নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আগামী ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে পড়েছে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ। জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় তারা ছদ্মবেশে মাঠে নেমেছে।
এক্ষেত্রে তারা কখনো আন্দোলনকারীদের মধ্যে ভিড়ে ঘটাচ্ছে বিশৃঙ্খলা। কখনো সাধারণ লোকের বেশ ধারণ করে ছড়াচ্ছে উসকানি। প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব , নার্স ও কৃষি ডিপ্লোমা ইস্যুতে অস্থিরতা, হঠাৎ করে কূটনৈতিক পাড়া ও দূতাবাস ঘিরে আতঙ্ক সৃষ্টি, বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অসন্তোষ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। ডাকসু, জাকসু, চাকসু ও রাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখেও ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির ছক কষছেন দলটির নেতারা। এমনকি সবশেষ ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায়ও ছদ্মবেশে থাকা দলটির নেতা-কর্মীদের যোগসাজশ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, পতিত আওয়ামী লীগের নেতারা পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতায় কার্যালয় বানিয়ে সেখান থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বাংলাদেশে সরবরাহ করছেন, যাতে উসকানি-অস্থিরতা ছড়িয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পথ তৈরি করা যায় এবং বহুল কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক নির্বাচন ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, জুলাই আন্দোলনের পরপরই বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দাবি জানালে আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী একটি দেশ সেই নির্বাচনের দাবিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানায়। নির্বাচনের দাবি প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেও ফ্যাসিবাদী দল ও তাদের প্রশ্রয়দাতা দেশটির উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী দেশের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির সঙ্গে অপরাপর দলগুলোর দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষাপট তৈরি করা। এরপর সরকার ও নির্বাচন কমিশন যখনই নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তখনই নির্বাচন ভণ্ডুলের জন্য প্রকাশ্যে মাঠে নামার ছক কষছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা হত্যায় অভিযুক্ত দলটি চায়, যেকোনোভাবে নির্বাচন ঠেকাতে।
কলকাতা, লন্ডন ও ব্রাসেলসের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ মনে করে এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই যেকোনোভাবে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হলে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। আর নির্বাচন হয়ে গেলে শেখ হাসিনার বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ও আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব না থাকায় দলটির রাজনীতিতে ফেরা অনেকটাই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাবে। এজন্য সামনের নির্বাচন যেকোনোভাবে ঠেকাতে তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নামছে।
আওয়ামী লীগ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র জানা গেছে, ‘মঞ্চ ৭১’ নামে নতুন উদ্ভূত সংগঠন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম, মুক্তিযোদ্ধা ইস্যু ও চলমান ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ নানান ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আগামী শীতে দেশে বড় ধরনের অরাজকতা তৈরির পরিকল্পনা করছে দলটি। এজন্য কলকাতা থেকে বড় অংকের টাকাও বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পতিত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ‘মঞ্চ ৭১’-এর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও একে ঘিরে দলটির পক্ষে বয়ান তৈরির অপচেষ্টা ছিল তারই অংশ। লতিফ সিদ্দিকীকে ইতোমধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের সঙ্গে প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যোগসাজশের প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। ছাত্রলীগের বুয়েট ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং সারাদেশ থেকে পালিয়ে ঢাকায় অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাদের সেই আন্দোলনে দেখা গেছে। গোয়েন্দারা পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা ও শিক্ষার্থীদের উস্কানিদাতা ছাত্রলীগের নেতাদের শনাক্তের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
সূত্র মতে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রিপন-রোটন ও সোহাগ-নাজমুল কমিটির সাবেক কিছু নেতাকে বিগত কয়েক মাস রাজপথে আন্দোলন ও মিছিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটে তা সফল হয়নি। বর্তমানে সেই অর্থ সংকট কেটে গেছে। তাই রাজপথে এখন নিষিদ্ধ দলটির সক্রিয়তা আগের চেয়ে বাড়ছে।