বছরে গচ্চা আড়াই হাজার কোটি টাকা যাত্রীর অভাব নেই তবু রেলে লোকসান!

코멘트 · 16 견해

তিটি ট্রেনে আসন সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী পরিবহণ করা হয়ে থাকে। মেঝেতে দাঁড়িয়ে এমনকি ট্রেনের ছাদেও যাত

তিটি ট্রেনে আসন সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী পরিবহণ করা হয়ে থাকে। মেঝেতে দাঁড়িয়ে এমনকি ট্রেনের ছাদেও যাত্রী দেখা যায়। অথচ রেলের পরিসংখ্যান বলছে-প্রতিটি ট্রেনের ১৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় না। দিনের পর দিন চেষ্টা করেও টিকিট বিক্রি বাড়ানো যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার তুলনায় টিকিট বিক্রি খুবই কম। এ কারণেই রেলে লোকসান হচ্ছে। গত অর্থবছরে রেল ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। আর ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা আয় করেছে। অর্থাৎ গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে রেল।

 

Advertisement

 

রেলওয়ে অপারেশন-পরিবহণ ও মার্কেটিং দপ্তর সূত্র জানায়, ১০ দিন আগে ১২২টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনে যাত্রীদের তিল ধারণেরও জায়গা থাকে না। এসব ট্রেনের ছাদ, দুই বগির সংযোগস্থল, ইঞ্জিন যাত্রীদের দখলে থাকে। তবু রেলের বক্তব্য-গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ টিকিট অবিক্রীত থাকে। এক শ্রেণির যাত্রী টিকিট না কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা একেবারেই অসম্ভব। নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টরা লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। স্টেশন ও ট্রেনও ভাঙচুর করা হয়। রেলওয়ে বাণিজ্যিক দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রেলে বর্তমানে ২৮১টি ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে ১২২টি অন্তঃনগর ও ৩৩টি মালবাহী ট্রেন রয়েছে। বাকি ট্রেনগুলো লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। গত ১৫ বছরে ১৪২টি নতুন ট্রেন চালু এবং ৪৪টি রুট বাড়ানো হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক কারণে এসব ট্রেন চালু ও রুট পরিবর্তন করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশে ২৪ থেকে ৩৪টি কোচ নিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু বাংলাদেশে ৯ থেকে ১৬টি বগি নিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। শুধু রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে স্বল্প বগি দিয়ে ট্রেন চালানো হয়েছে। লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন ৪ থেকে ৮টি বগি নিয়ে চলছে। চলমান ট্রেনে যথাযথ কোচ সংযুক্ত করে ট্রেন পরিচালনা করলে প্রায় দ্বিগুণের (১৮০০ কোটি টাকা) বেশি আয় করা সম্ভব হতো। বর্তমানে ২৪৮টি যাত্রীবাহী ও ৩৩টি মালবাহী ট্রেন থেকে বছরে ৯০০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

 

জানা গেছে, মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ মালামাল পরিবহণ করে রেল। অথচ রেলপথে মালামাল পরিবহণের চাহিদা রয়েছে। এক সময় সিমেন্ট, সার, পাট, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য পরিবহণে রেলের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। অথচ এখন তলানিতে। পণ্য পরিবহণ বাড়ানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।

 

এপ্রিলে রেলভবনে মতবিনিময় সভায় রেলওয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, রেলের লোকসান যে কোনো মূল্যে কমাতে হবে। আয় বাড়াতে যা যা প্রয়োজন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি ব্যয় পরিহার করতে হবে। বুধবার রেলপথ সচিব ফাহিমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রেলে আয় বাড়ানো খুবই জরুরি। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন-কোচ পেলে আয় বাড়ানো সম্ভব। আয় বাড়ানোর সার্বিক চেষ্টা করছি আমরা। খরচ কমানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। রেলের সাবেক এক মহাপরিচালক (ডিজি) জানান, রেলে প্রতিদিন টিকিটহীন যত যাত্রী চলাচল করে-তাদের টিকিট নিশ্চিত করা গেলে প্রতিদিন কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। ২০০০ সালের দিকে রেলের ৪১ কর্মকর্তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছিল। ওই সময় প্রতিদিন তারা ট্রেন ও স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করতেন। কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা হারানোয় বিনা টিকিটি ধরা-জরিমানা আদায় তলানিতে ঠেকেছে।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. এম সামছুল হক যুগান্তরকে বলেন, রেলে আয় বাড়ানোর উত্তম পথ হলো কনটেইনার ও মালামাল পরিবহণ বাড়ানো। রেলের জমি ইজারা দিয়ে আয় বাড়ানো যায়। এখনো হাজার হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) নাজমুল ইসলাম বলেন, রেলে আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে রোলিংস্টক সামগ্রী পেলে আয় অনেক বেড়ে যাবে।

코멘트