লালদিয়ার চরে ৮শ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ডেনিশ কোম্পানি

Kommentarer · 2 Visninger

গরীর পতেঙ্গায় প্রস্তাবিত লালদিয়ার চর টার্মিনাল নিয়ে ডেনিশ কোম্পানি এ পি মুলার–মার্স্ক লাইনের সাথে অচিরেই চ??

গরীর পতেঙ্গায় প্রস্তাবিত লালদিয়ার চর টার্মিনাল নিয়ে ডেনিশ কোম্পানি এ পি মুলার–মার্স্ক লাইনের সাথে অচিরেই চুক্তি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। ফিনেন্সিয়াল এডভাইজারের দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে নেগোসিয়েশন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। টুকটাক কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও আগামী মাসের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়ন এবং সক্ষমতার নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সরকার বিশ্বের শিপিং সেক্টরের মোগল হিসেবে খ্যাত ডেনিশ কোম্পানি এ পি মুলারকে লালদিয়ার চর টার্মিনালটির দায়িত্ব হস্তান্তর করছে। কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে এই টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

 

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে স্বীকৃত লালদিয়ার চর। ৫২ একরেরও বেশি জায়গা রয়েছে লালদিয়ার চরে। দীর্ঘদিন এই জায়গা স্থানীয়দের দখলে ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৭শ’ পরিবারের কাছে থাকা জায়গাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে জায়গাটিতে একটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চেষ্টা করে আসছিল সরকার। বন্দরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান জেটিতে পৌঁছাতে জাহাজগুলোকে দুইটি বিপজ্জনক বাঁক পার হতে হয়। কিন্তু লালদিয়ার চরে কোন বাঁক নেই। তাছাড়া বিদ্যামান বন্দরে ড্রাফটের সমস্যা রয়েছে। বড় জাহাজ হলে জেটিতে ভিড়ানো যায় না। লালদিয়ার চরে অন্ততঃ এই অসুবিধা হবে না। প্রচুর ড্রাফট থাকায় কিছুটা ঘষে মেজে নিলে লালদিয়ার চরে ১০.৫০ ড্রাফটেরও জাহাজ অনায়াসে ভিড়ানো যাবে। প্রস্তাবে ৪৫০ মিটার টানা জেটি এবং ব্যাকইয়ার্ড নির্মাণের কথা থাকায় যে কোন ল্যান্থের জাহাজ এই জেটিতে ভিড়িয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে।

 

সূত্র জানিয়েছে, ভারতের আদানি পোর্টস, দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, ফ্রান্সের বোলোর, চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক গ্লোবাল পোর্ট সার্ভিসেস লালদিয়ার চরে কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সব তোড়জোড়ও থেমে যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ লালদিয়া চরের জায়গাটিকে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) ব্যাকইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি হিসেবে গড়ে তোলারও চিন্তাভাবনা শুরু করে।

 

বছর কয়েক আগে এ পি মুলার– মার্স্ক ( মার্স্ক লাইন) পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে অপারেশন শুরু করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পিসিটি সৌদি আরবকে দিতে হওয়ায় এপি মুলারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এবার এপি মুলার লালদিয়ার চরে বড় ধরণের বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায়। তারা শুধু টার্মিনালই নির্মাণ নয়, একই সাথে প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্টও স্থাপন করবে বলে জানিয়েছে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তারা যে অবস্থায় বন্দরটি থাকে ওভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করবে।

 

বিশ্বের শিপিং সেক্টরের মোগল হিসেবে খ্যাত এ পি মুলার–মার্স্ক গ্রুপ চট্টগ্রাম বন্দরে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। তারা ইতোমধ্যে নিজেরাই প্রকল্পটির ব্যাপারে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে। ফিনেন্সিয়াল এডভাইজাইজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইন্টনারন্যাশনাল ফিনেন্সিয়াল কর্পোরেশনকে (আইএফসি)। আইএফসি ইতোমধ্যে একটি রিপোর্ট হস্তান্তর করেছে। ওই রিপোর্টে কি কি শর্তে টার্মিনালটি নেয়া যেতে পারে, বছরে কত টাকা ইজারা দেয়া হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, রাজস্ব আয়ের পরিমান কেমন হবে, চুক্তিতে কি কি শর্ত থাকবে–ইত্যাদিসহ সার্বিক বিষয়ে আইএফসি রিপোর্ট দিয়েছে। ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং এপি মুলার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দরদাম এবং শর্তগুলো ঠিকঠাক করে নেবে।

 

৪০ বছরের জন্য দেয়া হচ্ছে লালদিয়ার চর। সেখানে শুধু কন্টেনার নয়, বাল্ক কার্গোর হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধাও থাকবে। মাল্টিপারপাস এই টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৪৫০ মিটার, নদীর গভীরতা এখানে ১১ মিটারের বেশি। এতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। এপি মুলার যদি স্বাভাবিক গতি নিয়েও এই টার্মিনালে কাজ শুরু করে তাহলে বাংলাদেশের বন্দর বিশ্বের শিপিং সেক্টরে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বন্দরের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ডেনিশ এই কোম্পানিটি বিশ্বের ১১৬টি দেশে ব্যবসা করছে। তাদের বহরে ৮শ’রও বেশি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। বিশ্বের আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনের অন্ততঃ ১৫ শতাংশ বাজার এককভাবে এই শিপিং মোগলের হাতে। বন্দরের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যেই এপি মুলারের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তি সম্পাদিত হবে। এরপরই মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দুইটি পৃথক দাগে মোট ৩৯ দশমিক ১৫ একর জায়গা এপি মুলারকে প্রদান করছে। এরমধ্যে একটি দাগে ৩২ একর এবং অপর দাগে ৭.১৫ একর জায়গা রয়েছে বলেও বন্দর সূত্র জানিয়েছে।

Kommentarer