উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে

Mga komento · 13 Mga view

একীভূতকরণের তালিকায় থাকা দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে। শেয়ারের বিপরীতে উদ্

একীভূতকরণের তালিকায় থাকা দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে। শেয়ারের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। বর্তমান সরকারের সময়ে পুনর্গঠন করা পাঁচ ব্যাংকেরই পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হবে।

 

Advertisement

 

নবগঠিত ব্যাংকের নামে শতভাগ সরকারি মালিকানায় নতুন শেয়ার ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গঠন করে দেওয়া হবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। নিয়োগ দেওয়া হবে নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও। পাঁচ ব্যাংকের সমুদয় সম্পদ ও দায়দেনা হস্তান্তর করা হবে নতুন ব্যাংকের নামে।

 

বৈদেশিক দেনা দ্রুত পরিশোধ করা হবে। আমানতকারীদের পুরো অর্থই ফেরত দেওয়া হবে পর্যায়ক্রমে। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের নতুন ব্যাংকের শেয়ার দেওয়া হবে।

 

একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় পাঁচ ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে নবগঠিত ওয়ার্কিং কমিটির আসন্ন বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হবে।

 

যেসব ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে-ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

আলোচ্য এই পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আগে থেকেই এস আলম গ্রুপের মালিকানায় ছিল। বাকি চারটি ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দখল করে এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংগুলোতে চলে নজিরবিহীন লুটপাট। লুটের টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

 

যে কারণে পাঁচটি ব্যাংকই অতি মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতি সহায়তা নিয়ে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিতে আর্থিক সহায়তা নিয়েও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচ্য পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

 

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে জোগান দেওয়া হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আমানত বিমা তহবিল থেকে আসবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার কোটি টাকা আসবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে কোনো মূলধন জোগান দেওয়া হবে না। তবে নতুন নামে ব্যাংক চালু হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের জোগান দেওয়া হবে। এছাড়া নীতি সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

একীভূতকরণের আদেশ জারি হওয়ার পর পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ হবে নতুন ব্যাংকের। তখন নতুন ব্যাংক পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ বিশেষ করে শাখাগুলোতে ঢেলে সাজাবে। বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা ও ৬৯৮টি উপশাখা রয়েছে। এর মধ্যে অনেক উপজেলায় এসব ব্যাংকের শাখা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন ব্যাংকের শাখা একই উপজেলায় একাধিক হতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধাজনক শাখাটি সংশ্লিষ্ট উপজেলায় রেখে অন্য শাখাগুলো আশপাশের উপজেলায় সরিয়ে নেওয়া হবে।

 

একইভাবে যেসব শহরে কাছাকাছি স্থানে পাঁচ ব্যাংকের মাখা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক শাখাটি রেখে অন্য শাখাগুলো আশেপাশের কোথাও সরিয়ে নেওয়া হবে। এভাবে পাঁচ ব্যাংকের শাখা ও উপশাখাগুলোকে সমন্বয় করে লাভজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন থেকেই পাঁচ ব্যাংকের শাখার অবস্থান জেলা, উপজেলা, এলাকা, হোল্ডিং নাম্বারসহ সংগ্রহ করছে।

 

পাশাপাশি ভালো ব্যবসা কেন্দ্র সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করছে। যাতে সহজেই নতুন ব্যাংকের নামে শাখাগুলোকে লাভজনক স্থানে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকবে। আপাতত এজেন্ট ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট এজেন্টরা যেসব শাখার তত্ত্বাবধানে থাকছেন সেখানেই থাকবেন। পরে সেগুলোকে সুবিধাজনকভাবে পুনর্ব্যনিাস করা হবে।

 

পাঁচ ব্যাংকের বর্তমানে পাঁচজন সিইও রয়েছেন। নতুন ব্যাংকে থাকবেন একজন সিইও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে সরকার এই পদে নিয়োগ দেবে। তবে এখন যেসব ব্যাংকের এমডি রয়েছেন তারা কেউ ওই পদে যেতে পারবেন না। নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

 

সেক্ষেত্রে পাঁচ ব্যাংকের এমডি নতুন ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তবে নিচের স্তরের কোনো কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হবে না। তাদের পদ বা কর্মস্থল পরিবর্তন হতে পারে।

 

একীভূতকরণের আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে। শেয়ারের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। কারণ ব্যাংকের নিট সম্পদ এখন নেগেটিভ। যে কারণে শেয়ারের বিপরীতে কোনো সম্পদ নেই। উলটো আরও লোকসানে রয়েছে। যে কারণে উদ্যোক্তারা শেয়ারের বিপরীতে কোনো কিছুই পাবেন না। তবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে।

 

বর্তমান সরকারের সময়ে গত বছরের আগস্টে পাঁচ ব্যাংকেরই আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সেই পর্ষদও একীভূতকণের প্রক্রিয়ায় বাতিল করে দেওয়া হবে। নবগঠিত ব্যাংকের নামে শতভাগ সরকারি মালিকানায় নতুন শেয়ার ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

এর মধ্যে থেকে নামমাত্র মূল্যে একটি করে শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হবে নতুন পরিচালকদের। এদের সমন্বয়ে নতুন পর্ষদ গঠিত হবে। এতে অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ ও সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকারকে নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। পাঁচ ব্যাংকের সমুদয় সম্পদ ও দায় দেনা হস্তান্তর করা হবে নতুন ব্যাংকের নামে। এর মধ্যে বৈদেশিক দেনা দ্রুত পরিশোধ করা হবে। আমানতকারীদের পুরো অর্থই ফেরত দেওয়া হবে। তা দেওয়া হবে পর্যায়ক্রমে। প্রয়োজনে ব্যাংকের আমানত তোলার ওপর মোরাটোরিয়াম বা সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।

 

এতে আমানতকারীরা প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ তুলতে পারবেন। এর বেশি পারবেন না। তবে এটি করা হতে পারে সাময়িক সময়ের জন্য। কারণ পাঁচটি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় চলে গেলে এর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে। তখন আমানত প্রবাহও বাড়বে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত করা হবে। এভাবে ব্যাংকটিতে দ্রুত তারল্য সংকট দূর হবে এবং সহজ হবে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া।

 

পাঁচটি ব্যাংকই আমানত বিমা আইনের আওতায় নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম জমা দিচ্ছে। এ বাবদ তাদের প্রিমিয়াম জমা ও এর ওপর আরোপিত মুনাফাসহ সব মিলে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে ওই তহবিল থেকে। এ অর্থ পেলেও আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া সহজ হবে।

 

পাঁচ ব্যাংকেই প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীদেরও মোটা অঙ্কের অর্থ জমা রয়েছে। যেগুলো তারা ফেরত পাচ্ছে না। এসব প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের নতুন ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। যেহেতু ব্যাংকটি সরকারি এ কারণে অনেকেই এ শেয়ার নিতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Mga komento