ফেসবুক এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য হয়ে উঠেছে আয় করার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। প্রোফাইল বা পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে উপার্জনের সুযোগ দিচ্ছে ফেসবুক। আপনি যদি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন, তাহলে ভিডিও, লাইভ, রিলস কিংবা ব্র্যান্ড পার্টনারশিপের মাধ্যমে সহজেই আয় করতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো ফেসবুক মনিটাইজেশন। চলুন জেনে নিই, কীভাবে এই ফিচার ব্যবহার করে আপনিও আয় শুরু করতে পারেন।
কত ফলোয়ার থাকলে ফেসবুক থেকে আয় করা সম্ভব
ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া আর শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়—এখন এটি অনেকের জন্য রীতিমতো আয়ের প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বর্তমানে কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে—ফেসবুকে আয় করতে হলে ঠিক কত ফলোয়ার থাকা দরকার? কত ভিউ পেতে হবে? আর ১০০০ ফলোয়ার হলেই কি আয় শুরু করা যায়? চলুন, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা যাক বিস্তারিতভাবে।
ফেসবুক কীভাবে মানিটাইজ করে?
ফেসবুকের মানিটাইজ ব্যবস্থা মেটা ফর ক্রিয়েটরস প্রোগ্রামের অধীনে চলে, যা দর্শকদের নিয়মিত কন্টেন্ট প্রদানকারী নির্মাতাদের লক্ষ্য করে। ফেসবুক আয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম অফার করে, যেমন ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন (ভিডিওর মধ্যে চলমান বিজ্ঞাপন), ফ্যান সাবস্ক্রিপশন (সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকে উপার্জন), ব্র্যান্ডেড কন্টেন্ট এবং ফেসবুক রিল বোনাস।
আপনি আয় শুরু করতে পারেন এভাবে
আপনি যদি একজন ভিডিও নির্মাতা হন ও ফেসবুকে নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করেন, তাহলে আপনি ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন থেকে আয় শুরু করতে পারেন। তবে এর জন্য কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। প্রথমত, আপনার পেজে কমপক্ষে ১০,০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে এবং গত ৬০ দিনে কমপক্ষে ৬০,০০০ মিনিট ভিডিও দেখার সময় থাকতে হবে। এছাড়া, আপনার কন্টেন্ট ফেসবুকের কমিউনিটি নির্দেশিকা ও মানিটাইজেশন নীতি অনুসারেও হতে হবে।
১০০০ ফলোয়ারের জন্য টাকা পাওয়া যাবে?
এখন প্রশ্ন উঠছে যে ১০০০ ফলোয়ার পাওয়ার পর আপনি কি টাকা পেতে শুরু করবেন? এর সোজা উত্তর হল, না। যদি আপনার মাত্র ১০০০ ফলোয়ার থাকে তাহলে ফেসবুক আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা দেয় না। হ্যাঁ, যদি আপনার রিচ ভালো হয়, ভিডিওতে ভিউ বৃদ্ধি পায় ও আপনি একটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে লেনদেন করেন, তাহলে আপনি ব্র্যান্ড স্পনসরশিপের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। কিন্তু মেটার অফিসিয়াল মনিটাইজেশন নীতি অনুসারে, ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন ও বোনাস প্রোগ্রামের মতো বৈশিষ্ট্যগুলো তখনই পাওয়া যায় যখন আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা ও ভিউ টাইম তাদের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে।
ফেসবুক রিলের মাধ্যমেও ক্রিয়েটররা ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। মেটা ‘রিলস বোনাস প্রোগ্রাম’ শুরু করেছে যেখানে কিছু নির্বাচিত ক্রিয়েটরকে তাদের রিলের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে বোনাস দেওয়া হয়। এর জন্য ফেসবুক নিজেই ক্রিয়েটরদের আমন্ত্রণ জানায় ও সবাইকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক নয়।
সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকে মাসিক ফি
এর পাশাপাশি ফ্যান সাবস্ক্রিপশন অর্থাৎ সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকে মাসিক ফি নেওয়াও আয়ের আরেকটি উপায়। যদি আপনার বিশ্বস্ত দর্শক থাকে, তাহলে আপনি তাদের এক্সক্লুসিভ কন্টেন্টের বিনিময়ে মাসিক সাবস্ক্রিপশন অফার করতে পারেন। সামগ্রিকভাবে, ফেসবুকে অর্থ উপার্জনের জন্য কেবল ফলোয়ার বাড়ানো যথেষ্ট নয়। নিয়মিত মানসম্পন্ন কন্টেন্ট সরবরাহ করা, দর্শকদের সঙ্গে জড়িত থাকা এবং ফেসবুকের নীতি অনুযায়ী কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম করেন ও ধৈর্য ধরে কাজ করেন, তাহলে ফেসবুক আপনার জন্য একটি ভালো উপার্জনের প্ল্যাটফর্মও হয়ে উঠতে পারে।