বিপদে ধৈর্যধারণ জীবনে কল্যাণ নিয়ে আসে

commentaires · 37 Vues

আল্লাহ তাআলা কখনো আমাদের বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কখনো ওই বিপদের মধ্য দিয়েই আমাদের উপর কল্যাণ ও রহমত বর্ষণ

আল্লাহ তাআলা কখনো আমাদের বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কখনো ওই বিপদের মধ্য দিয়েই আমাদের উপর কল্যাণ ও রহমত বর্ষণ করেন; কিন্তু তা আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারিনা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদে আক্রান্ত করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫)

সুতরাং বিপদে আমাদের ধৈর্যহারা হওয়া কিংবা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। বরং মুমিনের উচিত, বিপদের সময় ধৈর্যধারণ করা এবং সেই সঙ্গে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, এটাই আমাদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।

বিপদে ধৈর্যধারণ করার বিষয়টি বোধগম্য, কিন্তু বিপদে শোকর আদায়ের কোনো ব্যাপার থাকতে পারে কি? হ্যাঁ, ধৈর্যধারণের পাশাপাশি বিপদে শুকর আদায়েরও ব্যাপার আছে। বিপদেও কেন শুকর আদায় করতে হবে? ওলামায়ে কেরাম এর কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন—

প্রথমত, আল্লাহ তাআলা আমাকে যে বিপদ দিয়েছেন, এর ওসিলায় হয়তো তিনি বড় বিপদ থেকে আমাকে রড়্গা করেছেন।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ আমাকে যে বিপদ দিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে হয়তো তিনি আমাকে বড় ধরনের উপকার বা দয়া করেছেন, যা আমি স্বল্প জ্ঞানের কারণে উপলব্ধি করতে পারিনি।
তৃতীয়ত, আমার ওপর আরোপিত বিপদের কারণে আল্লাহ তাআলা হয়তোবা আমার গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন।
চতুর্থত, এই বিপদ দিয়ে হয়তো তিনি পরকালে আমাকে একটি বড় বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
পঞ্চমত, এই বিপদের কারণে হয়তো তিনি জান্নাতে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন।

মোটকথা, কেউ যদি বিপদে পড়ে সবর করে, তখন আল্লাহ পাক তাকে পুরস্কৃত করবেন—এ তো স্বাভাবিক কথা। কিন্তু আমাদের জন্য আশার বাণী হলো, বিপদে সবর করার পাশাপাশি যদি ওই বিপদসঙ্কুল অবস্থায় শুকর আদায়ও করা হয়, তখন আমাদের জন্য আছে দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা।

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ চান, তখন দুনিয়াতে তার শাস্তি ত্বরান্বিত করেন, আর যখন কোনো বান্দার অকল্যাণ চান, তখন তার পাপগুলো রেখে দিয়ে কিয়ামতের দিন তাঁর প্রাপ্য পূর্ণ করে দেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)

অত্র হাদিসের আলোকে বলা যায়, মুমিন বান্দা নিজের কৃত অপরাধের কারণেও বিপদের মুখোমুখি হতে পারে, আবার বিপদাক্রান্ত হতে পারে প্রভুর সঙ্গে তার ভালোবাসার যাচাইস্বরূপও।

বিপদ মুমিনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে কল্যাণকর হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বস্তুত তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করছো যা তোমাদের পক্ষে বাস্তবিকই মঙ্গলজনক। পক্ষান্তরে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করছো যা তোমাদের জন্য বাস্তবিকই অনিষ্টকর এবং আল্লাহই অবগত আছেন আর তোমরা অবগত নও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৬)

অবস্থাদৃষ্টে বিপদের মধ্যে অকল্যাণ মনে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা আমাদের কাছে কল্যাণের সুমহান বার্তা নিয়ে আগমন করে। মূসা (আ.)-কে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর মাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল; ইউসুফ (আ.)-কে মেরে ফেলার জন্য কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল; মারইয়াম (আ.) কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই ঈসা (আ.)-কে অলৌকিকভাবে জন্ম দিয়েছিলেন; আয়েশা (রা.)-কে মিথ্যা কলঙ্কে অভিযুক্ত করা হয়েছিল; ইউনুস (আ.)-কে তিমি মাছ গিলে ফেলেছিল; ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল; মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.) মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

একবার ভেবে দেখুন, এই ঘটনাগুলো ঘটার সময় লোকেরা কী ভেবেছিল? আর পরবর্তীতে ঘটনাগুলো কোন দিকে মোড় নিয়েছিল! নিশ্চয়ই পরবর্তী অবস্থা অনেক সুন্দর ও মোবারকময় হয়েছিল। অতএব, দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আপনার জন্যও আছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নানা কল্যাণ ও শুভ পরিকল্পনা। প্রকৃত ঈমানদারের জন্য ভালো-মন্দ উভয়টিই কল্যাণকর হয়ে থাকে। বিপদের মধ্য দিয়েও আল্লাহ আমাদের ওপর দয়া ও উপকার করেন।

লেখক: মুহাদ্দিস, ছারছীনা দারুসসুন্নাত জামেয়া নেছারিয়া দীনিয়া
নেছারাবাদ, পিরোজপুর।

commentaires