তুলে ধরে। ‘নসিব’ সিনেমাটি সেই সময়ে ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ হলে কয়েক মাস ধরে টানা চলেছে। মনে আছে, চাঁদপুরের একটি হলে ‘নসিব’ টানা নয় মাস চলেছিল। ঢাকা শহরে ‘নসিব’ চলাকালীন হলের কাউন্টার খোলার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যেত। পুরনো ঢাকায় প্রতিটি হলে ‘নসিব’ সিনেমার লেট নাইট শো চলত। এটা আমার প্রযোজিত সিনেমা। এই ছবিটি চালিয়ে হল মালিকরা যেমন অর্থ পেয়েছিলেন, তেমনি ভাবে আমিও প্রচুর অর্থ পেয়েছিলাম। ‘নসিব’ সিনেমাটি ছিল আমার নায়ক জীবনের অন্যতম একটি রেকর্ড।’’ 

তবে উজ্জ্বল মনে করেন এইসব উপাধি কিংবা বিশেষণ আসলে কিছুই নয়। মূল জিনিসটা কাজ। তিনি বলেন, ‘আসলে কাজটাই করতে হবে। যেমন শাকিব খান কাজ করে আজকের এই অবস্থান অর্জন করেছেন। তাঁর আগে আরেকজন করেছেন, তাঁর পূর্বে হয়তো আরেকজন করেছেন। কাজ করলে মানুষ মনে রাখবে। ফলে অভিনয়ের দিকেই মনোযোগী হতে হবে, তাহলেই মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব।’

উজ্জ্বল মনে করেন এখন চলচ্চিত্রের অবস্থা তলানিতে চলে এসেছে, এটাকে জীবন্ত করতে হবে। আর এই ভূমিকা সাংবাদিকসহ সকলকে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা যে পর্যায়ে এসেছে তাতে করে সকলের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এফডিসিকে এখন যা দেখা যায়, তা তো এফডিসি নয়। এফডিসিতে প্রতিটা ফ্লোরে দিন রাত কাজ চলবে। এফডিসি হবে জমজমাট। এখন শুধু ফেসবুকে ছবি দিয়ে নিজেকে প্রচার করে তো সাস্টেইন করা যাবে না। তরুণদের এটা বুঝতে হবে। মেধার ব্যবহার করতে হবে।

Comentários